DURGAPUJA 2025: ষষ্ঠী থেকেই কলকাতা যেন ‘ওয়াকিং টাউন! রাত যত গভীর হয়েছে, জনস্রোত ততোই রূপ নিয়েছে জনসুনামির

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১১.৪০: কলকাতা যেন ‘ওয়াকিং টাউন! ষষ্ঠীর দিন সূর্য মধ্যগগনে উঠতেই শহরের রাস্তায় নামে মানুষের ঢল। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, তারপর রাত যত গভীর হয়েছে, জনস্রোত ততোই রূপ নিয়েছে জনসুনামির। একডালিয়া এভারগ্রিন থেকে ত্রিধারা, বাগবাজার থেকে তেলেঙ্গাবাগান, কুমোরটুলি পার্ক থেকে হাতিবাগান, উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার প্রতিটি মণ্ডপ আর রাস্তা যেন একটিই শব্দে সংজ্ঞায়িত করা যায়, ‘ভিড়’। বিধান সরণি, অরবিন্দ সরণি, রাসবিহারী অ্যাভেনিউ, সিআর অ্যাভেনিউ, নিউ আলিপুর বা বাগবাজার স্ট্রিট, সবই কার্যত মানুষের দখলে। সাময়িকভাবে গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে হয় বহু জায়গায়।
ঝলমলে আলোর মাঝে হাসছেন ফুচকাওয়ালা। বিক্রি ভালো বলে খেলনাওয়ালাও খুশি। ঠাকুর দেখার সঙ্গে মণ্ডপের বাইরের রাস্তায় দিনভর টুকটাক কেনাকাটা। একটা কানের দুল। কিংবা গলার হার। একটা ব্যাগ। হয়তো খুব একটা প্রয়োজনীয় কিছু নয়। তবু ‘খুব পছন্দ হয়েছে তো’ বয়ফ্রেন্ডকে বললেন লেকটাউনের তরুণী। এক মণ্ডপ থেকে আর এক মণ্ডপে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ হাতে তুলে নেওয়া ভেঁপু। রাতভর প্যাঁ পোঁ। ঠাকুর দেখা, খাওয়াদাওয়া, সিনেমা দেখা-সবমিলিয়ে ষষ্ঠীতে উত্তরের পুজো প্যান্ডেল জমজমাট। জনতার ঢল দেখে মনে হয়,’ কলকাতা যেন ‘ওয়াকিং টাউন।
বাগবাজার, কুমোরটুলি পার্ক, হাতিবাগান সর্বজনীন, কাশী বোস লেন, সিকদার বাগান, উল্টোডাঙা সংগ্রামী কিংবা তেলেঙ্গাবাগানের রাস্তায় কার্যত বসে গিয়েছে মেলা। বিধান সরণি, অরবিন্দ সরণি কিংবা বাগবাজার স্ট্রিটের মতো রাস্তা সম্পূর্ণ ভিড়ের দখলে। বহু রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ। সবমিলিয়ে পুজোর ক’দিন ক্রমশ ‘ওয়াকিং টাউন’ হয়ে উঠছে কলকাতা। অন্যদিকে, নিউ মার্কেট কিংবা হাতিবাগানে ষষ্ঠীতেও দেদার কেনাকাটা চলল। সেই সঙ্গে সিনেমা দেখারও ধুম। হাতিবাগানে বিনোদিনী থিয়েটারের বাইরে হাউসফুলের বোর্ড ঝুলল। বাগবাজার বা টালা প্রত্যয়, টালা বারোয়ারি বা হাতিবাগান সর্বজনীন, নবীন পল্লি থেকে কাশী বোস লেন, তিল ধারণের জায়গা নেই। ফুচকা, চিকেন পকোড়া বা কাবাব খেয়ে ‘লেবুতলা পার্ক নাকি পাথুরিয়াঘাটা,’ কোথায় যাওয়া হবে তা নিয়ে চলছে জোর তর্ক।
যষ্ঠীতে রাত যত বেড়েছে, পুজোর আমেজে ততই বেশি রং ধরেছে। তেলেঙ্গাবাগান, গৌরীবাড়ি, করবাগান, উল্টোডাঙা সংগ্রামী, কাঁকুড়গাছি যুবকবৃন্দের পুজোতে ঠাসা ভিড়। অনেকেরই বক্তব্য, ‘হাতিবাগানে কলকাতার ঘাটের ইতিহাসের প্যান্ডেল জাস্ট অনবদ্য। আর কাশী বোস লেনের লীলা মজুমদার থিমও ফাটাফাটি। বাচ্চারা আনন্দ পাচ্ছে খুব।’
জনস্রোতে ব্যারিকেড টিকছে না। রাস্তার সিগন্যালে আটকে পড়ছে গাড়ি, ঘুরিয়ে দিতে হয়েছে অনেক রুট কিন্তু তাতে কী, পায়ে হেঁটে এগিয়ে চলেছে সকলে। দুপুরে যারা বহু মণ্ডপ ঘুরে ক্লান্ত, তারা খুঁজে নিচ্ছেন খাবারের দোকান। আর নামকরা রেস্তরাঁ থেকে স্ট্রিট ফুডের দোকান, সবেতেই ভিড়। ক্যাফেও বাদ গেল না। তীব্র গরমে একটু জিরিয়ে নিতে ক্যাফে ভরসা অনেকেরই। সেখানেই টাচ-আপ সেরে নেওয়া, এসি-তে ঘামে ভেজা জামা শুকিয়ে নেওয়ার উদাহরণও কম নেই। ভিড় সামলাতে রাস্তায় কড়া নিরাপত্তা লক্ষ্য করা গেছে রবিবার রাতে। প্রচুর পুলিশ কর্মীর পাশাপাশি হোম গার্ড, সিভিক ও এনসিসি বা পুজোর ভলান্টিয়ররাও মাঠে নেমেছেন।