কংগ্রেস-তৃণমূলের বয়কট করা JPC-র চেয়ারপার্সন হলেন BJP সাংসদ অপরাজিতা, ‘প্রহসন’ অভিযোগ বিরোধীদের

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২০:২০: প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের অপসারণ সংক্রান্ত বিল পর্যালোচনায় গঠিত জেপিসির চেয়ারপার্সন হলেন বিজেপি (BJP) সাংসদ অপরাজিতা সারঙ্গি (Aparajita Sarangi)। কংগ্রেস, তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি ইতিমধ্যেই কমিটি বয়কট করেছে। বিরোধীদের অভিযোগ, এই বিলের লক্ষ্য বিরোধী সরকারগুলিকে অস্থির করা।
বুধবার লোকসভার সচিবালয় থেকে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। তবে এই কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক।
চলতি বছরের ২০ অগস্ট সংসদের বাদল অধিবেশনের শেষ দিনে কেন্দ্রীয় সরকার একটি সংবিধান সংশোধনী বিল-সহ তিনটি বিল পেশ করে। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা কেন্দ্র-রাজ্যের মন্ত্রীরা যদি এমন কোনও অপরাধে গ্রেপ্তার হন, যার শাস্তি পাঁচ বছরের বেশি হতে পারে এবং তাঁরা টানা ৩০ দিন জেলে থাকেন, তাহলে তাঁদের পদ খারিজ হয়ে যাবে। বিরোধীদের আশঙ্কা, এই বিলের মাধ্যমে বিরোধী শাসিত রাজ্য সরকারগুলিকে ইচ্ছেমতো অস্থির করে তোলার সুযোগ তৈরি হবে।
‘অ্যাসোসিয়েশন অব ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস’-এর (Association of Democratic Reforms) তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৩০ জন মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে ১২ জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি, অন্ধ্রপ্রদেশের চন্দ্রবাবু নায়ডু এবং তামিলনাড়ুর এম কে স্ট্যালিনের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
এই বিলগুলি সংসদে পেশ হওয়ার পর তা যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। তৃণমূল প্রথমেই জানিয়ে দেয়, তারা এই কমিটিতে যোগ দেবে না। দলের তরফে বলা হয়, এই জেপিসি একটি “প্রহসন”। লোকসভায় সাংসদ সংখ্যার নিরিখে বিজেপি ও কংগ্রেসের পরেই রয়েছে সমাজবাদী পার্টি ও তৃণমূল। অথচ এই তিন বৃহত্তম বিরোধী দলই এবার জেপিসি বয়কট করেছে-যা সাম্প্রতিক অতীতে নজিরবিহীন।
বিরোধীদের অভিযোগ, ওয়াকফ বিল সংক্রান্ত জেপিসির মতোই এবারও বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র সাংসদদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে কমিটিতে। ফলে বিরোধীদের আপত্তি ‘ডিসেন্ট নোট’-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, আর কমিটি বিলের পক্ষেই সুপারিশ করবে।
৩১ সদস্যের এই জেপিসিতে (লোকসভার ২১, রাজ্যসভার ১০) সরকারপক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠতা স্পষ্ট। বিরোধীরা আশঙ্কা করছে, এই বিলের মাধ্যমে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রীদের গ্রেপ্তার করে তাঁদের পদচ্যুত করার পথ সুগম হবে। যদিও বিলের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর অপসারণের কথাও বলা হয়েছে, বিরোধীদের মতে, বাস্তবে কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থা প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করবে না। বরং বিরোধী সরকার ও শরিক দলের নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রাখার হাতিয়ার হবে এই বিল।
তৃণমূল (TMC) ও কংগ্রেসের অভিযোগ, এতদিন দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের দলে জায়গা দিয়ে, সিবিআই-ইডিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে বিজেপি (BJP) এখন নৈতিক অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করছে। যদিও আসাদউদ্দিন ওয়েইসির AIMIM এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেস এই জেপিসিতে যোগ দিয়েছে। রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে-এই কমিটি কি সত্যিই নিরপেক্ষ পর্যালোচনা করবে, নাকি বিরোধীদের আশঙ্কাই সত্যি হবে?