বুলডোজার দিয়ে অভিযুক্তের বাড়ি ভেঙে দেওয়ার মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া আইনসম্মত নয়: প্রধান বিচারপতি বি আর গভাই

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২৩:০০: শুক্রবার মরিশাসে ‘রুল অব ল’ বিষয়ক এই বক্তৃতায় ভারতের প্রধান বিচারপতি (CJI) স্পষ্ট করেন, আদালতের রায়ই দেখিয়ে দিয়েছে — আইন মানা বাধ্যতামূলক, সরকার বা প্রশাসন বিচারকের ভূমিকা নিতে পারে না।
‘বুলডোজার জাস্টিস’-এর মামলার রায় উদ্ধৃত করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘অভিযুক্তের বাড়ি ভেঙে দেওয়ার মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া আইনসম্মত নয়। এতে আইনের শাসন লঙ্ঘিত হয় এবং সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদে থাকা নাগরিকের আশ্রয়ের অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়।’’ তাঁর আরও সংযোজন – প্রশাসন কখনও একসঙ্গে বিচারক, জুরি ও শাস্তিদাতা হতে পারে না।
এই বক্তৃতায় গাভাই স্মরণ করান ১৯৭৩ সালের ঐতিহাসিক কেশবানন্দ ভারতী মামলার রায়ের কথায়, যেখানে সর্বোচ্চ আদালত ‘বেসিক স্ট্রাকচার ডকট্রিন’-এর মাধ্যমে সংসদের সংশোধনী ক্ষমতায় সীমা টেনেছিল। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সংবিধান গ্রহণের পর ৭৫ বছরে ‘রুল অব ল’-এর ধারণা কেবল আইনি পরিভাষায় সীমাবদ্ধ নেই, এটি সমাজ, রাজনীতি ও শাসন ব্যবস্থার অংশ হয়ে উঠেছে।’’
প্রধান বিচারপতি এও বলেন, ‘‘সামাজিক ক্ষেত্রে আইনের মাধ্যমে ঐতিহাসিক অন্যায় সংশোধনের চেষ্টা হয়েছে। প্রান্তিক মানুষ আইনের ভাষাতেই তাদের ন্যায় দাবি করেছে। রাজনীতিতেও ‘রুল অব ল’ হল সুশাসনের মানদণ্ড — যেখানে প্রতিষ্ঠান ও সরকারি কর্মীরা দায়বদ্ধ থাকেন নাগরিকদের কাছে।’’
তিনি উল্লেখ করেন, তিন তালাক প্রথা বাতিল, ব্যভিচার আইন বাতিল, ইলেকটোরাল বন্ড সংক্রান্ত রায় এবং গোপনীয়তার অধিকারের স্বীকৃতি — এই চারটি গুরুত্বপূর্ণ রায়ের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট ‘রুল অব ল’-কে কেবল প্রক্রিয়াগত নয়, ন্যায্যতার মাপকাঠি হিসেবেও প্রতিষ্ঠা করেছে। তাঁর কথায়, ‘‘রুল অব ল মানে কেবল নিয়ম নয়, এটি নৈতিক কাঠামো — যা সমতা, মানবিক মর্যাদা ও গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা রক্ষা করে।’’