জৈন সম্প্রদায়ের জমি বেআইনিভাবে বিক্রির অভিযোগ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে, উত্তাল মহারাষ্ট্র

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৭:০০: পুণের মডেল কলোনিতে জৈন সমাজের মালিকানাধীন জমি বিক্রির ঘটনায় তীব্র বিতর্কের ঝড় উঠেছে মহারাষ্ট্রে। প্রায় ২৩০ কোটি টাকার এই জমি-চুক্তি ঘিরে অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপি নেতা মুরলিধর মোহলের (Murlidhar Mohol) বিরুদ্ধে। অভিযোগ, তাঁর প্রত্যক্ষ মদতে ৩.৫ একর জমি এবং ঐতিহ্যবাহী শেঠ হীরাচাঁদ নেমচাঁদ দিগম্বর জৈন বোর্ডিংয়ের সম্পত্তি বেসরকারি রিয়েল এস্টেট সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
জানা গিয়েছে, এই জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল গত বছরের ১৬ই ডিসেম্বর ট্রাস্টিদের বৈঠকে, আর মাত্র চার দিন পরেই অর্থাৎ ২০শে ডিসেম্বর প্রকাশিত হয় দরপত্রের বিজ্ঞাপন। এরপরেই শুরু হয় কোটি-কোটি টাকার চুক্তি সংক্রান্ত প্রক্রিয়া। অভিযোগকারীদের দাবি, ট্রাস্টের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগ থাকা বিজেপি নেতাদের প্রভাবে এই বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হয়, যেখানে জৈন সম্প্রদায়ের মতামত সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে।
গত ১৮ই অক্টোবর পুণে শহর উত্তাল হয়ে ওঠে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে। হাজার-হাজার জৈন সম্প্রদায়ের মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানান। “জৈন বোর্ডিং বাঁচাও কৃতি সমিতি”-র আহ্বানে আয়োজিত এই মিছিলে অংশ নেন সন্ন্যাসী, ছাত্র, প্রাক্তন ছাত্র, সমাজকর্মী ও নাগরিকেরা। আচার্য গুরুদেব শ্রী গুপ্তিনন্দজি মহারাজের নেতৃত্বে মিছিলটি জৈন বোর্ডিং থেকে জেলা শাসকের দপ্তর পর্যন্ত গিয়ে জমি বিক্রির চুক্তি বাতিলের দাবি জানায়।
প্রতিবাদীদের অভিযোগ, ট্রাস্ট সম্প্রদায়ের ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। যেখানে একটি প্রাচীন জৈন মন্দির ও ছাত্রাবাস অবস্থিত, সেই পবিত্র ভূমি বিলাসবহুল আবাসন ও বিপণি নির্মাণের জন্য বিক্রি করা হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, গোখলে ল্যান্ডমার্কস নামের পুণে-ভিত্তিক রিয়েল এস্টেট সংস্থা ওই জমিতে প্রায় ১৬ লক্ষ বর্গফুটের একটি আল্ট্রা লাক্সারি প্রকল্প গড়ে তুলতে চলেছে, যেখানে ফ্ল্যাটের দাম শুরু হবে ৭ কোটি টাকা থেকে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এই প্রকল্প কেবল এক ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার ধ্বংসই ঘটাবে না, বরং ধর্মীয় সম্পত্তিকে ব্যবসায়িক স্বার্থে বিকিয়ে দেওয়ার নিদর্শন হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। তাঁদের প্রশ্ন, বিজেপি সরকার ও তার নেতারা কি এখন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির জমিও বাণিজ্যের জন্য বিক্রি করতে চাইছেন?
জৈন সমাজের দাবি, জমি বিক্রির অনুমতি অবিলম্বে বাতিল করতে হবে এবং ট্রাস্ট ও সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। তাঁদের স্পষ্ট বার্তা, ধর্মীয় সম্পত্তি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিক্রির পণ্যে পরিণত করার চেষ্টা কোনভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।