এবার মিসাইল, শেল তৈরির দায়িত্বও বেসরকারি হাতে তুলে দিচ্ছে মোদী সরকার

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ০৯:৩২: ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের (Ministry of Defence) নতুন সিদ্ধান্তে এবার থেকে বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও দেশের মিসাইল, শেল (missile, shell), বোমা ও গোলাবারুদ তৈরির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যাতে ভারত অস্ত্রের ঘাটতিতে না পড়ে, সেই যুক্তিতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছে মোদী সরকার, তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এটি দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পূর্ণ বেসরকারিকরণের পথে বিপজ্জনক এক ধাপ। সরকার এই সিদ্ধান্তকে “আত্মনির্ভর ভারত”-এর অজুহাতে ঢাকতে চাইছে।
রাজস্ব ক্রয় ম্যানুয়াল (Revenue Procurement Manual) বা আরপিএম-এ সংশোধন এনে এবার কেন্দ্র জানিয়েছে, বোমা বা গোলাবারুদ তৈরিতে আগ্রহী কোনও বেসরকারি সংস্থাকে আর রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিরক্ষা সংস্থা মিউনিশনস ইন্ডিয়া লিমিটেডের (Munitions India Limited) কাছ থেকে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ (NOC) নিতে হবে না। অর্থাৎ, বেসরকারি শিল্পপতিরা এখন থেকে ১০৫ মিমি, ১৩০ মিমি, ১৫০ মিমি কামানের গোলা, পিনাকা মিসাইল, এক হাজার পাউন্ডের বোমা, মর্টার শেল, হ্যান্ড গ্রেনেড ও ছোট-বড় ক্যালিবারের গুলি, সবই তৈরি করতে পারবেন।
মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্ত কার্যত প্রতিরক্ষা খাতে দেশের নিয়ন্ত্রণকে দুর্বল করে দেবে, এমনটাই মত প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের অভিযোগ, দেশের নিরাপত্তাকে খোলা বাজারে তুলে দেওয়া হচ্ছে। যাঁদের হাতে দেশের খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এমনকি রেলও চলে গেছে, তাঁদের হাতেই এবার বন্দুক ও কামানের কারখানাও তুলে দিচ্ছে বিজেপি সরকার।
যে সংবেদনশীল খাত একসময় ছিল রাষ্ট্রের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে, সেখানে এখন মুনাফার লোভে তৈরি হবে অস্ত্র, যা দেশের নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। আত্মনির্ভরতার নামে আসলে প্রতিরক্ষার বেসরকারিকরণকেই বৈধতা দিচ্ছে কেন্দ্র, আর সেই সঙ্গে আরও একবার প্রমাণ করছে, বিজেপির কাছে দেশের সুরক্ষা নয়, পুঁজির স্বার্থই মুখ্য।
এর ফলাফল ভয়ঙ্কর হতে পারে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আমেরিকার (United States of America) মত দেশের বিরুদ্ধে বারংবার অভিযোগ উঠেছে যে তাঁরা বেসরকারি অস্ত্র প্রস্তুতকারী সংস্থার স্বার্থে একাধিক যুদ্ধ ‘তৈরি’ করে এসেছে দশকের পর দশক ধরে। সেই পথে যাতে ভারতকে ঠেলে না দেওয়া হয়, তার দিকেই নজর রাখতে হবে, এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের।