ফাঁদে পা দিচ্ছেন না তো! Google-এ এমন কিছু সার্চ করলেই চরম বিপদ

October 27, 2025 | 2 min read
Published by: Saikat

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ১৮:৪৫:  আজকের ডিজিটাল যুগে আমরা নতুন কিছু শেখা, খবর দেখার, ভাবনার খোঁজে প্রায় প্রতিদিন গুগলে সার্চ করি। কিন্তু সব সার্চই নিরাপদ নয়; কিছু সার্চ এমন যা আপনাকে আইনগতভাবে সমস্যায় ফেলতে পারে। আসুন ভারতীয় প্রেক্ষাপটে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করি।

কোন ধরনের সার্চ বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ?

1. শিশু-সংক্রান্ত যৌন উল্লিখিত কনটেন্ট (child pornography / child sexual exploitation material)

শিশুসংক্রান্ত যৌন কনটেন্ট খোঁজা, ডাউনলোড, সংরক্ষণ বা শেয়ার- সবই ভারতীয় আইনে কঠোর শাস্তিযোগ্য। POCSO ও IT Act-এর অধীনে এমন কন্টেন্ট থাকা বা প্রচার করা গুরুতর অপরাধ। ২০২৪–২৫ সময়ে উচ্চ আদালতের ও সুপ্রিম কোর্টের রায়েও বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।

2. বোমা/বিস্ফোরক তৈরির নির্দেশিকা খোঁজা

“How to make a bomb” ধাঁচের সার্চ বা টিউটোরিয়াল নিরাপত্তা-প্রটোকল ভঙ্গের সূত্র হতে পারে; আইন প্রয়োগকারী সংস্থারা জননিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে এটিকে গুরুত্ব দেয়। সার্চ-লগ-এর মাধ্যমে জিজ্ঞাসার উদ্দেশ্য এবং সম্ভাব্য পরিকল্পনা তল্লাশি-বিষয়ক সন্দেহ জন্মাতে পারে।

3. অবৈধ হ্যাকিং/অ্যাক্সেস-টিউটোরিয়াল ও ক্র্যাকড টুলস

“How to hack X”, “bank hack tools”, cracked software ইত্যাদি সার্চ করলে সাইবারক্রাইম-সম্পৃক্ত তৎপরতার নথি তৈরি হতে পারে; আইনি দায় বহন করতে হয়। Section 43/66 ইত্যাদি ধারায় সাইবার অপরাধের প্রক্রিয়া নির্ধারিত।

4. পাইরেসি/ক্র্যাকড কনটেন্ট ডাউনলোড লিংক খোঁজা

মুভি, গান, সফটওয়্যার পাইরেসি-লিংক খোঁজা ও ডাউনলোড বা শেয়ার করা কপিরাইট লঙ্ঘন; এটা তদন্ত ও শাস্তিতে নিয়ে আসতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে কেবল সার্চ নয়- ডাউনলোড/বন্টন হলেই আইনি জটিলতা বাড়ে।

সার্চ করলে কি সরাসরি গ্রেপ্তার?

শুধু টাইপ করা বা সার্চ করা – এটাই স্বয়ংক্রিয়ভাবে অপরাধ নয়। আইনি দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো – উদ্দেশ, অ্যাক্সেস/ডাউনলোড/স্টোর/শেয়ার এবং প্রমাণ। তবু, কিছু ধরনে (উদাহরণ: স্পষ্টভাবে অবৈধ কনটেন্ট ডাউনলোড বা শেয়ার করা) পুলিশ তদন্তে নেমে গ্রেপ্তার ও মামলা করতে পারে। বেশ কিছু সাম্প্রতিক মামলা এই বাস্তবতা দেখিয়েছে যেখানে ডিভাইস-লগ ও ইন্টারনেট-ট্র্যাফিক-ট্রেসিং ক্রীড়নির্ণায়ক ভূমিকা রেখেছে।

আসুন এবার জেনে নিই কী করলে আপনি নিরাপদ থাকতে পারবেন

1. সার্চের পূর্বে নিজেকে প্রশ্ন করুন কি উদ্দেশ্যে এটি করছেন: আপনার উদ্দেশ্য কি শিখন/গবেষণা নাকি অপরাধে সহায়তা? যদি সন্দেহ থাকে- পরিবর্তে সরকারি/শিক্ষামূলক উৎস অনুসন্ধান করুন।

2. বিশ্বস্ত উৎস বেছে নিন: আইন, স্বাস্থ্য বা নিরাপত্তা বিষয়ে সরকারি ও স্বীকৃত জুরিদিক্যাল সাইট/অ্যাকাডেমিক রিসোর্স ব্যবহার করুন।

3. কখনই সন্দেহজনক .exe/.zip/.rar ডাউনলোড করবেন না। এগুলোতে ম্যালওয়্যার বা অপরাধমূলক প্রমাণ থাকতে পারে।

4. অবৈধ কনটেন্ট পেলে তা ডাউনলোড/স্টোর/শেয়ার করবেন না- পরিবর্তে রিপোর্ট করুন। WhatsApp/অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের ‘Report’ বা সরকারি সাইবার-টিপলাইন ব্যবহার করা যেতে পারে।

5. ব্রাউজার-হিস্ট্রি/কুকিজ কেটে দিলেই সমস্যা সমাধান হবে- এমন ধারণা ভুল। প্রযুক্তিগত তদন্তে সার্ভার-লগ, ISP-রেকর্ড ইত্যাদি মিলিয়ে পাওয়া যায়; তাই দায়িত্বশীল আচরণই প্রধান।

যদি ‘ভুল করে’ এমন কিছু হয়ে থাকে কি করণীয়:

1. প্যানিক করবেন না; প্রথমেই নিশ্চিত করুন আপনি কেবল সার্চ করেছেন নাকি ডাউনলোড/স্টোর/শেয়ার করেছে কোনও অবৈধ কনটেন্ট।

2. যদি ডাউনলোড হয়ে থাকে – ডিভাইস-ট্রাইভে স্ক্যান চালান, প্রমাণ মুছে ফেলার চেষ্টা করবেন না (এটি সংযোজনীয় অপরাধ হতে পারে)। প্রয়োজনে প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।

3. যদি তদন্তকারীরা নোটিশ/জিজ্ঞাসা করে- আইনজীবী সঙ্গে নিন; স্বতন্ত্র অ্যাডভাইস না নিয়ে সামান্য কথাবার্তা দায় বাড়াতে পারে।

4. সন্দেহজনক কনটেন্ট দেখতে পেলে সরকারি হটলাইন বা প্ল্যাটফর্ম-রিপোর্ট ব্যবহার করুন (UDYAM/CBI/Cyber Crime portal/WhatsApp tipline ইত্যাদি)।

গুগল আমাদের কাজ দ্রুত করে, শেখায়, অনেক জিজ্ঞাসার উত্তর দেয়। কিন্তু স্বাধীনতার সঙ্গে কিছু দায়িত্ববোধও আসে। কৌতূহল নিয়ে অন্বেষণ করাটা স্বাভাবিক, কিন্তু অনলাইনে ‘কী খোঁজা হবে না’ সে সম্পর্কে সচেতন থাকা আমাদের দায়িত্ব। নিজের করা সার্চ কি কাউকে ক্ষতি করতে পারে বা সেটা কি অপরাধে পরিণত হতে পারে এই বিচারবোধ নিজের কাছে থাকা উচিত। কথায় আছে ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen