‘মুখ্যমন্ত্রী মোদী’র থেকে উপদেশ নিন প্রধানমন্ত্রী মোদী, GST Bachat Utsav প্রচারের ঢক্কানিনাদে মত তৃণমূল সাংসদের

October 22, 2025 | 3 min read
Published by: Ritam

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১২:১৫: মোদী সরকার দেশবাসীর কাঁধে GST-র বোঝা চাপিয়েছিল ২০১৭ সালে। ২০২৫-এ এসে সেই পণ্য ও পরিষেবা করের কয়েকটি ধাপ তুলে দিয়ে GST সংস্কারের নাম দিয়েছেন মোদী। দীপাবলি তথা উৎসবের মরশুমে দেদার প্রচার চলছে GST Bachat Utsav-র নাম দিয়ে। নরেন্দ্র মোদীর চাপানো GST লাঘব করেছেন নরেন্দ্র মোদী, তাই মোদীই মোদীর পিঠ চাপড়ে দিচ্ছেন! না, অনুপ্রাস নয়। বাস্তবে এটাই হচ্ছে। এই আবহে তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা, সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের মত, GST সংস্কারের কৃতিত্ব রাজ্য সরকারগুলির। কারণ, রাজ্য সরকারগুলি বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ক্ষতির ভার বহন করছে। তৃণমূল সাংসদের মতে, বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিকে আরও বেশি করে কৃতিত্ব দেওয়া উচিত। কারণ, তারা কেবল রাজস্ব ক্ষতির সম্মুখীন হয় নয়। পাশাপাশি কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্প এবং খাতে বঞ্চনার শিকারও। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে জিএসটি বিল পর্যালোচনা করার জন্য গঠিত যৌথ সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন ডেরেক। বিরোধী দলের সদস্যরা কমিটির চেয়ারপারসনকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছিলেন। প্রথমত, জিএসটি ১৮ শতাংশের নিচে রাখা। দ্বিতীয়ত, একাধিক কর হারের ধাপ এড়ানো। পরামর্শগুলি বাস্তবায়ন করতে কেন্দ্র সরকার এক দশক সময় নিয়ে ফেলল।

বেসরকারি কর্পোরেট বিনিয়োগের উদ্দেশ্য সংক্রান্ত রিজার্ভ ব্যাংকের সমীক্ষার তথ্য বলছে, ২০১৪ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বিজেপি শাসিত গুজরাত এবং মহারাষ্ট্রে গড়ে যথাক্রমে ৭৯ এবং ৪৫টিরও বেশি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এই সময়কালে প্রধানমন্ত্রীর রাজ্য গুজরাতে ৮৮টি অতিরিক্ত প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে। বেসরকারি কর্পোরেট বিনিয়োগের উদ্দেশ্য নিয়ে রিজার্ভ ব্যাংকের করা গবেষণায় উঠে আসা শীর্ষ ১০টি রাজ্যের মধ্যে চারটি বিরোধী নেতৃত্বাধীন রাজ্যও রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে গড়ে ৩৪৩টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। ১০টির মধ্যে নয়টি প্রকল্প বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে গিয়েছে। গুজরাত যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ পেয়েছে!

এহেন পরিসংখ্যানগুলি প্রমাণ করে, হয় বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে সুশাসন রয়েছে। সর্বোৎকৃষ্ট সরকার চলছে। নয়তো বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলিকে এই রাজ্যগুলিতে বিনিয়োগ করতে জোরালোভাবে উৎসাহিত করা হয়। কিন্তু বাস্তবে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে মহিলাদের উপর অপরাধ ঘটার হার সবচেয়ে বেশি। খাদ্য শূন্য শিশু সবচেয়ে বেশি। দেশে সর্বনিম্ন সাক্ষরতার হার এই রাজ্যগুলিতে। ফলে প্রথম কারণটি অর্থাৎ সুশাসন চলছে বলে নিনিয়োগ আসছে, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। দ্বিতীয় কারণটি সত্যের বেশি কাছাকাছি। অনেক বিরোধী শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা প্রায়ই অভিযোগ করছেন, কেন্দ্র সরকার বিনিয়োগকে ভিন্ন পথে চালিত করে। সুশাসন বিরোধী রাজ্যে বিনিয়োগ আসার পথকে অবরুদ্ধ করে।

তামিলনাড়ুর ৬,০০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ গুজরাতে চলে গিয়েছে। তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, তাঁর কাছে প্রমাণ রয়েছে যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় একাধিক কোম্পানিকে গুজরাত বেছে নিতে বলেছে বিনিয়োগের জন্য। কর্ণাটকের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রীও একই অভিযোগ করেছেন। এমনকী মহারাষ্ট্রে যে বিনিয়োগ আসার কথা ছিল, তা গুজরাতের GIFT সিটিতে (গুজরাট ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স টেক-সিটি) চলে গিয়েছে। মহারাষ্ট্র এনডিএ-শাসিত রাজ্য হলেও, তাকে রেয়াত করা হয়নি। সংবাদ মাধ্যমের নানা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ১৭টি বড় প্রকল্প মহারাষ্ট্র থেকে গুজরাতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন আর্থিক উদ্যোগের কথা ঘোষণা করে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বিনিয়োগ ও লগ্নি বাড়িয়েছে। যার একটি উদাহরণ হল GIFT সিটি। এর আগে, UPA সরকার বান্দ্রা-কুরলা কমপ্লেক্স-কে (BKC) আর্থিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছিল। ২০০৭ সালে, বিশ্বব্যাংকের প্রাক্তন কর্তা পার্সি মিস্ত্রির সভাপতিত্বে গড়ে ওঠা কমিটি মুম্বাইকে গ্লোবাল ফাইনান্সিয়াল সেন্টার-এ রূপান্তর করার সুপারিশ করেছিল। সে পরিকল্পনা অথৈ জলে। গুজরাতের GIFT সিটির জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ করছে কেন্দ্র। অনেক ছাড় দেওয়া হয়েছে। ২০৩০ সাল পর্যন্ত যার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে, অনেক রাজ্য, বিশেষত বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলি যে মাস খানেক আগে চালু হওয়া সংশোধিত জিএসটি নীতির প্রেক্ষিতে রাজস্ব ক্ষতির নিশ্চয়তা দাবি করেছিল, তা অবাক হওয়ার মতো কোনও দাবি নয়। GST Bachat Utsav-এ কেবল বড়সড় দাবি করা হয়েছে কাজের কাজ কিছু হয়নি। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে, নরেন্দ্র মোদী টুইট করেছিলেন, ‘‘জিএসটি নিয়ে কেন্দ্র যথাযথ প্রস্তুতি নেয়নি। তারা রাজ্যগুলির উদ্বেগের সমাধান করেনি।’’ এই দীপাবলিতে, কেউ কেবল প্রার্থনাই করতে পারে যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পরামর্শ গ্রহণ করবেন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen