পাখির চোখ ছাব্বিশের নির্বাচন, সংসদে ‘একলা চলো’ নাকি ‘জোট ধর্ম’! কী স্ট্রাটেজি তৃণমূলের?

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৯:০১: জাতীয় রাজনীতিতে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিক তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপি (BJP) বিরোধী কর্মসূচিতেও থাকছে পূর্ণ সমর্থন। কিন্তু সংসদের অলিন্দে কংগ্রেসের (Congress) সঙ্গে আর আগের মতো ‘গলাগলি’ নয়। চব্বিশের লোকসভা এখন অতীত, সামনেই ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচন। তাই রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণের কথা মাথায় রেখেই সংসদে এবার ‘একলা চলো’ এবং ‘জোট ধর্ম’-এই দুইয়ের ভারসাম্য বজায় রাখার নয়া কৌশল নিল তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress)।
তৃণমূল সূত্রে খবর, সংসদে বিরোধীদের ইস্যুভিত্তিক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে তৃণমূল অংশগ্রহণ করবে, কিন্তু রাজ্যসভায় (Rajya Sabha) বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গের (Mallikarjun Kharge) চেম্বারে ডাকা কোনও সমন্বয় বৈঠকে তারা যোগ দেবে না। রাজনৈতিক মহলের মতে, বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের অম্ল-মধুর সম্পর্ক এবং আসন্ন বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখেই এই সতর্ক পদক্ষেপ।
কংগ্রেসের (Congress) সঙ্গে অতিরিক্ত সখ্য রাজ্যে বিড়ম্বনা বাড়াতে পারে, তাই ‘নিরাপদ দূরত্ব’ বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। বরং প্রতিদিন কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়ে সংসদে তৃণমূলের নিজস্ব পৃথক কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবারও তৃণমূলের পৃথক কর্মসূচি ছিল।
বাস্তবেও সেই চিত্র দেখা গিয়েছে গত দু’দিনে। মঙ্গলবার সংসদে এসআইআর (SIR) নিয়ে বিরোধীদের সম্মিলিত প্রতিবাদে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল সাংসদরা। সেই ধারা বজায় রেখেই বুধবার মকরদ্বারের সামনে লেবার কোড বা শ্রম আইনের বিরোধিতায় আয়োজিত কর্মসূচিতেও ঘাসফুল শিবিরের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। দলের পক্ষ থেকে সেখানে প্রতিনিধিত্ব করেন রাজ্যসভার সাংসদ তথা আইএনটিটিইউসি-র (INTTUC) সর্বভারতীয় সভানেত্রী দোলা সেন (Dola Sen)।
সংসদের ভিতরেও কেন্দ্রকে চেপে ধরতে ঘুঁটি সাজিয়ে ফেলেছে তৃণমূল (TMC)। নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে আলোচনায় দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) তোলা পাঁচটি প্রশ্নকেই হাতিয়ার করা হচ্ছে। লোকসভায় এই বিষয়ে তোপ দাগার মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Kalyan Banerjee)।
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে কমিশনকে তুলোধোনা করেছেন, তা দেখেই তাঁকে বক্তা হিসাবে বেছে নিয়েছে দল। এছাড়াও লোকসভায় শতাব্দী রায় (Shatabdi Roy) ও মহুয়া মৈত্র (Mahua Maitra) বক্তব্য রাখতে পারেন। একই আলোচনায় রাজ্যসভায় দলের হয়ে সুর চড়াবেন ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় (Ritabrata Banerjee) ও দোলা সেন (Dola Sen)। অন্যদিকে, ‘বন্দে মাতরম’ সংক্রান্ত আলোচনায় দলের অভিজ্ঞ ও বর্ষীয়ান সাংসদদের উপরেই ভরসা রাখছে শীর্ষ নেতৃত্ব। ঠিক হয়েছে, লোকসভায় এই বিষয়ে বক্তব্য রাখবেন সৌগত রায় (Sougata Roy) এবং রাজ্যসভায় দলের হয়ে সওয়াল করবেন সুখেন্দুশেখর রায় (Sukhendushekhar Roy)। সব মিলিয়ে, জোটের মঞ্চে থেকেও নিজেদের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব এবং রাজ্যের স্বার্থকেই সংসদে পাখির চোখ করছে তৃণমূল।