ওপার বাংলায় ‘ছায়ানট’ ও সংবাদমাধ্যমে ভাঙচুর, নিন্দায় সরব এবার বাংলার শিল্পী-সাহিত্যিকরা

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৮.৫০: ওপার বাংলায় যখন বিক্ষোভের আগুন, এপার বাংলায় তখন বিষাদের ছায়া। অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশে (Bangladesh) এবার মৌলবীদের নিশানায় সংস্কৃতি এবং সংবাদমাধ্যম। ঢাকার ধানমণ্ডিতে প্রগতিশীল ধর্মনিরপেক্ষ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ‘ছায়ানট’-এর সাততলা ভবনে ঢুকে বাদ্যযন্ত্র আছড়ে ভাঙার ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শিউরে উঠছেন পশ্চিমবঙ্গের শিল্পী-সাহিত্যিকরা। শুধু সংস্কৃতিই নয়, রেহাই মেলেনি সংবাদমাধ্যমেরও। এই ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছে এপার বাংলাতেও।
সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাত ১টা নাগাদ ধানমণ্ডিতে (Dhanmondi) ছায়ানটের (Chhayanaut) ভবনে চড়াও হয় একদল বিক্ষুব্ধ জনতা। সাততলা এই ভবনের প্রতিটি কক্ষে ঢুকে আসবাবপত্র ভাঙচুরের পাশাপাশি অগ্নিসংযোগও করা হয়। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওতে (যদিও ভিডিওর সত্যতা যাচাই করে নি দৃষ্টিভঙ্গি) দেখা গিয়েছে, কীভাবে হারমোনিয়াম, তবলার মতো বাদ্যযন্ত্রগুলি আছড়ে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। অভিযোগ, বাদ্যযন্ত্র ও শিল্পচর্চার ওপর এই আক্রোশ আসলে গভীর মৌলবাদী উস্কানিরই ফল।
একই রাতে বাংলাদেশের প্রথম সারির দুই সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ এবং ‘দ্য ডেইলি স্টার’-এর দপ্তরেও হামলা চালানো হয়। ভাঙচুরের পর ধরিয়ে দেওয়া হয় আগুন। এই আগুনেই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে চিত্র সাংবাদিক প্রবীর দাসের (Prabir Das) সারা জীবনের সঞ্চয়। লিফটের ভাঙা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর কান্নাভেজা ছবি এখন ভাইরাল। ডেইলি স্টারের অফিসের কম্পিউটারে সেভ করা ছিল তাঁর তোলা অসংখ্য ছবি, যা ছিল তাঁর বেঁচে থাকার রসদ। চোখের সামনে সেই স্বপ্ন পুড়ে ছাই হতে দেখে বাকরুদ্ধ তিনি।
পদ্মাপাড়ের এই অস্থিরতা ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্টজনেরা। শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার (Pabitra Sarkar) ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেছেন, ‘‘আন্দোলনের নামে এই বীভৎসতা চোখে দেখা বড় কষ্টের। বিশেষ ধর্মের সংকীর্ণ মনোভাব থেকেই এই হামলা। ভারত বিদ্বেষ তথা রবীন্দ্র অপমান কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’’
লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় (Shirshendu Mukhopadhyay) বলেন, “বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই তো বাঙালি। পাকিস্তানপ্রেমীরা এই চেষ্টা করতেই পারে। কিন্তু সেটা সফল হবে না। আসলে কারা এটা করছে, বলা মুশকিল। এখন তো অরাজকতা চলছে। নির্বাচিত কোনও সরকার নেই। ওখানে অনেক ধরনের মতবাদ মাথাচাড়া দিয়েছে। তার মধ্যে উগ্রবাদও আছে। সব মিলিয়ে একটা আত্মনাশের আয়োজন চলছে। এতে বাংলাদেশেরই ক্ষতি হবে। সংস্কৃতিকে ধ্বংস করলে একটা জাতির থাকে কী? দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।”
সঙ্গীতশিল্পী তথা ক্যাকটাস ব্যান্ডের গায়ক সিধু (Sidhu) বাদ্যযন্ত্র ভাঙার ঘটনায় অত্যন্ত ব্যথিত। তিনি বলেন, ‘‘ধর্ম বা আদর্শের মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে সংগীতকে রাখা উচিত। যারা এই জঘন্য কাজ করছে, তারা হয়তো একমাত্রিক চিন্তাভাবনায় বিশ্বাসী অথবা তাদের মগজধোলাই করা হয়েছে।’’ অন্যদিকে গায়ক রাঘব চট্টোপাধ্যায় (Raghab Chatterjee) যথেষ্ট আতঙ্কিত। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কী হতে চলেছে, তা ভেবেই তিনি শঙ্কিত। নাট্যব্যক্তিত্ব চন্দন সেনের (Chandan Sen) কথায়, ‘‘মৌলবাদ যখন মাথাচাড়া দেয়, তখনই সংস্কৃতির ওপর এমন আক্রমণ নেমে আসে। বাংলাদেশে ঠিক তেমনটাই ঘটছে।’’
উল্লেখ্য, ওপার বাংলার এই উত্তেজনার আঁচ যাতে কোনওভাবেই এপারে না এসে পড়ে, তার জন্য সীমান্তে কড়া সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিএসএফ (BSF) সূত্রে খবর, থার্মাল ক্যামেরা, নাইটভিশন ক্যামেরা, সিসিটিভি এবং ড্রোনের মাধ্যমে দিনরাত নজরদারি চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে ‘চিকেনস নেক’ বা শিলিগুড়ি করিডোর এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।