জিভে এক টুকরো লবঙ্গ রাখলেই বদলে যাবে শরীর! জানুন আশ্চর্য উপকারিতা

November 15, 2025 | 2 min read
Published by: Proteem Basak

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৯:০০: রান্নাঘরের কোণে পড়ে থাকা ছোট্ট একটি মশলা—লবঙ্গ। তবে এর শক্তি কোনওভাবেই ছোট নয়। প্রাচীন আয়ুর্বেদের ভাষায়, লবঙ্গ হল “ক্যাথোলিক হিলার”—অর্থাৎ এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান, যা শরীরের মাথা থেকে পা পর্যন্ত বিভিন্ন সমস্যার প্রতিকারে সক্ষম। এর মধ্যে থাকা ইউজেনল,কারভাক্রল, ফ্ল্যাভোনয়েড,ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস সহ অসংখ্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে, প্রদাহ কমায়, ব্যথা হ্রাস করে এবং মনকে দেয় গভীর প্রশান্তি।

আজকাল ব্যস্ততা, চাপ, অনিদ্রা, হজমের গোলমাল—সব মিলিয়ে দিনের শেষে মন-শরীর প্রায় ভেঙে পড়ে। আর ঠিক সেই সময়টিতেই একটি মাত্র লবঙ্গ হতে পারে অবাক করা ওষুধ।

জিভে লবঙ্গ রাখলেই তৎক্ষণাৎ কেন হয় পরিবর্তন?

লবঙ্গ জিভের ওপর ছোঁয়ামাত্রই এর ইউজেনল তেল স্নায়ুকে সক্রিয় করে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মুখের ভেতর ছড়িয়ে পড়ে শীতল ও প্রশান্ত একটি অনুভূতি। এই ঠান্ডা প্রভাব কর্টিসল কমিয়ে দেয়, ফলে মানসিক চাপ কমে, উদ্বেগ সরে যায় এবং ক্লান্ত শরীর নতুনভাবে জেগে ওঠে।
যারা সারাদিনের দৌড়ঝাঁপে মানসিকভাবে ক্লান্ত থাকেন বা ঘুমের সমস্যা রয়েছে—তাদের জন্য এটি নিখুঁত ঘরোয়া প্রতিকার।

মুখ ও দাঁতের পরিচর্যায় অনন্য লবঙ্গ।

লবঙ্গের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ মুখের জীবাণু ধ্বংস করে দ্রুত। ফলে –

মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।

দাঁতে ব্যথা বা মাড়ির প্রদাহ কমে।

মুখের ঘা সারতে সাহায্য করে।

লালা নিঃসরণ বাড়িয়ে মুখকে প্রাকৃতিকভাবে পরিষ্কার রাখে

যাদের বারবার মুখে ছোট ঘা বা ইনফেকশন হয়, তারা প্রতিদিন সকালে একটি লবঙ্গ জিভে রাখলে কয়েক দিনের মধ্যেই স্পষ্ট ফল পাবেন।

গলা ব্যথা, কাশি ও সর্দিতে প্রাকৃতিক আরাম: লবঙ্গের তেল ধীরে ধীরে গলায়ের ভেতর পৌঁছে শ্লেষ্মা নরম করে দেয়।
ফলে খুসখুসে কাশি কমে, গলা পরিষ্কার হয়, শ্বাস নিতে আরাম পাওয়া যায়। এর গন্ধ নাক ও সাইনাসের ব্লকেজ খুলে দেয়। যারা সাইনোসাইটিস বা ঘন ঘন সর্দি-কাশিতে ভোগেন, তাদের জন্য এটি দারুণ কার্যকর।

হজম, গ্যাস ও অম্বল দূর করতে সহায়ক: হজমের প্রথম ধাপ শুরু হয় জিভ থেকেই—আর লবঙ্গ সেই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।এটি হজম এনজাইম বাড়ায়, গ্যাস ও বদহজম কমায়, ঢেকুর বা অম্বলের সমস্যা দূর করে।

গবেষণায় দেখা যায়, লবঙ্গ পাকস্থলীর Helicobacter pylori ব্যাকটেরিয়া দমন করতে পারে—যা আলসার ও অ্যাসিডিটির অন্যতম কারণ।

মস্তিষ্কে প্রশান্তি, মনোযোগ ও উন্নত ঘুম: লবঙ্গের গন্ধ ও স্বাদ মস্তিষ্কে ডোপামিন ও সেরোটোনিন বৃদ্ধি করে।
ফলে মন শান্ত হয়, চিন্তা কমে, মনোযোগ বৃদ্ধি পায় এবং ঘুমের গুণমান উন্নত হয়।
যাদের অতিরিক্ত টেনশন বা অনিদ্রা রয়েছে—রাতে একটি লবঙ্গ জিভে রাখলে উপকার পাওয়া যায়।

ব্যথানাশক ও রক্তপরিষ্কারক গুণ: লবঙ্গের Eugenol প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে।

দাঁতের ব্যথা, মাড়ির প্রদাহ, গলার জ্বালা—সবক্ষেত্রেই দ্রুত আরাম মেলে।

এছাড়া এটি রক্ত বিশুদ্ধ করে, লিভার ও কিডনির টক্সিন ফিল্টারিং প্রক্রিয়া উন্নত করে শরীরকে ভেতর থেকে সুরক্ষিত রাখে।

ইমিউনিটি ও শ্বাসযন্ত্রের সুরক্ষায়: লবঙ্গের শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল-অ্যান্টিভাইরাল উপাদান মৌসুমি সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে।

যাদের শ্বাসকষ্ট বা এলার্জির প্রবণতা আছে—তারা নিয়মিত লবঙ্গ মুখে রাখলে নাক খুলে যায় এবং শ্বাসপ্রশ্বাস সহজ হয়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা:

লবঙ্গের ওপরে থাকা ফুলটি ফেলে তারপর ব্যবহার করুন।

দিনে একটি লবঙ্গের বেশি খাবেন না

অতিরিক্ত খেলে এসিডিটি বা জ্বালা হতে পারে

রক্ত পাতলা করার ওষুধ খেলে বা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

প্রকৃতির আশ্চর্য উপহার এই
লবঙ্গ শুধু রান্নার স্বাদ বাড়ায় না—এটি যেন প্রকৃতির হাতে গড়া এক জীবন্ত ওষুধ।
নিয়মিত ও সংযমে ব্যবহার করলে শরীর পায় প্রশান্তি, শক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অদৃশ্য ঢাল।
মাত্র একটি লবঙ্গেই লুকিয়ে আছে সুস্থতার প্রতিদিনের নিশ্চয়তা—শুধু ব্যবহার করুন সঠিকভাবে, লাভ পাবেন ভরপুর।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen