ভূমিকম্পের নয়া মানচিত্রে পাহাড়ে বাড়ল বিপদ, নিরাপদ নয় কলকাতাও: রিপোর্ট BIS-এর

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২১.২১: গত অক্টোবরে প্রবল বৃষ্টি ও ধসে বিপর্যস্ত হয়েছিল পাহাড়। সেই ক্ষতের দাগ মেলাতে না মেলাতেই এবার দার্জিলিং, কালিম্পং ও কার্শিয়াং নিয়ে আরও বড় আশঙ্কার কথা শোনাল ‘ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস’ (Bureau of Indian Standards – BIS)। দেশের ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকাগুলির (Earthquake-prone area) যে নতুন মানচিত্র প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের হিমালয় অধ্যুষিত অঞ্চল এখন সর্বোচ্চ বিপজ্জনক সীমানায়। শুধু পাহাড় নয়, বিপদের তালিকায় ওপরের দিকেই নাম রয়েছে কলকাতারও (Kolkata)।
এতদিন ভারতের কম্পনপ্রবণ এলাকাগুলিকে মূলত চারটি জোনে (জোন ২ থেকে জোন ৫) ভাগ করা হতো। এর মধ্যে ‘জোন-৫’ ছিল সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু BIS-এর সাম্প্রতিকতম রিপোর্টে (সপ্তম পর্যবেক্ষণ) প্রথমবারের মতো যুক্ত করা হয়েছে ‘জোন-৬’। গোটা হিমালয় পর্বতমালাকে এই নতুন জোনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার ফলে দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পং, সিকিম, অরুণাচল প্রদেশ এবং সমগ্র উত্তরাখণ্ড এখন অতি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার তালিকায়। রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের মোট ভূমির প্রায় ৬১ শতাংশ এখন মাঝারি থেকে উচ্চ কম্পন ঝুঁকিপূর্ণ, যা কয়েক দশকের মধ্যে ভূ-প্রকৃতিতে এক বড়সড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত।
পরিবেশবিদ ও ভূ-বিজ্ঞানীদের মতে, পাহাড়ের ভূস্তর আগের চেয়ে অনেক বেশি ‘উত্তেজিত’। বিশেষজ্ঞদের একাংশ এর জন্য সরাসরি দায়ী করছেন মানুষের অনিয়ন্ত্রিত হস্তক্ষেপকে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক ইন্দ্রজিৎ চৌধুরী জানিয়েছেন, ভূমিকম্প সম্পর্কিত সাম্প্রতিক রিপোর্ট অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তাঁর মতে, দার্জিলিং-সহ গোটা পূর্ব ভারত এখন সিসমিক জ়োন-৬-এর অন্তর্গত, ফলে পাহাড়ি অঞ্চল আরও বেশি ঝুঁকির মুখে পড়েছে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, ভূমিকম্প প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, তবে প্রাণহানি ও সম্পত্তির ক্ষতি কমানোর উপায় খুঁজে বের করা জরুরি। পুরনো নির্মাণগুলির দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন এবং নতুন নির্মাণের ক্ষেত্রেও ভূমিকম্পের ঝুঁকি মাথায় রেখে পরিকল্পনা করা উচিত।
বিজ্ঞানী রঞ্জন রায় এবং ভূগোলের অধ্যাপক পার্থপ্রতিম রায়ের কথায় উঠে এসেছে পাহাড় কেটে অবৈজ্ঞানিক ভাবে রাস্তা, টানেল নির্মাণ এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কথা। তাঁরা জানান, নদীবাঁধ ও বড় কাঠামোগুলি ভঙ্গুর শিলাস্তরের ওপর তৈরি হওয়ায় বিপদ দরজায় কড়া নাড়ছে। নির্বিচারে বনভূমি ধ্বংস এবং নদীর গতিপথ রুদ্ধ করা থেকে এখনই সরে না আসলে পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে।
পাহাড়ের পাশাপাশি সমতলের জন্যও স্বস্তির খবর নেই। বিআইএস-এর (BIS) রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা রয়েছে ‘জোন-৪’-এ। অর্থাৎ, বড়সড় ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে কলকাতাও যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জাপানের মতো ‘হট স্পট’ চিহ্নিত করে উন্নত ভূমিকম্প-প্রতিরোধ প্রযুক্তি ব্যবহার না করলে বিপদ এড়ানো কঠিন হবে।
তবে বিশেষজ্ঞরা আতঙ্কিত না হয়ে পরিকল্পনামাফিক এগোতে পরামর্শ দিচ্ছেন। তাঁদের মতে, ইন্দোনেশিয়া বা চিনের মতো দেশও ‘জোন-৬’-এর আওতাভুক্ত এলাকা নিয়ে টিকে আছে। সঠিক বিপর্যয় মোকাবিলা পরিকল্পনা, কঠোর নির্মাণবিধি এবং ব্যাপক সবুজায়নই পারে পাহাড় ও সমতলকে এই আসন্ন বিপদ থেকে রক্ষা করতে।