মোদী-পুতিন বৈঠক: বাণিজ্য থেকে প্রতিরক্ষা, কোন কোন চুক্তি হল?

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৮.২০: সব প্রোটোকল সরিয়ে রেখে বৃহস্পতিবার দিল্লি বিমানবন্দরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে (Vladimir Putin) নিজেই স্বাগত জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী (Narendra Modi)। সেই আলিঙ্গন কেবল সৌজন্য ছিল না, ছিল গোটা বিশ্বের কাছে এক জোরালো বার্তা, ভারত ও রাশিয়ার (India and Russia) বন্ধুত্ব আজও অটুট। শুক্রবার দিল্লির ‘হায়দ্রাবাদ হাউস’-এ দুই রাষ্ট্রনেতার বৈঠকের পর সেই ‘দোস্তি’ আরও সুদৃঢ় হলো। সামরিক শক্তি বৃদ্ধি থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক আদান-প্রদানসহ একাধিক বিষয়ে সহমত পোষণ করল মস্কো ও নয়াদিল্লি।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, মোদী-পুতিন বৈঠকে কোন কোন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো:
ভিশন ২০৩০ ও অর্থনৈতিক রোডম্যাপ
এদিনের বৈঠকের অন্যতম বড় সাফল্য হলো ‘ভিশন ২০৩০’। ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক সহযোগিতার একটি পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। দুই দেশের লক্ষ্য, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে ১০০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়া। বাণিজ্যের সম্প্রসারণ, যৌথ উৎপাদন (Co-production) এবং যৌথ উদ্ভাবন (Co-innovation)-এর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, ‘ইন্ডিয়া-ইএইইউ ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট’ (India–EAEU Free Trade Agreement) নিয়েও আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে। রাশিয়ায় ভারতের ওষুধ, কৃষিজপণ্য এবং ভোগ্যপণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির বিষয়েও ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ
দুই দেশের সম্পর্কের বাঁধন মজবুত করতে জ্বালানি ক্ষেত্রকে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ভারতে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি ও তেল সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। পাশাপাশি অসামরিক পরমাণু শক্তি (Civil Nuclear) এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ নিয়ে যৌথভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা ভারতের শক্তি নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করবে।
সন্ত্রাসবাদ ও প্রতিরক্ষা
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার অঙ্গীকার করেছেন দুই রাষ্ট্রনেতা। সীমান্ত সুরক্ষা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে দুই দেশ একজোট। সম্প্রতি ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর (Operation Sindoor) প্রসঙ্গ তুলে ধরে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের কঠোর অবস্থান স্পষ্ট করা হয়েছে। অন্যদিকে, ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত (Ukraine-Russia conflict) প্রসঙ্গে ভারতের অবস্থান ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী মোদী সাফ জানিয়েছেন, ভারত এই বিষয়ে ‘নিরপেক্ষ’ নয়, বরং ভারত সর্বদা ‘শান্তির পক্ষে’।
মহাকাশ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা
সোভিয়েত জমানায় রাকেশ শর্মার মহাকাশ যাত্রা থেকে শুরু করে আজকের গগনযান, মহাকাশ গবেষণায় রাশিয়ার ভূমিকা অনস্বীকার্য। আগামী দিনে মহাকাশ সংক্রান্ত তথ্যানুসন্ধানে দুই দেশ একে অপরকে আরও বেশি সহযোগিতা করবে। এছাড়া জাহাজ নির্মাণ শিল্প এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই (AI) প্রযুক্তিতে যৌথ কাজের পরিসর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে সমন্বয়
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বাইরেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একে অপরের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে দুই দেশ। রাষ্ট্রপুঞ্জ, জি-২০ (G20), ব্রিকস (BRICS) এবং সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO)-এর মতো মঞ্চগুলিতে ভারত ও রাশিয়া সমন্বয় বজায় রেখে কাজ করবে। আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধানে একে অপরের পরিপূরক হয়ে ওঠার অঙ্গীকারও করা হয়েছে এদিনের বৈঠকে।