নির্বাচনি বন্ড বাতিলেও প্রভাব নেই, ৫৩ শতাংশ বেড়ে বিজেপির তহবিল ৬,০৮৮ কোটি!
Authored By:
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ০৯:০০: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রায় দু’বছর আগেই বাতিল হয়েছে নির্বাচনি বন্ড (Electoral bonds)। মনে করা হয়েছিল, এতে রাজনৈতিক দলগুলির গোপন আয়ের রাস্তায় কিছুটা হলেও লাগাম পরবে। কিন্তু বাস্তব চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। বন্ড বাতিলের কোনো প্রভাবই পড়েনি শাসক দলের সিন্দুকে, বরং লোকসভা নির্বাচনের বছরে বিজেপির (BJP) তহবিল ফুলেফেঁপে উঠেছে। নির্বাচন কমিশনের (Election Commission of India) কাছে পেশ করা তথ্যে দেখা যাচ্ছে, একলাফে বিজেপির (BJP) অনুদান ৫৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬,০৮৮ কোটি টাকায়।
বিজেপির পেশ করা বার্ষিক রিপোর্ট (Annual Report) অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের তুলনায় ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে (লোকসভা ভোটের বছর) দলের আয় বেড়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। গত ছয় বছরের মধ্যে এই বছরেই বিজেপির প্রাপ্ত অনুদানের অঙ্ক সর্বাধিক। কমিশনের রিপোর্ট বলছে, ২০ হাজার টাকার বেশি নগদ অনুদানের ক্ষেত্রে সিংহভাগ টাকাই এসেছে ‘ইলেকটোরাল ট্রাস্ট’ (Electoral Trust) বা নির্বাচনি ট্রাস্টের মাধ্যমে। মোট আয়ের প্রায় ৬১ শতাংশ বা ৩,৭৪৪ কোটি টাকা এসেছে এই ট্রাস্ট মারফত। বাকি ২,৩৪৪ কোটি টাকা এসেছে বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও কর্পোরেট সংস্থার অনুদান থেকে।
একদিকে যখন শাসক দলের তহবিলে অর্থের জোয়ার, তখন বিরোধী দলগুলির ভাঁড়ারে ভাটার টান স্পষ্ট। পরিসংখ্যান বলছে, কংগ্রেস সহ ডজনখানেক বিরোধী দলের সম্মিলিত আয়ের চেয়ে বিজেপির একার আয় প্রায় সাড়ে চার গুণ বেশি। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের অনুদান আগের বছরের ১,১২৯ কোটি টাকা থেকে ৪৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫২২.১৩ কোটি টাকায়। একই অবস্থা তৃণমূল কংগ্রেসের। তাদের আয় ৬১৮.৮ কোটি টাকা থেকে কমে হয়েছে ১৮৪ কোটি টাকা। বিজেডি এবং বিআরএস-এর মতো আঞ্চলিক দলগুলির আয়ের গ্রাফও নিম্নমুখী। সব মিলিয়ে বিরোধীদের ঝুলিতে এসেছে মাত্র ১,৩৪৩ কোটি টাকা।
বিজেপির তহবিলে অনুদান দেওয়া শীর্ষ ৩০ দাতার তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, সেখানে একাধিক বড় কর্পোরেট সংস্থার নাম রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কোভিড টিকা ‘কোভিসিল্ড’ নির্মাতা সংস্থা সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া। তারা বিজেপিকে ১০০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে। এছাড়াও রুংটা সন্স প্রাইভেট লিমিটেড ৯৫ কোটি টাকা, বেদান্ত লিমিটেড ৬৭ কোটি টাকা এবং হিন্দুস্তান জিঙ্ক লিমিটেড ২৭ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে।
অরুণাচল প্রদেশ, সিকিম, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা থেকে শুরু করে হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড ও দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের বছরে বিজেপির এই বিপুল অর্থপ্রাপ্তি রাজনৈতিক মহলে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। বন্ড ব্যবস্থা উঠে গেলেও কর্পোরেট অনুদান ও ট্রাস্টের মাধ্যমে শাসক দলের এই আর্থিক বৃদ্ধি বিরোধীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।