একপক্ষ হয়ে গেলে মানুষ বিচার পাবে কোথায়! SIR নিয়ে কমিশনকে তোপ মমতার

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৫:৪০: উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে অসম সরকার (Assam Government), একাধিক ইস্যুতে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সোমবার কোচবিহারে প্রশাসনিক সভা থেকে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন বা SIR প্রক্রিয়া নিয়ে কমিশনের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। পাশাপাশি, রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন প্রশাসনিক সভার শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে ভোটার তালিকা (Voter list) সংশোধনের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘‘আগে ২ বছর অন্তর SIR হতো। এখন এত তাড়াতাড়ি কেন করা হচ্ছে?’’ বিএলও (BLO) এবং এসডিও-দের (SDO) উপর অহেতুক চাপ সৃষ্টি ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘একটা কমিশন যদি একপক্ষ হয়ে যায়, তবে তাকে কী বলে? কমিশন একপক্ষ হয়ে গেলে মানুষ বিচার পাবে কোথায়?’’
নাগরিকত্ব (Citizenship) ও ডিটেনশন ক্যাম্প Detention camp)( ইস্যুতেও এদিন অভয়বাণী শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রীর গলায়। তিনি স্পষ্ট জানান, তিনি থাকতে বাংলায় কোনও ডিটেনশন ক্যাম্প হতে দেবেন না। নমঃশূদ্র ও মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, ‘‘আমরা চাই মানুষ নিজের সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে বাঁচুক।’’ একইসঙ্গে অসম সরকারের (Assam Government) বিরুদ্ধে তোপ দেগে তিনি জানান, অসমের কোনও অধিকার নেই বাংলার মানুষকে নোটিস পাঠানোর বা গ্রেপ্তার করার।
রাজ্য পুলিশকে (State Police) এ বিষয়ে সতর্ক করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) কড়া নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশকে বলা থাকল, অন্য রাজ্যের লোক এসে যাতে আমার রাজ্যের লোককে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যেতে না পারে। কোনও অপরাধীদের ধরতে হলে আগে রাজ্যের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’’ পুলিশকে আরও ‘প্রো-অ্যাকটিভ’ হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এত ভীতু হলে চলবে না। মারপিট করতে বলছি না, কিন্তু সীমান্তে প্রচুর লেনদেন হচ্ছে, সেদিকে নজর দিন। নাকা চেকিং ঠিকমতো করুন।’’
বাংলায় কথা বলা মানেই যে বাংলাদেশি (Bangladeshi) নয়, সেই প্রসঙ্গও এদিন টেনে আনেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি? পাকিস্তানের ভাষা উর্দু। অনেকেই তো উর্দুতে কথা বলেন। তাহলে?’’ ১৯৭১ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, সেই চুক্তি অনুযায়ী যারা এদেশে এসেছেন, তাঁরা ভারতের নাগরিক।
ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পরিযায়ী শ্রমিকদের (Migrant worker) নাম যাতে তালিকা থেকে বাদ না যায়, সে বিষয়ে বিএলও-দের বিশেষ নজর দিতে বলেন তিনি। প্রয়োজনে প্রতিটি এলাকায় ‘May I Help You’ ক্যাম্প করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উন্নয়ন প্রসঙ্গেও এদিন বড় ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, প্রশাসন আরও ১৬ লক্ষ ৫০ হাজার আবাসের টাকা দেবে। কোচবিহার একটি সীমান্তবর্তী জেলা, তাই এখানকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় কোনওরকম ঢিলেমি বা স্থানীয় ‘মাতব্বরি’ বরদাস্ত করা হবে না বলেও প্রশাসনকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।