আরজি কর দুর্নীতি: সিবিআই চার্জশিটে নাম, হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইলেন ‘হুইসলব্লোয়ার’ আখতার
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৭:৩০: আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতি মামলায় ফের নাটকীয় মোড়। সিবিআইয়ের (CBI) অতিরিক্ত চার্জশিটে নাম ওঠার পরেই গ্রেপ্তারি র আশঙ্কায় কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) দ্বারস্থ হলেন হাসপাতালের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি (Akhtar Ali)। বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর এজলাসে তিনি আগাম জামিনের আবেদন জানিয়েছেন। আদালত সূত্রে খবর, চলতি সপ্তাহেই এই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।
এই ঘটনার সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ প্রথম সামনে এনেছিলেন এই আখতার আলিই। এতদিন তিনি ‘হুইসলব্লোয়ার’ বা মূল অভিযোগকারী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। কিন্তু সময়ের চাকা ঘুরতেই সেই অভিযোগকারীর নামই এবার জড়িয়ে পড়ল দুর্নীতি মামলায়।
সম্প্রতি আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতে আরজি কর মামলার (RG Kar case) যে অতিরিক্ত চার্জশিট জমা পড়েছে, তাতে আখতার আলির নাম যুক্ত করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তিনি ছাড়াও শশীকান্ত চন্দক নামে আরও এক ব্যক্তির নাম রয়েছে ওই চার্জশিটে। এর আগে এই মামলায় প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ, বিপ্লব সিংহ, সুমন হাজরা, আফসার আলি খান ও আশিস পাণ্ডেকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই।
সিবিআই সূত্রে খবর, অতিরিক্ত চার্জশিটে নাম থাকা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৭১ ধারা (নথি জালিয়াতি) যুক্ত করার আবেদন জানানো হয়েছে। এছাড়াও ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র), ৪২০ (প্রতারণা), ৪০৯, ৪৬৭ ও ৪৬৮ ধারার পাশাপাশি দুর্নীতি দমন আইনের ৭ ও ১৩ ধারাতেও অভিযোগ আনা হয়েছে। তদন্তকারী সংস্থার দাবি, আরজি কর হাসপাতালে গত প্রায় এক দশক ধরে এই আর্থিক অনিয়ম চলছিল এবং এর শিকড় অনেক গভীরে।
মামলার মোড় ঘুরতেই আইনি পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন আখতার। ২০২৩ সালে রাজ্য ভিজিল্যান্স কমিশনের কাছে সন্দীপ ঘোষের (Sandip Ghosh) বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানানোর পর থেকেই আখতার আলিকে বিভিন্ন সময়ে বদলির মুখে পড়তে হয়। প্রথমে তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ এবং পরে চলতি বছরের এপ্রিলে উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ হাসপাতালে ডেপুটি সুপার (নন-মেডিক্যাল) হিসেবে পাঠানো হয়। সম্প্রতি তিনি ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে স্বাস্থ্য দপ্তরে চিঠি দিলেও, তা গ্রহণ করা হয়নি। উল্টে কয়েক দিন আগেই তাঁকে সাসপেন্ড করে স্বাস্থ্য দপ্তর।
অন্যদিকে, স্বাস্থ্য দপ্তরের তদন্তেও আখতারের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠে এসেছে। অভিযোগ, একটি নির্দিষ্ট সংস্থাকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে তিনি লক্ষাধিক টাকা দাবি করেছিলেন। প্রশাসনের দাবি, তদন্তে দেখা গিয়েছে ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে তাঁর নিজের অ্যাকাউন্টে ২ লক্ষ ৩৯ হাজার টাকা এবং তাঁর স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে ৫০ হাজার টাকা জমা পড়েছিল। এছাড়াও, নিজের ও পরিবারের বিমানযাত্রার ক্ষেত্রেও তিনি অনৈতিক সুবিধা নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।
একসময়ের অভিযোগকারী নিজেই এখন কাঠগড়ায়। সব মিলিয়ে, আখতার আলির এই আগাম জামিনের আবেদনে আরজি কর দুর্নীতি মামলা যে ফের নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠল, তা বলাই বাহুল্য। এখন হাইকোর্ট তাঁর জামিনের আর্জি মঞ্জুর করে কি না, সেদিকেই তাকিয়ে সব পক্ষ।