যোগী রাজ্যে জাতপাতের মিছিল নিষিদ্ধ, সংহতি রক্ষার ডাক – কী বলছে রাজনীতির অঙ্ক?

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৮:৩০: যোগী রাজ্যে উলোটপূরণ! বিধানসভা ভোটের দু’বছর আগে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সরকার নির্দেশ দিয়েছে, রাস্তাঘাটে কিংবা জনসমাবেশে জাতের উল্লেখ করা যাবে না, জাতপাতকে কেন্দ্র করে মিছিল বা জনসভা করা যাবে না। গাড়িতে লেখা, পোস্টার বা সাইনবোর্ডে জাতের নাম থাকলেও প্রশাসন পদক্ষেপ করবে। এমনকি পুলিশের নথিতেও আর জাতের উল্লেখ করা যাবে না। তবে তফসিলি জাতি ও উপজাতি আইনের অধীনে দায়ের হওয়া অভিযোগই একমাত্র ব্যতিক্রম হবে। জাত-পাতের রাজনীতিতে দগ্ধ উত্তরপ্রদেশে হঠাৎ কেন এই নির্দেশিকা? তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে কাটাছেঁড়া।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর এলাহাবাদ হাই কোর্টের এক রায়ের ভিত্তিতে রবিবার এই নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্য সরকার। আদালত স্পষ্ট জানায়, জাতিভিত্তিক বৈষম্য ঠেকাতে প্রয়োজনে পুলিশের নিয়ম পর্যন্ত বদলাতে হবে।
২০২৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই পদক্ষেপকে অনেকেই রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন। কারণ, উত্তরপ্রদেশের ভোট সমীকরণ মূলত জাতপাতের ওপর দাঁড়িয়ে। মুসলিম ভোট ২০ শতাংশ, দলিত ২১ শতাংশ, আর ওবিসি মিলিয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ। ব্রাহ্মণ, ঠাকুর, বানিয়া সহ উচ্চবর্ণ হিন্দুদের সংখ্যা প্রায় ১৮ শতাংশ। দীর্ঘদিন ধরেই এই জাতপাতের অঙ্কে দল গড়া ও ভাঙার রাজনীতি চালু রয়েছে।
আশির দশক পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশে ব্রাহ্মণ ও ঠাকুর নেতারাই রাজনীতিতে প্রাধান্য পেয়েছেন। পরে ওবিসি ও দলিতদের উত্থান ঘটে-মুলায়ম সিংহ যাদব, কাঁসিরাম ও মায়াবতীর হাত ধরে। ২০১৭ সালে মোদীর আশীর্বাদে যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর দলিতদের উপর হামলা ও অত্যাচারের অভিযোগে বিজেপি সমালোচনার মুখে পড়েছে।
২০১৬ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে দেশে সাম্প্রদায়িক হিংসার মাত্রা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই সময়কালে হিংসার ঘটনার সংখ্যা ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, আর প্রাণহানির পরিমাণ বেড়েছে ২৯ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান লোকসভায় একটি প্রশ্নের উত্তরে প্রকাশ করা হয়।
যদিও বিজেপি নেতারা প্রায়ই দাবি করেন, তাঁদের শাসিত রাজ্যগুলিতে সাম্প্রদায়িক হিংসা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, কেন্দ্রীয় তথ্যচিত্র সেই দাবিকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। জাতপাতের নামে হিংসার ঘটনায় সবচেয়ে উপরে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, যেখানে ২০১৭ সালে প্রায় ১৯৫টি সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে।
জাতপাতের সমীকরণে আবদ্ধ উত্তরপ্রদেশে হঠাৎ এই ‘সংহতি রক্ষার নির্দেশ’ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা জল্পনা। বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় পদ্মপার্টি ‘জাতিহিংসা’-র কলঙ্ক মুছতে তৎপর হয়েছে। অনেকের মতে, যোগী সরকারের এই পদক্ষেপ ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা। বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, যোগীর নয়া নির্দেশ “নতুন বোতলে পুরনো ওয়াইন” নয়তো? তিনি কী সত্যিই রাজ্যকে জাতপাতের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করতে চান? এর উত্তর সময়ই দেবে।