অনুমতি ছাড়াই মেয়ের দেহ সৎকার করেছে পুলিস হাইকোর্টে বয়ান হাথরসে নির্যাতিতার পরিবারের
‘অনুমতি ছাড়াই রাতের অন্ধকারে মেয়ের দেহ দাহ করেছে পুলিস-প্রশাসন। সৎকারের সময় থাকতে পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।’ সোমবার এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চে একথা জানাল হাতরাসে নিহত নির্যাতিতার পরিবার। আত্মপক্ষ সমর্থনে হাতরাসের জেলাশাসক আদালতে বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থেই ওইভাবে দেহ সৎকার করতে হয়েছিল। জেলাশাসকের বক্তব্যের বিরোধিতা করে নির্যাতিতার পাল্টা বলে, এলাকায় বিশাল পুলিসকর্মী মোতায়েন ছিল। ফলে আইন-শৃঙ্খলা হাতের বাইরে চলে যাওয়ার প্রশ্নই ছিল না।
নিহত দলিত তরুণীর পরিবারের পক্ষে আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন আইনজীবী সীমা কুশওয়া। নির্যাতিতার পরিবারের হয়ে বিচারপতির কাছে তিনি তিনটি অনুরোধ করেন। এক, সিবিআইয়ের তদন্ত সংক্রান্ত রিপোর্ট গোপন রাখা হোক। দুই, মামলাটি উত্তরপ্রদেশের বাইরে স্থানান্তরিত করা হোক। তিন, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্যাতিতার পরিবারের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হোক। নিহত দলিত তরুণীর পরিবারের সদস্যদের বয়ান রেকর্ড করার পর আগামী ১ নভেম্বর মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করে হাইকোর্ট।
হাইকোর্টে উপস্থিত হওয়ার আগে এদিন নির্যাতিতার পরিবারকে হাতরাস থেকে লখনউয়ে এনে উত্তরাখণ্ড ভবনের গেস্ট হাউসে তোলা হয়। সেখান থেকে কড়া নিরাপত্তায় হাইকোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়। হাইকোর্ট চত্বরেও ছিল বিশাল পুলিস বাহিনী। শুনানিতে নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি সরকারপক্ষ থেকে উপস্থিত হয়েছিলেন অতিরিক্ত মুখ্যসচিব (স্বরাষ্ট্র), রাজ্য পুলিসের ডিজি, জেলাশাসক, পুলিস সুপার সহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। আদালতের সমন পেয়েই এদিন শুনানিতে উপস্থিত হন পুলিসের শীর্ষ কর্তারা। যোগী সরকারের তরফে আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনজীবী বিনোদ শাহি।
হাইকোর্টে শুনানির দিনই হাতরাস কাণ্ড নিয়ে উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকারের বিরুদ্ধে ফের তোপ দাগলেন রাহুল গান্ধী। তাঁর ট্যুইট, নির্যাতিতার পরিবারকে সাহায্য করার বদলে উত্তরপ্রদেশ সরকার অভিযুক্তদের আড়াল করতে ব্যস্ত। একটি ভিডিও পোস্ট করে প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি হাতরাসের নির্যাতিতার জন্য বিচারের দাবিতে দেশের মহিলাদের সরব হওয়ার আবেদন জানান। এনিয়ে রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর বিরুদ্ধে পাল্টা সরব হন বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র। তাঁর কটাক্ষ, রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা হাতরাসে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। অথচ রাজস্থানে যে পুরোহিতকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হল, তাঁর বাড়িতে দাদা-বোনকে দেখা গেল না।
এদিকে, হাতরাস কাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টে ফের শুনানি হবে আগামী ১৫ অক্টোবর। এর আগে শীর্ষ আদালত এই মামলায় উত্তরপ্রদেশ সরকারকে তিনটি প্রশ্ন করে তার জবাব দিতে বলেছিল। নির্যাতিতার পরিবার ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কী ব্যবস্থা করা হচ্ছে, নিহত তরুণীর পরিবারের জন্য আইনজীবীর ব্যবস্থা হয়েছে কি না এবং এলাহাবাদ হাইকোর্টে যে মামলার চলছে, তার স্টেটাস রিপোর্ট কী, যোগী সরকারকে তা জানাতে বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। তার মধ্যে এদিনই এলাহাবাদ হাইকোর্টে শুনানি হয়। সুপ্রিম কোর্টে যোগী সরকারের হয়ে সওয়াল করছেন সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি জানিয়েছেন, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যেই শীর্ষ আদালতের তিন প্রশ্নের জবাব দেওয়া হবে।