গ্লোবাল পেনশন সূচকে ভারতের ভরাডুবি,প্রবীণদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বড়সড় সতর্কবার্তা

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৩:২৫: ভারতের পেনশন ব্যবস্থার কাঠামো নিয়ে বড়সড় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অবসর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভরসা পেনশন দেশে কতটা সুরক্ষিত, তারই এক বাস্তব চিত্র উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক আন্তর্জাতিক সমীক্ষায়। অবসরকালীন সময় যেটা জীবনের শেষভাগে নিরাপত্তা, আত্মনির্ভরতা ও আত্মসম্মানের প্রতীক হওয়ার কথা, সেই সম্বলই এখন নড়বড়ে।
Mercer CFA Institute সম্প্রতি প্রকাশ করেছে ২০২৫ সালের গ্লোবাল পেনশন ইনডেক্স। ৫২টি দেশের অবসরকালীন সঞ্চয় ও পেনশন ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে এই সমীক্ষা তৈরি হয়েছে। বিশ্বের প্রায় ৬৫ শতাংশ মানুষ এই দেশগুলির পেনশন স্কিমের আওতায়। তিনটি মাপকাঠিতে বিচার করা হয়েছে প্রতিটি দেশের পেনশন ব্যবস্থা—পর্যাপ্ত অঙ্কের পেনশন (Adequacy), স্থিতিশীলতা (Sustainability) এবং গ্রহণযোগ্যতা (Integrity)। প্রতিটি ক্ষেত্রে ৪০-৩৫-২৫ শতাংশ ওজন দিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে সামগ্রিক স্কোর।
এই তালিকায় ভারতের প্রাপ্ত নম্বর ৪৩.৮— যা গ্লোবাল গড় ৬৪.৫-এর তুলনায় অনেকটাই কম। ফলে ভারতের জায়গা হয়েছে ‘ডি’ গ্রেডে। বিপরীতে, শক্তিশালী পেনশন কাঠামো ও দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষার জন্য শীর্ষে রয়েছে Netherlands (৮৫.৪), Iceland (৮৪), Denmark (৮২.৩), Singapore (৮০.৮) ও Israel (৮০.৩)। এরা প্রত্যেকেই পেয়েছে ‘এ’ গ্রেড।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল, ‘Adequacy’ বিভাগে ভারতের স্কোর মাত্র ৩৪.৭—যা ‘ই’ গ্রেড। অর্থাৎ, প্রবীণ নাগরিকদের অবসরকালে বিকল্প আয়ের সুযোগ অত্যন্ত সীমিত। সামাজিক সুরক্ষার জালও ছিদ্র-ভরা। ‘Sustainability’ বিভাগে ভারতের স্কোর ৪৩.৮—এটিও ‘ডি’ গ্রেড। দেশের প্রবীণ জনগোষ্ঠী ক্রমশ বাড়লেও পেনশন স্কিমের দীর্ঘমেয়াদি সুফল খুব কম মানুষের কাছেই পৌঁছচ্ছে। এর বড় কারণ হল পেনশন প্রকল্পের জটিলতা, বহুধা বিভাজন এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য কার্যকর সুরক্ষার অভাব।
তবে ‘Integrity’ বিভাগে কিছুটা সান্ত্বনার খবর আছে—ভারতের স্কোর ৫৮.৪, ‘সি’ গ্রেড। তবুও সামগ্রিক র্যাঙ্কিং বলে দিচ্ছে, এই ব্যবস্থায় দ্রুত ও বাস্তবসম্মত সংস্কার না আনা গেলে প্রবীণদের ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পেনশন কাঠামোকে সুসংহত করা, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের আওতায় আনা এবং সামাজিক সুরক্ষার জালকে শক্ত করা এখন সময়ের দাবি। না হলে অবসর জীবনে আর্থিক ভরসা হয়ে ওঠা সেই ‘লাঠি’ আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। এটি শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক নিরাপত্তারও এক গভীর সংকেত।