অবাঙালি নেতাদের উপর নির্ভর করে কি বঙ্গ জয় আদৌ সম্ভব হবে? প্রশ্ন জোরাল হচ্ছে বিজেপি’র অন্দরে

November 8, 2025 | 2 min read
Published by: Saikat

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১০:০০:  বিজেপির হয়ে লোকসভা ভোটে জিতে সংসদে পৌঁছেছিলেন তিনি, লক্ষ্য ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতা থেকে সরানো। কিন্তু সেই লক্ষ্যে পৌঁছনো দূর, আজ তাঁর মুখেই বিজেপি-র বিরুদ্ধে অভিযোগের ঝড়। তমলুকের সাংসদ তথা প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবার সরাসরি ক্ষোভ উগরে দিলেন কেন্দ্রীয় সরকার ও দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। যা নিয়ে বিজেপি’র অন্দরে ঝড় উঠেছে।

অভিজিতের মতে, বিজেপি বাংলার মানসিকতা, আবেগ ও সংস্কৃতিকে বোঝে না। তাঁর তির এবার দলের ‘অবাঙালি নেতৃত্ব’-এর দিকেও। বলেন, “হিন্দি বলয় থেকে নেতা এনে এখানে ভোট করানো যাবে না। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মন, মেজাজ, অভিমান— এসব দিল্লিওয়ালা নেতারা বোঝেন না।”

ছ’মাসের মধ্যে বাংলার মসনদ দখলের নির্বাচনে জিতে ক্ষমতা আসার স্বপ্নে বিভোর রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। যদিও পার্টির একাংশের মূল্যায়ণ, এবারও ২০২১ সালের পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে। সৌজন্যে বাংলা-বাঙালি ইস্যু। এই অবস্থায় অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

বঙ্গ রাজনীতির পরিবর্তনশীল তরঙ্গের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে অপারগ অবাঙালিরা। বিজেপি সহ গোটা গেরুয়া শিবিরের নিয়ন্ত্রক রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) এক ঝাঁক সংগঠনের মাথায় অবাঙালি। তার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, সরকার গঠন দুরস্ত, গতবারের ৭৭টি আসন ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ বিজেপির। তাঁদের ব্যাখ্যা, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি দেশের অন্যপ্রান্তের তুলনায় অনেক বেশি স্পর্শকাতর। এক্ষেত্রে ভূমিপুত্র অর্থাৎ বাঙালিরাই সেই রাজনীতি বুঝে পাল্টা ‘চাল’ দেওয়ার যোগ্য। বহিরাগতদের পক্ষে যা সম্ভব নয়।

অথচ বিজেপির শীর্ষ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে বাংলার নেতারা একপ্রকার অযোগ্য। রাজ্যজুড়ে বিজেপির পালে হাওয়া তুললে, তার নেপথ্যে সংঘ অনুপ্রাণিত একাধিক সংগঠনের ভূমিকা থাকে। রাস্তায় নেমে বিজেপির সহযোগী হিসেবে কাজ করে। সে সমস্ত সংগঠনের অধিকাংশই চালাচ্ছে ভিন রাজ্য থেকে ‘আমদানি’ হওয়া অবাঙালিরা। সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলি হল, বিশ্ব বিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি), অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি), ভারতীয় মজদুর সংঘ (বিএমএস), ভারতীয় কিষাণ সংঘ (বিকেএস) প্রমুখ। এই মুহূর্তে ভিএইচপি’র ক্ষেত্রীয় সংগঠন সম্পাদক পদে রয়েছেন শোহন সিং সোলাঙ্কি। আগে এই পদে ছিলেন বাঙালি নেতা শচীন্দ্রনাথ সিংহ।

গেরুয়া অক্ষে বিজেপির ছাত্র সংগঠন বলে কোনও শাখা নেই। সংঘের ছাত্র-যুব শাখা এবিভিপি মূলত পড়ুয়াদের ঐক্যবদ্ধ করার কাজ করে। বাংলায় এহেন গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনের শীর্ষ সংগঠনিক পদে রয়েছে ত্রিপুরার বাসিন্দা আপাংশুশেখর শীল। শ্রমিক সংগঠন বিএমএসের দায়িত্বে রয়েছে মধ্যপ্রদেশের গণেশ মিশ্রা। কৃষকদের ভালো-মন্দ দেখার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংঘের শাখা বিকেএস’র সাংগঠনিক শীর্ষ পদে রয়েছেন হরিয়ানার শ্রীনিবাস। শুধু তাই নয়, বঙ্গ বিজেপির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র দক্ষিণবঙ্গ। আরএসএস’র তরফে বিজেপির সাথে সমন্বয় সাধনের জন্য তৈরি হয়েছে প্রান্ত প্রচারক পদ। বহুদিন সেই দায়িত্বে রয়েছেন একজন গুজরাতি, প্রশান্ত ভট্ট। উল্লেখ্য, এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির পর্যবেক্ষক ও সহ পর্যবেক্ষক পদেও অবাঙালিদের আধিপত্য। রয়েছেন সুনীল বনসাল, অমিত মালব্য, আশা লাকড়া, মঙ্গল পাণ্ডেরা। অন্যদিকে, ভোটকে সামনে রেখে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেছে ভুপেন্দ্র যাদব, বিপ্লব দেবরা। যা নিয়েই অভিজিতৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, সংগঠনে বাঙালিদের গুরুত্ব না দিয়ে অবাঙালি নেতাদের উপর নির্ভর করে কি বঙ্গ জয় আদৌ সম্ভব হবে?

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen