‘BJP-র দৃষ্টিকোণ থেকে সঙ্ঘকে বোঝার প্রবণতা বিরাট ভুল’, মোহন ভাগবতের কথায় ফাটলের ইঙ্গিত?

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৫:৩৭: চব্বিশের ভোট বিজেপির আসন হ্রাস, মোদীর অবসর নিয়ে ইঙ্গিতবাহী মন্তব্য, বিজেপির সভাপতি বাছতে বিলম্ব নানা ঘটনাক্রমে বোঝা যায় সঙ্ঘ অর্থ্যাৎ RSS এবং বিজেপির অন্দরে কিছু একটা সমন্বয়ের অভাব আছে। এবার কলকাতায় এসে বড় বার্তা দিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (RSS) প্রধান মোহন ভাগবত (Mohan Bhagwat)। রবিবার কলকাতায় RSS-র ‘১০০ ব্যাখ্যামালা’ অনুষ্ঠানে ভাগবত বলেন, ‘‘অনেকেরই বিজেপি-র দৃষ্টিকোণ থেকে সঙ্ঘকে বোঝার প্রবণতা রয়েছে, যা বিরাট ভুল। আপনি যদি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সঙ্ঘকে বুঝতে চান, তাহলে তুলনা করলে ভুল বোঝাবুঝি হবে। আপনি যদি সঙ্ঘকে শুধু একটি সেবামূলক সংস্থা বলে মনে করেন, তাহলে আপনি ভুল করবেন।’’
হঠাৎ মোহন ভাগবত সঙ্ঘকে ভারতীয় জনতা পার্টির থেকে আলাদা করতে চাইছেন কেন? বিজেপি আর সঙ্ঘ আলাদা, তবে কি আরও চওড়া হচ্ছে ফাটল?
অন্যদিকে, এদিনও বঙ্কিম প্রসঙ্গ উঠল। মোহন ভাগবতও রবি ঠাকুর আর বঙ্কিমচন্দ্রের কাজিয়া বাঁধিয়ে দিলেন। বক্তৃতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম উল্লেখ করেননি তিনি। ‘ভারততীর্থ’ কবিতার উল্লেখও করেননি। কিন্তু ‘ভারততীর্থ’-র ভাবনাকে টুকরো টুকরো করে দিলেন ভাষণে।
‘ভারততীর্থ’-এ কবিগুরু লিখেছিলেন, “হেথায় আর্য, হেথা অনার্য, হেথায় দ্রাবিড় চীন/ শক-হুন-দল পাঠান-মোগল এক দেহে হল লীন”। কিন্তু সঙ্ঘ প্রধান সাফ জানালেন, ইংরেজরা অনেক পরে এসেছে। তার আগে শক-হুণ-পাঠান-মোঘল, যারাই ভারতে এসেছে, তারা কেউই ভারতের সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম হতে পারেনি। তারা সকলেই ছিল হানাদার।
ভাগবতের বক্তৃতায় ‘বন্দে মাতরম’ প্রসঙ্গও এসেছে। তিনি বলেন, “বন্দে মাতরম আন্দোলন শুরুই হয়েছিল নাগপুরে। বন্দে মাতরম-কে ভয় পেয়েছিল ইংরেজরা।” সংসদে আলোচনা চলাকালীন মোদী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়-কে ‘বঙ্কিমদা’ বলে সম্বোধন করেছিলেন। তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। তৃণমূল বিজেপিকে ‘বাংলা বিরোধী’ বলে আখ্যা দিয়েছে। এই আবহে বঙ্কিম বনাম রবীন্দ্র তরজা উসকে দিলেন সঙ্ঘ প্রধান।
তবে রাজনৈতিক মহলের, হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ভাষ্য তৈরিতে বঙ্কিমচন্দ্র বনাম রবীন্দ্রনাথ তরজা অনেক দিন ধরেই চালাচ্ছে বিজেপি। হিন্দুত্ববাদীরা বঙ্কিমকে সনাতনী বলে তুলে ধরেন। রবি ঠাকুরের উদার, প্রগতিশীল চিন্তাকে আক্রমণ করেন। বঙ্গে ভোটের আগে এই অস্ত্রেই শান দিচ্ছে বিজেপি। বঙ্কিমচন্দ্র বনাম রবীন্দ্রনাথ তরজা খানিক উসকে দিয়ে ভোটের ভাষ্য তৈরি করে গেলেন মোহন ভাগবত।