পেনরোজের নোবেল প্রাপ্তিতে চর্চায় বিজ্ঞানী অমল রায়চৌধুরী
সমমানের বা উচ্চমানের গবেষণা করেও পরিচিতিতে… অনেক ক্ষেত্রে স্বীকৃতিতেও পিছিয়ে পড়েন প্রাচ্যের বিজ্ঞানীরা। প্রচারের আলো গিয়ে পড়ে পাশ্চাত্যের বিজ্ঞানীদের উপর। অনেকেই মনে করেন, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু থেকে সত্যেন্দ্রনাথ বসু যে মানের বিজ্ঞানী ছিলেন, প্রাচ্যের মানুষ হওয়ার কারণেই তাঁরা কাঙ্ক্ষিত প্রচার এবং স্বীকৃতি পাননি বা অনেক পরে পেয়েছেন। পুরোটা না হলেও তা অনেকটাই খাটে অধ্যাপক অমল রায়চৌধুরীর ক্ষেত্রেও। যাঁর ‘রায়চৌধুরী সমীকরণ’-এর উপর গবেষণা করেই এবার বিজ্ঞানী রজার পেনরোজ নোবেল পুরস্কার পেলেন, সেই অমলবাবুকেই ভুলতে বসেছিল এ প্রজন্ম।
প্রেসিডেন্সি কলেজের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক অমল রায়চৌধুরী ছিলেন অনন্য প্রতিভাবান। বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিন্সরা যে-কাজ ছয়ের দশকে করেছেন, তাই তিনি করেছেন পাঁচের দশকে। সিঙ্গুলারিটি, থিওরি অব রিলেটিভিটি, নক্ষত্র থেকে ব্ল্যাক হোলের জন্ম ছিল তাঁর মৌলিক গবেষণার বিষয়। রজার পেনরোজ অবশ্য অমলবাবুর কাজকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। ভাইপো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার এমিরিটাস প্রফেসর অমিতাভ রায়চৌধুরী স্মৃতি রোমন্থন করছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ছিল জয়েন্ট ফামিলি। বাইরে থেকে কাকাকে দেখে বোঝাই যেত না, যে তিনি এত বড় মাপের বিজ্ঞানী। প্রেসিডেন্সি কলেজে তিনি খুবই দরদি একজন শিক্ষক ছিলেন। উল্টোদিকে, বাড়িতে ছিল তার অন্য অপবাদ। বাড়ির কেউ ফিজিক্স নিয়ে কিছু জানতে চাইলে তিনি সহজেই ধৈর্য হারিয়ে ফেলতেন। আসলে আমাদের উপর তাঁর বেশি প্রত্যাশা ছিল। তবে আমাকে আলাদা চোখে দেখতেন উনি। আমার ক্ষেত্রে সহজে মেজাজ হারাতেন না। পরবর্তীকালে আমিও তাঁকে কলেজের শিক্ষক হিসেবে পেয়েছি। বাড়িতে হোক বা কলেজে দেখতাম টেক্সটবুক এর বাইরে গিয়ে তিনি একটা বিষয় কত রকম ভাবে বোঝাতে পারতেন। একেবারে স্বতন্ত্র হতো সেই পদ্ধতি। পড়ানোর পাশাপাশি তিনি উদ্বুদ্ধও করতে পারতেন। আমাদের বিশ্বাস করাতে পারতেন, যে আমরাও এ ভাবে পারব।’
অমলবাবু হিন্দু স্কুলের ছাত্র ছিলেন। পরে প্রেসিডেন্সি কলেজে স্নাতক হয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি পাস করেন। ডিএসসি করেন কিন্তু একেবারে নিজের কাজের উপর ভিত্তি করে। এরকম শিক্ষককেই প্রেসিডেন্সি কলেজে ৬০ বছরের পর সার্টিফিকেট দিতে বলা হয়েছিল এই মর্মে যে, তিনি মানসিকভাবে শিক্ষকতা চালিয়ে যাওয়ার উপযুক্ত।
এরকম অবমাননাকর হলফনামা দিয়ে তিনি এক্সটেনশন পেতে চাননি। পরে তাঁর বর্তমান এবং প্রাক্তন ছাত্ররাই সরকারের বিভিন্ন মহলে গিয়ে প্রিয় শিক্ষকের এক্সটেনশন করিয়ে আনেন। পরবর্তী কালে তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাকাশবিদ্যা চর্চা কেন্দ্রের দায়িত্বে যান। জীবনটা তাঁর শিক্ষকতা করেই কাটে। এখনও তাঁর কাজ বেশ কিছু বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় এমএসসি পাঠ্যক্রমে রয়েছে। এখনও বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর কাজের প্রাসঙ্গিকতা ব্যাপক। তবে এটা ঠিক, এখন তিনি যা পরিচিতি পাচ্ছেন, অনেক আগেই তা পেতে পারতেন। পদার্থবিদ্যার লোকজন তাঁকে রীতিমতো পুজো করেন। দেশের চেয়ে বিদেশে তাঁর সম্মান এখনও অনেক বেশি। এর মধ্যেও আশার কথা, সাধারণের মধ্যেও তাঁকে নিয়ে আগ্রহ কিছুটা বাড়ছে। অমলবাবুর মেয়ে পারঙ্গমা সেনও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা।