রূপমের রবীন্দ্রসঙ্গীত, কাঞ্চনার অভিনয়ে পারমিতার একদিন ‘হেমা মালিনী’–ময়
মধুরিমা রায়

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৬.০০: সারল্যের গল্প বলার দিন বোধহয় ফুরিয়ে এসেছে। সহজ মানুষের সহজ কথা সেলুলয়েড হোক কিংবা উপন্যাস— তুলে ধরার লোকও কমে এসেছে, পাঠক কিংবা দর্শকেরও বোধহয় অভাব। ঠিক এমন সময়েই যা হতে পারে, কিন্তু হয় না অথবা হলেও চোখের সামনে তা চট করে দেখা যায় না, পারমিতা মুন্সীর ‘আমি যখন হেমা মালিনী’ সেই সহজ সারল্যের কথাই বলে।
পারমিতা মুন্সী একজন কবি, তিনি সিনেমা বানালেও তাতে কাব্যিক প্রভাব থাকবে, তা প্রত্যাশিত। কিন্তু একটি ফিল্মও যে উপন্যাসের উপকরণ হয়ে উঠতে পারে, তা ‘আমি যখন হেমা মালিনী’ দেখলে বোঝা যায়। সাধারণত, উপন্যাস থেকে সিনেমা হয়, তবে সিনেমা থেকেও উপন্যাস হয়ে উঠতে পারে পারমিতা মুন্সীর এই ছবি।
এক প্রবীণ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের প্রেমে পড়েন এক বিগতযৌবনা মহিলা, যিনি নিজেকে হেমা মালিনী বলে মনে করেন। তাঁর চলনে–বলনে মেগাস্টার নায়িকাকে অনুকরণের ভঙ্গি স্পষ্ট। কী পরিণতি হলো সেই প্রেমের? সমান্তরাল ভাবে এক জ্যোতিষীর শরণাপন্ন হন এক সিনেমা পরিচালক, যিনি ব্যক্তিগত জীবনে সমস্যার পাশাপাশি পেশাগত লড়াইয়েও ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। মহিলা জ্যোতিষের সঙ্গে পরিচালকের সম্পর্কের বুনটটি কি প্রেম? ঠিক তা নয়। হয়তো বা প্রেমই, হতে গিয়েও না হতে পারা প্রেম।

চিকিৎসকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন চিরঞ্জিৎ। পরিচালক পারমিতা জানালেন, ‘চিরঞ্জিৎ বারবারই বলেছেন, এই চরিত্রটায় অভিনয় না করতে পারলে, তাঁর আক্ষেপ থেকে যেত।’ হেমা মালিনীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন নবাগতা পাপিয়া রাও। তবে চিকিৎসকের সহকারী ইন্দ্রাণীর ভূমিকায় কাঞ্চনা মৈত্র নিজের জাত চিনিয়েছেন। তাঁর এবং ভাস্কর চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর দৃশ্যে গায়ে কাঁটা দিতে বাধ্য।
ফিল্ম পরিচালক মানিকের ভূমিকায় রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবরের মতোই সাবলীল। তাঁর ম্যানারিজম বহির্ভূত সহজ অভিনয় এই ফিল্মের সম্পদ। জ্যোতিষীর ভূমিকায় যথাযথ এবং পরিমিত অভিনয় করেছেন রোশনী মিত্রও। তবে এই ফিল্মের সবচেয়ে বড় চমক ফিল্মের মিউজিক। রূপম ইসলামকে শেষবার ‘কেন চোখের জলে ভিজিয়ে দিলেম না’ রবীন্দ্রসঙ্গীতটি গাইতে শোনা গিয়েছিল অধুনালুপ্ত একটি বাংলা মিউজিক চ্যানেলের অনুষ্ঠানে। তাও সম্ভবত ২০০৭ অথবা ২০০৮ সালে। এতবছর পরে সিনেমার পর্দায় রকস্টার রূপমের দরদী কণ্ঠে সেই একই গানের প্রত্যাবর্তন যেন এই বার্তাই দেয়।
কিছু কিছু সৃষ্টির সামনে নিশ্চুপ হয়ে দু’দণ্ড বসতে হয়। ‘আমি যখন হেমা মালিনী’— সেরকমই এক সৃষ্টি।