ছেলে ‘মাল’, বাবা ‘রায়’- পদবি বিভ্রাটে আতঙ্ক, SIR শুনানির আগেই মৃত্যু মুর্শিদাবাদের যুবকের
Authored By:

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৩:৫৫: চন্দ্রকোনার ছায়া এবার মুর্শিদাবাদে। ফের নথির আতঙ্কে মৃত্যু মুর্শিদাবাদের এক যুবককের। বাবার পদবি এক, ছেলের আর এক। এই ‘ভুল’ শোধরাতে এসআইআর (SIR)-এর শুনানিতে তলব করা হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু শুনানির টেবিলে পৌঁছনোর আগেই সব শেষ। নথিপত্রের জটিলতা আর শুনানির আতঙ্কে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল হরিহরপাড়ার নিমাই মাল (৪৪) (Nimai Mal) নামের ওই ব্যক্তির। পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনার পর এবার মুর্শিদাবাদ (Murshidabad)- এসআইআর চলাকালীন রাজ্যে পরপর দুটি মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার রায়পুর এলাকায়। স্থানীয় সূত্রে খবর, সম্প্রতি ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর প্রক্রিয়া চলছে। সেই সূত্রেই নিমাই মালের বাড়িতে নোটিস আসে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নিমাইয়ের বাবা শ্যামলাল রায়ের পদবি নথিবদ্ধ ছিল ‘রায়’ হিসেবে। অথচ ২০২৫ সালের খসড়া তালিকায় ছেলে নিমাইয়ের পদবি রয়েছে ‘মাল’। বাবা ও ছেলের পদবির এই গরমিল নিয়ে প্রশ্ন তোলে প্রশাসন। সেই মর্মে শনিবার তাঁকে শুনানির জন্য হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল।
মৃতের পরিবারের দাবি, এই নোটিস হাতে পাওয়ার পর থেকেই চরম আতঙ্কে ভুগছিলেন ওই যুবক। কী হবে শুনানিতে, নাগরিকত্ব নিয়ে কোনও সমস্যা হবে কি না- এই আশঙ্কায় গত কয়েকদিন ধরে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়াই ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। মৃতের স্ত্রী পরিবালা মাল কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, “পদবির সামান্য গন্ডগোলের জন্য আমার এত বড় ক্ষতি হয়ে গেল! ও খুব ভয়ে ছিল। চিন্তায় রাতে ঘুমোচ্ছিল না। শনিবার শুনানি ছিল, তাই শুক্রবার সকাল থেকেই বাড়িতে হন্যে হয়ে পুরনো নথিপত্র খুঁজছিল। বেলা ১১টা নাগাদ আচমকাই স্ট্রোক হয়। হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচানো গেল না।”
রায়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নাজমুল হক এই ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, “নিমাইবাবুর কাছে সমস্ত নথিপত্র গুছিয়ে রাখা ছিল না। শুনানির খবর পেয়ে উনি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন এবং সেই আতঙ্কেই ওঁর মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।”
উল্লেখ্য, মুর্শিদাবাদের এই ঘটনার ঠিক আগেই পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনাতেও আলম খান নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। সেখানেও এসআইআর শুনানির আগেই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। রাজ্যের দুই প্রান্তে নথিপত্র যাচাইয়ের আতঙ্কে পরপর দুটি মৃত্যুর ঘটনায় শাসকদল ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।