২০০২-এর তালিকায় নাম না থাকায় ‘মানসিক চাপ’, বেলঘরিয়ায় ট্রেনের সামনে ঝাঁপ প্রৌঢ়ের

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৬:২৪: ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় (Voter list 2002) নাম নেই। নেই পর্যাপ্ত নথিপত্র। রাজ্যে ‘এসআইআর’ (SIR) ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই এই চিন্তায় ঘুম উড়েছিল উত্তর ২৪ পরগনার বেলঘরিয়ার (Belgharia) এক রিকশাচালকের। পরিবারের দাবি, নথিপত্র সংক্রান্ত সেই ‘আতঙ্ক’ থেকেই এবার চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন ৬৩ বছর বয়সি প্রৌঢ় অশোক সর্দার।
বুধবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বেলঘরিয়ার সিসিআর ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই প্রৌঢ়কে উদ্ধার করে আরজি কর হাসপাতালে (RG Kar Hospital) ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, অশোক সর্দার কামারহাটি পুরসভার অন্তর্গত প্রফুল্লনগর এলাকার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা। পেশায় তিনি রিকশাচালক। পরিবারের সদস্যদের দাবি, গত কয়েক দিন ধরেই নথিপত্র জোগাড় করা নিয়ে প্রচণ্ড মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন তিনি।
পরিবারের অভিযোগ, তাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে ওই এলাকায় বাস করলেও কোনও এক অজানা কারণে ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় অশোকের নাম পাওয়া যায়নি। যদিও তাঁর মায়ের নাম সেই তালিকায় ছিল, কিন্তু সেখানেও ছিল বানানের ভুল।
ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই দেশ থেকে বিতাড়িত হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছিলেন অশোক। পরিবারের মতে, সারা দিন তিনি এই চিন্তাতেই মগ্ন থাকতেন যে, পুরনো কাগজ না থাকলে হয়তো তাঁকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে।
অশোক সর্দারের স্ত্রী জানান, ‘‘এসআইআর শুরু হওয়ার কথা শোনার পর থেকেই ও খুব চিন্তায় ছিল। আমার শাশুড়ি আগেকার দিনের মানুষ, তখন এত সব কাগজপত্র রাখার চল ছিল না। এখন এই বয়সে এসে কাগজ কোথায় পাব, সেই চিন্তাই ওকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল।’’
তাঁর মেয়েও একই দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘বাবার নাম ২০০২-এর তালিকায় ছিল না। ঠাকুমার নাম থাকলেও বানান ভুল ছিল। গত কয়েক দিন ধরে বাবা এই নিয়ে নথিপত্র জোগাড়ের চেষ্টা করছিলেন এবং প্রচণ্ড মানসিক চাপে ছিলেন। শেষমেশ সেই আতঙ্ক থেকেই বুধবার রাতে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দেন বাবা।’’
জানা গিয়েছে, আপাতত আরজি কর হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন অশোক সর্দার (Ashok Sardar)।
উল্লেখ্য, গত ২৭ অক্টোবর রাজ্যে এসআইআর (SIR) ঘোষণা হওয়ার পর থেকে জনমানসে ভীতি ও আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। এর আগেও নথিপত্র সংক্রান্ত ‘আতঙ্কে’ রাজ্যে একাধিক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে এবং অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর অভিযোগও সামনে এসেছে। এমনকী, কাজের চাপে দুই বিএলও (BLO)-র মৃত্যুর অভিযোগও উঠেছে।