জনগণনার পরেই দেশজুড়ে NRC? এনপিআর খাতে বরাদ্দ না থাকায় তুঙ্গে জল্পনা

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ৯.০০: দেশজুড়ে কি এবার সত্যিই NRC (জাতীয় নাগরিকপঞ্জি) কার্যকর হতে চলেছে? শুক্রবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে আসন্ন জনগণনা বা সেন্সাসের জন্য অর্থ বরাদ্দের পর এই প্রশ্নই এখন জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে। অনুমোদিত বরাদ্দে ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার (NPR)-এর জন্য পৃথকভাবে কোনও অর্থের উল্লেখ না থাকায় রাজনৈতিক মহলে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে যে, জনগণনার ঠিক পরেই দেশজুড়ে এনআরসি প্রক্রিয়ায় হাঁটতে চলেছে কেন্দ্র।
২০১৯ সালে যখন জনগণনার প্রাথমিক রূপরেখা ও বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন সেন্সাসের জন্য ৮,৭৫৪ কোটি এবং এনপিআর-এর জন্য ৩,৯৪১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু এবারের বাজেটে এনপিআর খাতে কোনও অর্থ রাখা হয়নি। সরকারি বা প্রশাসনিক স্তরে এনপিআর বা ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার হলো জনসংখ্যা ও নাগরিকত্বের একটি সামগ্রিক ডেটাবেস, যা ২০১০ সাল থেকে তৈরি করা হয়েছিল। ২০২৭ সালের জনগণনা প্রক্রিয়া থেকে কার্যত নীরবে এনপিআর-কে বাদ দেওয়ার অর্থ-সেন্সাসের রিপোর্ট হাতে আসার পর নাগরিকত্বের ডেটাবেস তৈরির জন্য সরকার সরাসরি এনআরসি-র পথেই হাঁটতে পারে। আর তা হতে পারে অসমের ধাঁচেই।
সরকারি সূত্রের খবর অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। পরিকল্পনা মাফিক, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এসআইআর (SIR)-এর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। এরপর এপ্রিল মাস থেকে শুরু হবে সেন্সাসের প্রথম ধাপ, অর্থাৎ গৃহগণনা। ২০২৭ সালের মার্চ মাসের মধ্যে জনগণনা শেষ হবে এবং ২০২৮ সালের মধ্যে রিপোর্ট প্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে। এই রিপোর্টের ভিত্তিতেই পরবর্তী ধাপে এনআরসি এবং ডিলিমিটেশন বা আসন পুনর্বিন্যাস প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। লক্ষ্য হলো, ২০২৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেই লোকসভা ও বিধানসভার আসন পুনর্বিন্যাসের কাজ শেষ করা।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে এনপিআর ঘোষণার সময় বিরোধীরা প্রবল আপত্তি জানিয়েছিল। ‘কাগজ দেখাব না’ আন্দোলনের জেরে উত্তাল হয়েছিল দেশ। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, এনপিআর হলো এনআরসি-র প্রবেশদ্বার। তবে এবার এনপিআর প্রক্রিয়া বাদ দেওয়ায় বিষয়টি আরও স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে। সংসদে সরকার এনআরসি প্রসঙ্গে বারবার জানিয়েছে যে, ‘এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি’, কিন্তু ‘হবে না’-এমন প্রতিশ্রুতি কখনওই দেয়নি।
২০১০ সালের এনপিআর অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা ছিল ১১৯ কোটি। ২০২৭-এর সেন্সাসে তা ১৪৬ কোটি ছোঁবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এনপিআর ছাড়া সরাসরি এনআরসি কার্যকর করার ইঙ্গিত আগামী দিনে রাজনীতির পারদ আরও চড়াবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।