কুৎসা উড়িয়ে শিল্পের চাকাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ডাক, একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন মুখ্যমন্ত্রীর

December 18, 2025 | 2 min read
Published by: Saikat

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৬:২০:  রাজ্যে শিল্পবান্ধব পরিবেশের বার্তা দিতে গিয়ে ফের কেন্দ্রকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বৃহস্পতিবার ধনধান্য অডিটোরিয়ামে আয়োজিত বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে তিনি অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে (Central Agency) ব্যবহার করে ব্যবসায়ীদের ভয় দেখানো হচ্ছে, যার ফলে ব্যাহত হচ্ছে ব্যবসার স্বাভাবিক পরিবেশ।

এদিন রাজ্যের শিল্প-সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরার পাশাপাশি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বিরোধী দলনেতাদের পাশাপাশি এবার শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদেরও ‘টার্গেট’ করছে কেন্দ্র সরকার। সিবিআই এবং ইডির মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে হাতিয়ার করে বাংলায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা চলছে বলে দাবি করেন তিনি। ক্ষোভের সুরে মমতা প্রশ্ন তোলেন, “ব্যবসায়ীদের এজেন্সি দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। সারাক্ষণ এজেন্সির ভয় দেখালে ব্যবসা করবে কী করে?”

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে একটি বিশেষ মহল থেকে ক্রমাগত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। রাজ্যের শিল্প (industry) সম্ভাবনা নেই বলে ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে। তবে বিরোধীদের এই দাবি নস্যাৎ করে তিনি বলেন, “রাজ্যের বিরুদ্ধে ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু বাংলা যা পারে, আর কেউ তা করতে পারে না। বাংলা একদিন সারা বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে।” এদিনের মঞ্চ থেকে তিনি রাজ্যের শিল্প পরিকাঠামোকে আরও শক্তিশালী করতে একগুচ্ছ নতুন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন এবং আগামী দিনে বাংলাকে দেশের শিল্প-মানচিত্রে শীর্ষে নিয়ে যাওয়ার ডাক দেন।

ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজ্যে ‘প্রো-বিজনেস’ বা ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে তৃণমূল সরকার কী কী পদক্ষেপ করেছে, এদিন তার বিস্তারিত খতিয়ান তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আগে যখন বাইরে যেতাম, শুনতাম বাংলায় নাকি আর কিছুই হবে না। তখনই মনে মনে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম, বাংলার শিল্পকে সবার উপরে নিয়ে যাব।’’ সেই লক্ষ্যেই ল্যান্ড ব্যাঙ্ক তৈরি, লজিস্টিক হাব গঠন এবং শিল্প স্থাপনের নিয়ম সরলীকরণের মতো একাধিক যুগান্তকারী পদক্ষেপ করেছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি, রাজ্যের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা উল্লেখ করে তিনি আশ্বাস দেন যে, আগামী দিনে এই পরিকাঠামো আরও শক্তিশালী হবে। আইটি এবং চর্মশিল্পে গত কয়েক বছরে রাজ্যে বিপুল বিনিয়োগের কথাও এদিন উঠে আসে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে।

সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী জানান, সরকারি স্কুলের পড়ুয়াদের সাইকেল দেওয়ার জন্য সরকারকে বাইরে থেকে সাইকেল কিনতে হয়, যাতে খরচ বেশি পড়ে। শিল্পপতিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘এখানে অনেক জমি আছে। কেউ চাইলে এখানেই ফ্যাক্টরি গড়তে পারেন।’’

এদিন মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, রাজ্য সরকার সর্বদা ব্যবসায়ীদের পাশে রয়েছে। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই যে শিল্প ও কর্মসংস্থানকে (Employment) বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তা মনে করিয়ে দেন তিনি। বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের (BGBS) মাধ্যমে রাজ্যে বিপুল বিনিয়োগ ও বিদেশ থেকে লগ্নি আসার কথাও তুলে ধরেন মমতা।

রাজ্যের বেকারত্বের হার ৪০ শতাংশ কমেছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘এক দল বাংলার নামে নেতিবাচক আবহ তৈরি করতে চায়। কিন্তু তার মোকাবিলা করেই আমরা বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’’ জিএসটি চালুর ফলে রাজ্যের আর্থিক ক্ষতির অভিযোগও তোলেন তিনি। পাশাপাশি, শিল্প ও উদ্ভাবনের জন্য মানসিক শান্তির প্রয়োজনে জোর দিয়ে তিনি মন্তব্য করেন, ‘‘ব্রেনে শান্তি থাকলে তবেই ইনোভেটিভ আইডিয়া তৈরি হয়।’’

এদিন সম্মেলন থেকে মুখ্যমন্ত্রী যে প্রকল্পগুলির উদ্বোধন করেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

* সাগরদীঘিতে ৬৬০ মেগাওয়াটের সুপার ক্রিটিক্যাল থার্মাল ইউনিট, যা রাজ্যের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা আরও বাড়াবে।
* আসানসোল এবং বাঁকুড়ায় দুটি নতুন WBSIDCL পার্ক।
* কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ার এবং মালদায় এমএসএমই ফেসিলিয়েশন সেন্টার (MSME Facilitation Center)।
* উৎসধারা প্রকল্পের মাধ্যমে বারাকপুরের গান্ধীঘাটের সৌন্দর্যায়ন।
* হরিণঘাটায় বেঙ্গল ডেয়ারির জন্য ৬ হাজার ৫৫৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নতুন প্ল্যান্ট, যেখান থেকে প্রতিদিন ১ থেকে ২ লক্ষ লিটার দুধ উৎপাদিত হবে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen