নওদার মুখোপাধ্যায় বাড়ির পুজো: বন্ধ বলি, মায়ের ভোগে দেওয়া হয় শোল মাছের ঝোল

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৯:০০: নওদা ব্লকের কেদারচাঁদপুরের মুখোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গাপুজো আজও বহন করে এক অনন্য ইতিহাস। পশুবলি বন্ধ করতে এক সন্ন্যাসীর প্রতিবাদেই বদলে যায় এই পুজোর ধারা।
প্রায় ৩৭৫ বছর আগে বনমালী নামে এক সন্ন্যাসী প্রথমে চালাঘরে দুর্গাপুজোর সূচনা করেন। পরে জমিদার কেদারনাথ মুখোপাধ্যায় ওই পুজোকে পারিবারিক রূপ দেন। মন্দির তৈরি করে তিনি মোষ বলির প্রথাও চালু করেন। তবে বনমালী সন্ন্যাসী বলিদানের তীব্র বিরোধিতা করেন। একদিন বলির আয়োজনের সময় তিনি নিজেই হাঁড়িকাঠে মাথা রেখে বলেন, পশুবলি দেওয়ার আগে আমাকে বলি দাও। তাঁর সাহসী পদক্ষেপে স্তব্ধ হয়ে যায় বলিদান প্রথা। এরপর থেকেই মুখোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গাপুজোয় নবমীতে শোল মাছের ঝোল ভোগে নিবেদন করা শুরু হয়।
সেই সময় পরিবারের প্রতিমা ছিল সাতপুতুলের। তবে কেদারনাথবাবু স্বপ্নাদেশ পান তিনপুতুলের প্রতিমা গড়ার। সেই ধারা আজও বহমান। মুখোপাধ্যায় বাড়ির এক কাঠামোয় দুর্গা, সিংহ ও অসুর বিরাজমান।
পরিবারের সদস্যরা জানান, তিন শরিক পালা করে দুর্গা, জগদ্ধাত্রী ও কালীপুজো করেন। পুজোর সময়ে সবার জন্য থাকে একটাই হেঁশেল। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠা সুলেখা মুখোপাধ্যায় বিসর্জনের আগে মাটির হাঁড়িতে কড়ি নিয়ে মন্দিরের চাতালে দাঁড়ান। তারপর শুরু হয় কড়ি ছেটানোর রীতি। সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে গ্রামবাসীরা সেই কড়ি সংগ্রহ করেন।
পরিবারের সদস্য প্রদীপ মুখোপাধ্যায় জানান, আগে আত্মীয়-পরিজনদের ভিড়ে চারদিন জমজমাট থাকত বাড়ি। এখন তেমন ভিড় না হলেও রীতি-নীতি বা ঐতিহ্যে কোনও পরিবর্তন হয়নি।
এভাবেই বনমালী সন্ন্যাসীর প্রতিবাদকে স্মরণে রেখে কেদারচাঁদপুরের মুখোপাধ্যায় পরিবার টিকিয়ে রেখেছে শতাব্দীপ্রাচীন দুর্গাপুজোর ঐতিহ্য।