মোদী সরকার সংসদ ও মানুষকে বিভ্রান্ত করছে, MGNREGA-তে বকেয়া প্রায় ৫২ হাজার কোটি! দিল্লিতে সরব তৃণমূল
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৭:০০: ১০০ দিনের কাজের (MGNREGA) টাকা নিয়ে ফের কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়াল তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাকে প্রাপ্য টাকা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলল ঘাসফুল শিবির। শনিবার দিল্লিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যসভার ডেপুটি লিডার সাগরিকা ঘোষ (Sagarika Ghose) এবং লোকসভার ডেপুটি লিডার শতাব্দী রায় (Satabdi Roy) তোপ দাগেন মোদী-অমিত শাহের সরকারের বিরুদ্ধে। তাঁদের অভিযোগ, সরকার অনবরত সংসদ এবং দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।
বকেয়া টাকার খতিয়ান
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে তৃণমূল সাংসদরা পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানান, ২০২২ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ১০০ দিনের কাজে বাংলা দেশের মধ্যে শীর্ষস্থানে ছিল। সেই সময় ১.৩৭ কোটি পরিবার এই প্রকল্পের আওতায় ছিল এবং প্রতি বছর অন্তত ৭০ লক্ষ পরিবার কাজ পেত। কিন্তু কাজ করিয়েও কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না। তৃণমূলের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী:
* ইতিমধ্যে সম্পন্ন হওয়া কাজের বকেয়া মজুরি: ৩৭০০ কোটি টাকা।
* বেতন বহির্ভূত (Non-wage) বকেয়া খরচ: ৩২০০ কোটি টাকা।
* অর্থাৎ, কাজ হয়ে গিয়েছে এমন মোট বকেয়া: ৬৯০০ কোটি টাকা।
* এই কাজের সঙ্গে যুক্ত মোট শ্রমিক সংখ্যা: ৫৯ লক্ষ।
এর পাশাপাশি সম্ভাব্য বকেয়ার হিসেবও তুলে ধরেন তাঁরা। সম্ভাব্য বকেয়া মজুরি প্রায় ২৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা এবং বেতন বহির্ভূত খরচ ১৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে সম্ভাব্য বকেয়া প্রায় ৪৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। সব খাত মিলিয়ে বাংলার মোট পাওনা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা (সুনির্দিষ্টভাবে ৫১,৭০০ কোটি টাকা)।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ
সাংসদদের অভিযোগ, বিজেপি (BJP) পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনে জিততে না পারার কারণেই এই ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ চালাচ্ছে। তাঁরা বলেন, “যে গরিব মানুষের সংসার এই টাকায় চলত, তাঁরা কাজ করেও টাকা পেলেন না। এটা কি বিজেপির প্রতিশোধ? ভোট না দিলে কি ভাত-কাপড় বন্ধ করে দেওয়া হবে?”
গত ৫ ডিসেম্বর রাজ্যসভায় তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়ান (Derek O’Brien) ১০০ দিনের কাজের বকেয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তার উত্তরে কেন্দ্র জানিয়েছিল, নীতি পরিবর্তন ও প্রকল্পের পুনর্গঠনের জন্য সময় লাগছে। তৃণমূলের (TMC) দাবি, আগে ১৫ দিনের মধ্যে কাজ এবং টাকা পাওয়ার সহজ নিয়ম ছিল। এখন সরকার ‘সংস্করণ’ এবং ‘পলিসি চেঞ্জ’-এর অজুহাতে সময় নষ্ট করছে এবং টাকা আটকে রাখছে। গত জুন মাসে কলকাতা হাইকোর্ট কাজ শুরুর নির্দেশ দিলেও ছয় মাস কেটে গেলেও কেন্দ্র কোনও পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ।
বাংলার উন্নয়ন বনাম কেন্দ্রের বঞ্চনা
কেন্দ্রের বঞ্চনার অভিযোগের পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সরকারের সাফল্যের খতিয়ানও তুলে ধরেন সাংসদরা। বিজিবিএস (BGBS)-এর তথ্য উল্লেখ করে জানানো হয়, ২০১১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাংলায় ১ লক্ষেরও বেশি সংস্থা নথিভুক্ত হয়েছে, যা প্রায় ৮৩ শতাংশ বৃদ্ধি। গত পাঁচ বছরে ৪০ হাজার নতুন সংস্থা গড়ে উঠেছে এবং প্রতি বছর প্রায় সাড়ে সাত হাজার নতুন কোম্পানি বাংলায় বিনিয়োগ করছে। তৃণমূলের দাবি, বাংলা যখন কাজ করছে, তখন কেন্দ্র কেবল মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।
সংসদে আলোচনা নিয়ে জটিলতা
এদিন নির্বাচনী সংস্কার বা ‘ইলেক্টরাল রিফর্ম’ নিয়ে সংসদে আলোচনা প্রসঙ্গেও মুখ খোলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। বিজনেস অ্যাডভাইজারি কমিটির (BAC) বৈঠকে ঠিক হয়েছিল যে, এই বিষয়ে সংসদে আলোচনা হবে। তৃণমূলের তরফে স্পষ্ট জানানো হয়েছিল, এই আলোচনা না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা হাউজ চলতে দেবেন না। কিন্তু লোকসভায় এখনও আলোচনার সময় নির্দিষ্ট না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাংসদরা। তাঁরা জানান, সরকার কথা দিয়েছিল, তাই তাঁরা আশা করছেন মিথ্যে আশ্বাসের বদলে সোমবার বা মঙ্গলবার এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে সংসদে আলোচনা হবে। কথা দিয়ে কথা রাখবে সরকার, এই ভরসাতেই আপাতত তাকিয়ে তৃণমূল।