ছট পুজো কেন পালন করা হয়? জানুন এই প্রাচীন ব্রতের ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ১৮:৪৫: আজ কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী – শ্রীশ্রী ছট পুজো, বা সূর্য ষষ্ঠী ব্রত। দীপাবলির ছ’দিন পর সূর্যদেবের এই আরাধনা একদিকে যেমন প্রাচীন ঐতিহ্য, তেমনই মানুষের অটল বিশ্বাস, আত্মশুদ্ধি ও কৃতজ্ঞতার প্রতীক।
সূর্য উপাসনার প্রাচীন ইতিহাস
ঋগ্বেদ, অথর্ববেদ, এমনকি রামায়ণ ও মহাভারতেও সূর্যপুজোর এই মহাব্রতের উল্লেখ মেলে। কথিত আছে, বনবাস শেষে রাবণবধের পাপ থেকে মুক্তি পেতে সীতা কার্তিক শুক্ল ষষ্ঠীতে সূর্যদেবের উপাসনা করেছিলেন। আবার মহাভারতে কুন্তী তাঁর প্রাপ্ত বীজমন্ত্র প্রয়োগ করে সূর্যদেবের আরাধনা করে পুত্র লাভ করেন – যিনি পরবর্তীতে দানবীর কর্ণ নামে পরিচিত হন।
অঙ্গদেশের রাজা কর্ণই নাকি প্রথম সূর্যপুজোর প্রচলন করেন সেই অঞ্চলে। তারপর থেকে বিহার, ঝাড়খণ্ড, পূর্ব উত্তরপ্রদেশ ও বাংলার কিছু অঞ্চলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই ব্রত পালন হয়ে আসছে।
সূর্য ষষ্ঠীর মাহাত্ম্য:
‘ছট’ অর্থাৎ ছটা বা রশ্মি। সূর্যের রশ্মিই পৃথিবীতে প্রাণের উৎস – তাই এই পুজোআসলে জীবন, শক্তি ও অন্নের পুজো। ছট দেবীকে সূর্যের বোন বলে মানা হয়। বিশ্বাস, তাঁকে সন্তুষ্ট করলেই সূর্যদেব প্রসন্ন হন।
এই ব্রতের মাধ্যমে মানুষ সূর্যদেবের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে – যিনি আলোর মাধ্যমে জীবন, শক্তি, স্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধি দান করেন।
পুরাণের কথায় ছট পূজা:
পুরাণ মতে, মা অন্নপূর্ণা এক সময় সূর্যের তীব্র তাপে কৃশ হয়ে পড়েছিলেন। সূর্যের আশীর্বাদ ও গঙ্গার আশ্রয়ে তিনি পুনরায় শ্রীপ্রাপ্ত হন। সেই থেকেই এই তিথিতে সূর্য ও মা অন্নপূর্ণার আরাধনার প্রচলন।
চার দিনের শুদ্ধ ব্রত:
ছট পুজোএক কঠোর ও নিষ্ঠাভরা চার দিনের উপবাস ব্রত
1. নহায়-খায় (প্রথম দিন): নদীতে স্নান, সূর্যপুজোও সাত্ত্বিক ভোজন।
2. খরনা (দ্বিতীয় দিন): সারাদিন উপবাস শেষে দুধ, গুড়, ক্ষীর ও কলা দিয়ে ব্রতভঙ্গ।
3. সন্ধ্যা অর্ঘ্য (তৃতীয় দিন): অস্তগামী সূর্যকে অর্ঘ্য প্রদান ও প্রণাম।
4. ঊষা অর্ঘ্য (চতুর্থ দিন): উদীয়মান সূর্যের উদ্দেশ্যে অর্ঘ্য প্রদান করে ব্রত সমাপন।
এই সময় ব্রতীরা সম্পূর্ণ নির্জলা উপবাসে থাকেন, ঘর রাখেন পরিস্কার, আর রান্না হয় শুধুই মাটির চুলায়, শুদ্ধ ঘিয়ে।
প্রসাদ ও আরাধনা:
ছট পুজোর প্রধান প্রসাদ- ঠেকুয়া, কলা, ক্ষীর, গুড়, লাড্ডু ও মৌসুমি ফল। সূর্যদেব ও ছটী মাইয়ারের প্রতি এই ভোগ নিবেদন শেষে তা পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশী ও ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
বিশ্বাস করা হয়, সূর্য ষষ্ঠী ব্রত পালন করলে সূর্যদেব জীবনের সকল বাধা দূর করেন, অন্ন-সম্পদে পূর্ণ করেন গৃহস্থ জীবন এবং রোগ-শোক থেকে রক্ষা করেন ভক্তকে। সংসারের মঙ্গলকামনায় আজও গৃহিণীরা এই ব্রত পালন করেন নিষ্ঠা ও ভক্তিভরে।