কেমন হওয়া উচিত আপনার ঠাকুরঘর? বাস্তুশাস্ত্র যা বলছে

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৩:১৫: বাস্তুশাস্ত্র মতে বাড়ির সব ইতিবাচক শক্তির মূল উৎস হল ঠাকুরঘর। এই ঘরই পরিবারকে অশুভ প্রভাব, কুদৃষ্টি ও নেতিবাচক শক্তি থেকে রক্ষা করে। তাই শুধু ভক্তিভাব নয়, ঠিকঠাক স্থাপন ও গঠনও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভুল জায়গায় ঠাকুরঘর থাকলে তার প্রভাব পড়তে পারে পুরো পরিবারের উপর। দেখে নিন—বাস্তুমতে আদর্শ ঠাকুরঘর কেমন হওয়া উচিত।
আদর্শ স্থান কোনটি
ঠাকুরঘরের জন্য সবচেয়ে শুভ দিক উত্তর-পূর্ব কোণ, অর্থাৎ ঈশান কোণ। শাস্ত্রে এই দিককে ভগবান শিবের প্রিয় স্থান বলা হয়।
উত্তর-পূর্বে সম্ভব না হলে পূর্ব বা উত্তর দিকও বেছে নিতে পারেন।
তবে একেবারেই চলবে না দক্ষিণ দিক ও সিঁড়ির নিচে ঠাকুরঘর রাখা।
ঘর কেমন হবে
ঠাকুরঘর বর্গাকার বা আয়তাকার হলে শুভ।
তেরচা, গোল বা অদ্ভুত আকৃতির ঘর শক্তির প্রবাহ ব্যাহত করে। মেঝেও হওয়া উচিত বাড়ির অন্য অংশের তুলনায় সামান্য উঁচু—এতে পবিত্রতা বজায় থাকে।
প্রবেশপথের দিক
প্রবেশপথ রাখুন উত্তর বা পূর্ব দিকে।
দরজা যেন সম্পূর্ণভাবে খোলে, শব্দ না করে।
সম্ভব হলে দুটি পাল্লা-ওয়ালা কাঠের দরজা ব্যবহার করুন।
দেব-দেবীর মূর্তি কোথায় রাখবেন?
মূর্তি রাখুন পূর্ব বা পশ্চিমমুখী।
দেবতারা যেন একে অপরের মুখোমুখি না থাকেন বা সরাসরি দরজার দিকে না তাকান।
মূর্তি কখনও মাটিতে নয়—একটি উঁচু কাঠের প্ল্যাটফর্ম বা তাক ব্যবহার করুন।
প্রার্থনার সময় কীভাবে বসবেন?
বসুন পূর্ব বা উত্তর মুখ করে।
এতে ইতিবাচক শক্তির প্রবাহ বাড়ে এবং মন আরও সংযত হয়।
পূজার আসন হিসেবে তুলা বা পশমজাত প্রাকৃতিক মাদুর ব্যবহার করতে পারেন।
মনে রাখবেন—আপনার বসার স্থান দেবতার আসনের থেকে নিচে হতে হবে।
সুন্দর করে গোছানো
ঠাকুরঘর কখনও অগোছালো রাখবেন না।
ধর্মগ্রন্থ, ধূপ, প্রদীপ, ফুলদান—সবই একটি ক্যাবিনেট বা তাকের মধ্যে সুশৃঙ্খলভাবে রাখুন।
ঘরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখুন, বিশেষ করে প্রাকৃতিক আলো যেন পৌঁছায়।
প্রার্থনার সময় তেলের প্রদীপ জ্বালালে শুভ শক্তি আরও বৃদ্ধি পায়।
রঙ ও সাজসজ্জা
ঠাকুরঘরের দেয়ালের জন্য হালকা ও শান্ত রঙ উপযুক্ত—
সাদা, হালকা হলুদ বা হালকা নীল সবচেয়ে ভালো।
অতিরিক্ত সাজসজ্জা না করে অনাড়ম্বর পরিবেশ বজায় রাখাই শুভ।
সবসময় তাজা ফুল ব্যবহার করুন।
পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা
ঠাকুরঘর নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন।
মূর্তি, প্রদীপ, কাপড়—সবসময় পরিচ্ছন্ন থাকা উচিত।
ধূপ ও কর্পূরের সুগন্ধ নেতিবাচক শক্তিকে দূরে রাখে এবং মনকে শান্ত রাখে।
এভাবেই সাজানো একটি ঠাকুরঘর শুধু ভক্তির স্থান নয়—এটি হয়ে ওঠে আপনার বাড়ির আধ্যাত্মিক আশ্রয়, শান্তির কেন্দ্র। সঠিক দিক, পরিষ্কার পরিবেশ এবং ইতিবাচক শক্তির মধ্যে প্রতিদিনের প্রার্থনা আপনাকে ও আপনার পরিবারকে দেয় মানসিক শক্তি, সুরক্ষা এবং সমৃদ্ধির আশীর্বাদ। ঠাকুরঘর ঠিকঠাক হলে ঘর ভরে ওঠে শান্তি, ভক্তি আর শুভ শক্তিতে—এটাই বাস্তুর সেরা বার্তা।