তথ্য দিয়ে বিজেপির ‘কুৎসা’র জবাব, বাংলার অর্থনীতির খতিয়ান তুলে ধরল তৃণমূল

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২১.১০: বাংলাকে নিয়ে বিজেপির ‘অপপ্রচার’ এবং ‘মিথ্যাচার’-এর কড়া জবাব দিল তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। সম্প্রতি রাজ্যের অর্থনীতি ও ঋণের বোঝা নিয়ে বিজেপি (BJP) যে দাবি করেছিল, সরকারি তথ্য ও পরিসংখ্যান তুলে ধরে তার পালটা দিল রাজ্যের শাসক দল। তৃণমূলের দাবি, বিজেপি বাংলা-বিরোধী এবং তাদের দেওয়া তথ্য বাস্তবের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন। তথাকথিত ‘শিল্পের শ্মশানভূমি’ তত্ত্বকে নস্যাৎ করে দিয়ে বাংলার প্রকৃত অর্থনৈতিক চিত্র সামনে এনেছে ঘাসফুল শিবির।
সম্প্রতি বিজেপির তরফে দাবি করা হয়, বিগত ১৪ বছরে রাজ্যের ঋণের পরিমাণ ৩০৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৭.৭১ লক্ষ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এই দাবির পালটা দিতে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস পরিসংখ্যান দিয়ে দেখিয়েছে, দেশের সর্বাধিক ঋণগ্রস্ত রাজ্যগুলির তালিকায় শীর্ষ তিনটি রাজ্যের মধ্যে দুটিই বিজেপি শাসিত। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তামিলনাড়ুর ঋণ ৮.৩৪ লক্ষ কোটি, যোগী রাজ্য উত্তরপ্রদেশের ঋণ ৭.৬৯ লক্ষ কোটি এবং মহারাষ্ট্রের ঋণ ৭.২২ লক্ষ কোটি টাকা। তৃণমূলের প্রশ্ন, ঋণ যদি সমস্যা হয়, তবে বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের এই হাল কেন? এটি যে আসলে ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকারেরই ব্যর্থতা, তা এই পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট।
পাশাপাশি রাজ্যের ঋণ শোধের খতিয়ানও তুলে ধরা হয়েছে। জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় বঞ্চনা ও তহবিল আটকে রাখা সত্ত্বেও ২০১১ সাল থেকে বাংলা মূলধন ও সুদ মিলিয়ে ৬.৬৮ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ঋণ পরিশোধ করেছে।
বিজেপির দ্বিতীয় দাবি ছিল, রাজ্যে মাথাপিছু ঋণের বোঝা বেড়ে প্রায় ৭৬ হাজার টাকা হয়েছে। এর জবাবে তৃণমূল জানিয়েছে, ঋণের অঙ্ক কষলেও আয়ের বৃদ্ধিকে ইচ্ছাকৃতভাবে চেপে যাচ্ছে বিজেপি। বাস্তব চিত্র হলো, ২০১১-১২ সালের তুলনায় বর্তমানে বাংলায় মাথাপিছু আয় প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তখন যা ছিল ৫১,৫৪৩ টাকা, ২০২৪-২৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,৬৩,৪৬৭ টাকায়। এছাড়া গত এক দশকে ১.৭২ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার বাইরে এসেছেন বলেও দাবি করেছে রাজ্য।
ঋণ পরিশোধ ও জিডিপি (GDP) অনুপাত নিয়েও কেন্দ্রকে আয়নায় মুখ দেখার পরামর্শ দিয়েছে তৃণমূল। আইএমএফ-এর (IMF) তথ্য উল্লেখ করে জানানো হয়েছে, ভারতের সাধারণ ডেট-টু-জিডিপি (Debt-to-GDP) অনুপাত ৮১.২৯ শতাংশে পৌঁছেছে। যেখানে খোদ ভারত সরকার স্বীকার করেছে তাদের এই অনুপাত ৫৬ শতাংশ, যা নির্ধারিত সীমার অনেক ওপরে।
সবশেষে, সদ্যজাত শিশুর ওপর ঋণের বোঝা চাপানো নিয়ে বিজেপির আবেগী প্রচারকেও ভোঁতা করে দিয়েছে তৃণমূল। শাসক দলের স্পষ্ট বক্তব্য, বাংলায় নবজাতকের ঋণের বোঝা নিয়ে যারা কথা বলছে, তাদের জানা উচিত মোদি সরকারের বেপরোয়া ঋণগ্রহণের ফলে আজ ভারতে জন্মানো প্রতিটি শিশুর কাঁধে ১.৩২ লক্ষ টাকার ঋণের বোঝা চাপে। তৃণমূলের অভিযোগ, কেন্দ্রের এই বিপুল ঋণ স্বাস্থ্য বা শিক্ষার কাজে লাগে না, বরং তা ব্যবহৃত হয় ঘনিষ্ঠ পুঁজিপতিদের তোষণ ও ঋণ মকুবের কাজে।
তৃণমূল কংগ্রেসের সাফ কথা, বিজেপির দাবি আর বাস্তব চিত্রের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত। বাংলায় যেখানে প্রতিটি বিনিয়োগ ও খরচ মানুষের স্বার্থে করা হয়, সেখানে বিজেপি ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিদের স্বার্থে দেশের ভবিষ্যৎ বন্ধক রাখছে। তথ্য-পরিসংখ্যান পেশ করে তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করেছে, বাংলার অর্থনীতি সঠিক পথেই রয়েছে এবং বিজেপি নিছকই রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলার বদনাম করছে।