শুনানির ঠিক আগেই দায়িত্ব ছাড়তে চাইছেন বহু মাইক্রো অবজার্ভার! বিপাকে কমিশন
Authored By:

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২০:৪৯: শনিবার থেকে রাজ্যে শুরু হতে চলেছে এসআইআর (SIR) শুনানি। কিন্তু তার ঠিক আগের দিন, অর্থাৎ শুক্রবারও মাইক্রো অবজার্ভার নিয়োগ নিয়ে জট কাটল না। শুনানির দায়িত্ব পাওয়া বহু কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এদিন জড়ো হন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (CEO) দপ্তরের সামনে। সকলেরই এক আর্জি, এই ডিউটি থেকে অব্যাহতি চাই। কারও শারীরিক অসুস্থতা, তো কারও নিজের বিয়ে। সব মিলিয়ে শুনানির দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে বড়সড় আতান্তরে নির্বাচন কমিশন (Election Commission)।
কমিশন সূত্রে খবর, আসন্ন শুনানিতে নজরদারির জন্য প্রায় ৪৬০০ জন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীকে মাইক্রো অবজার্ভার (Micro observer)হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রতিটিতে ১১ জন করে পর্যবেক্ষক থাকার কথা, সেই হিসেবে মোট প্রয়োজন ৩,২৩৪ জন। অর্থাৎ, প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পর্যবেক্ষক হাতে রেখেছে কমিশন। কিন্তু অভিযোগ উঠছে, নিয়োগের ক্ষেত্রে কর্মীদের সুবিধা-অসুবিধার বালাই করা হয়নি। অনেককে বাড়ি বা কর্মস্থল থেকে বহু দূরের জেলায় পাঠানো হয়েছে, যা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে কর্মীদের মধ্যে।
শুক্রবার সিইও দপ্তরে (CEO) এমন বহু অভিযোগ সামনে এসেছে, যা মানবিক কারণেও উপেক্ষা করা কঠিন। ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা এবং স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কর্মী সুব্রতকুমার পালকে পাঠানো হয়েছে সুদূর উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে। অথচ তিনি বহু আগে স্ট্রোকে আক্রান্ত হন, বর্তমানে তাঁর দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ এবং কথা বলতেও অক্ষম। সুব্রতবাবুর স্ত্রী জানান, ‘‘আমরা কলকাতায় চিকিৎসার জন্য এসেছিলাম। উনি কথা বলতে পারেন না, চোখেও ভালো দেখেন না। এই অবস্থায় SIR-র ডিউটি করা ওঁর পক্ষে অসম্ভব।’’
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী অমর্ত্য বসুর সমস্যা আবার ভিন্ন। আগামী ২৫ জানুয়ারি তাঁর বিয়ে। বিয়ের কেনাকাটা থেকে মধুচন্দ্রিমা, সব পরিকল্পনাই সারা। কিন্তু হঠাৎ দেড় মাসের জন্য এসআইআর-এর ডিউটি পড়ায় মাথায় হাত তাঁর। অমর্ত্যবাবু স্পষ্ট জানিয়েছেন, ‘‘কমিশনের কাজে না করতে চাই না, কিন্তু বিয়ের জন্য ওই সময় আমাকে ছুটি নিতেই হবে। তা সম্ভব না হলে আমাকে অব্যাহতি দেওয়া হোক।’’
একইভাবে কলকাতার এক কর্মীকে পাঠানো হয়েছে জলপাইগুড়িতে, যা দীর্ঘ এক মাস ধরে চালিয়ে যাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয় বলে তিনি লিখিতভাবে জানিয়েছেন। কমিশন অবশ্য সমস্ত আবেদন গ্রহণ করেছে এবং জানিয়েছে, প্রতিটি কেস খতিয়ে দেখা হবে। যাঁদের সমস্যা গুরুতর, তাঁদের অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
তবে কমিশনের একাংশের দাবি, অধিকাংশ মাইক্রো অবজার্ভারই এই দায়িত্ব পেয়ে খুশি। সমস্যা তৈরি করছেন হাতেগোনা কয়েকজন। ইতিমধ্যেই দায়িত্ব নিতে অনিচ্ছুক প্রায় ২০০ জন মাইক্রো অবজার্ভারকে শোকজ (Show-cause) নোটিস ধরিয়েছে কমিশন। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সন্তোষজনক জবাব না মিললে তাঁদের সাসপেন্ড করার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। কমিশনের যুক্তি, অসুস্থ কর্মীদের নাম পাঠানোর দায় সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় সংস্থার এইচআর (HR) বিভাগের। তাঁদের গাফিলতিতেই অসুস্থ বা অক্ষম ব্যক্তিদের নাম তালিকায় ঢুকে পড়েছে, এতে কমিশনের সরাসরি কোনও দায় নেই।