প্রতিপদে ফোঁটার শিকড় রয়েছে বঙ্গের জলে

October 21, 2025 | 2 min read
Authored By: author সৌভিক রাজ
Published by: Saikat
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৪:১৫: বাঙালি গেরস্থ বাড়ির অন্যতম বড় পার্বন হল ভাইফোঁটা। বঙ্গদেশে ভাইফোঁটার সূত্রপাত ঠিক কতদিন আগে হয়েছিল, তার বিবরণ মেলে সর্বানন্দ সুন্দরী নামের এক তালপাতার পুঁথিতে। খ্রিস্টপূর্ব ৫২৭ অব্দে এই প্রথা চালু হয়।

পিতল-কাঁসার থালায় ঘি, চন্দন, দই ও কাজল (কোনও কোনও বাড়িতে কোজাগরী পূর্ণিমার দিন ভাইফোঁটার কাজল পেতে রাখা হয়।) বাঁ-হাতের কড়ে আঙুলে তুলে শিশির দিয়ে ভাইয়ের কপাল মুছিয়ে দিয়ে, ধান-দূর্বা দিয়ে শাঁখ বাজিয়ে, উলুধ্বনি দিয়ে ফোঁটা দেন বোন-দিদিরা। চিরাচরিত ছড়া বলা হয়,
‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা
যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা
আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা…।’

অঞ্চলভেদে ছড়ার কিছু অদলবদলও চোখে পড়ে। ভাইয়ের মঙ্গলকামনায় অজস্র ব্রত রয়েছে বঙ্গে। তবে এই দ্বিতীয় তিথিটি অনন্য। কালীপুজোর ঠিক দু-দিন পর কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথির দিন এই উৎসব পালিত হয়। কেউ কেউ একে যম দ্বিতীয়াও বলেন। অনেক পরিবারে প্রতিপদেও ফোঁটা দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। পূর্ববঙ্গীয়দের মধ্যে এ রীতির দেখা মেলে। দিদির বা বোনের বিয়ে হয়ে গেলে; তাঁরা প্রতিপদে ফোঁটা দেন।

প্রতিপদে ফোঁটায় বদলে যায় ছড়াও,

প্রতিপদে দিয়ে ফোঁটা দ্বিতীয়াতে দিয়ে নিতা,
আজ হতে আমার ভাই যম দুয়ারে তিতা।

কেউ কেউ বলেন,
প্রতিপদে দিয়ে ফোঁটা দ্বিতীয়াতে খাইয়ো নিতা,
আজ হতে আমার ভাই যম দুয়ারে তিতা।

ওপার বাংলা নদীমাতৃক দেশ। যাতায়াতের ভরসা কেবল নৌকা। বর্ষায় নদী ফুঁসতে থাকে। বর্ষা বিদায়ের পরপর সময়তেই ভাইফোঁটা হয়। নদী তখনও যেন তরুণী, উত্তাল জলস্ফীতি চিন্তা বাড়ায় ভগিনীদের। দ্বিতীয়াতে ভাই ফোঁটা নিতে আসবেন, সেদিনই ফিরে যাবেন, এমনটা নাও হতে পারে। তাই প্রতিপদে ফোঁটা, আরেক দিনে অর্থাৎ দ্বিতীয়ায় নিতা বা নিমন্ত্রণ। বিয়ের পর শ্বশুরঘরে দু’দিন ভাইকে পাওয়াও তো উৎসবের শামিল। উত্তাল নদীপথে এসে ফোঁটা নিয়ে দিনের দিন ফিরে যাওয়া ছিল কার্যত অসম্ভব। তাই আগের দিন ভাইদের ফোঁটা দিয়ে লোকাচারের সেরে রাখতেন বোনেরা। পরদিন শুধু খাওয়া-দাওয়া চলত। তারপর ভাই রওনা হতেন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen