ই-চালানের নামে প্রতারণার ফাঁদ! লিঙ্কে ক্লিক করলেই সর্বস্বান্ত হতে পারেন, জানুন বাঁচার উপায়

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২২:২০: ডিজিটাল ইন্ডিয়ার যুগে সরকারি পরিষেবা এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। ঘরে বসেই মিটিয়ে দেওয়া যাচ্ছে বিল থেকে শুরু করে ট্রাফিক ফাইন। কিন্তু প্রযুক্তির এই সুবিধার আড়ালেই ওৎ পেতে আছে বিপদ। সম্প্রতি ‘ই-চালান’ (E-Challan) বা ট্রাফিক জরিমানার নাম করে সাধারণ মানুষকে ঠকানোর এক অভিনব জাল বিস্তার করেছে সাইবার প্রতারকরা। সামান্য অসাবধানতা বা একটি ভুল ক্লিকেই নিমেষে খালি হয়ে যেতে পারে আপনার কষ্টার্জিত অর্থের ভাণ্ডার।
কীভাবে কাজ করছে এই প্রতারণা চক্র?
সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতারকরা সাধারণ ১০ সংখ্যার মোবাইল নম্বর থেকে গ্রাহকদের ফোনে মেসেজ পাঠায়। মেসেজগুলো এমনভাবে ড্রাফট করা হয়, যা দেখে মনে হবে সেগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (SBI) বা ট্রাফিক পুলিশের মতো কোনও সরকারি দফতর থেকে এসেছে।
মেসেজে দাবি করা হয়, আপনার গাড়ির ট্রাফিক নিয়ম লঙ্ঘনের কারণে মোটা অঙ্কের চালান কাটা হয়েছে। গ্রাহকদের মনে আতঙ্ক তৈরি করতে দেওয়া হয় ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা। বলা হয়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা জমা না দিলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আতঙ্কের বশে অনেকেই সেই ফাঁদে পা দেন।
ভুয়ো ওয়েবসাইট
মেসেজের সঙ্গে একটি লিঙ্ক দেওয়া থাকে। সেই লিঙ্কে ক্লিক করলেই ব্যবহারকারী পৌঁছে যান একটি ওয়েবসাইটে, যা দেখতে হুবহু কেন্দ্রীয় সরকারের ‘পরিবহন’ দপ্তরের আসল ওয়েবসাইটের মতো। সাইবার সিকিউরিটি সংস্থা ‘সাইবল’ (Cyble)-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে ইন্টারনেটে এমন অন্তত ৩৬টি ভুয়ো ওয়েবসাইট সক্রিয় রয়েছে। এই সাইটগুলোর লোগো, রং এবং ডিজাইন এতটাই নিখুঁতভাবে নকল করা হয়েছে যে সাধারণ মানুষের পক্ষে আসল-নকলের তফাত বোঝা দুষ্কর। সেখানে গাড়ির নম্বর দিলে একটি ভুয়ো চালানের তথ্যও ভেসে ওঠে।
টাকা চুরির কৌশল
আসল ই-চালান পোর্টালে পেমেন্টের একাধিক মাধ্যম থাকলেও, এই ভুয়ো সাইটগুলোতে সাধারণত শুধুমাত্র ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ডের অপশন রাখা হয়। জরিমানার টাকা মেটানোর জন্য যখনই কেউ কার্ডের তথ্য এবং মোবাইলে আসা ওটিপি (OTP) ইনপুট করেন, মুহূর্তের মধ্যে সেই তথ্য হ্যাকারের হাতে চলে যায়। ফলে কেবল চালানের টাকা নয়, হ্যাকাররা সেই তথ্য ব্যবহার করে পুরো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খালি করে দিতে পারে।
সুরক্ষিত থাকতে কী করবেন?
পুলিশ এবং সাইবার বিশেষজ্ঞরা এই জালিয়াতি থেকে বাঁচতে বেশ কিছু সতর্কবার্তা দিয়েছেন:
১. অচেনা লিঙ্ক এড়িয়ে চলুন: অজানা বা সন্দেহজনক মোবাইল নম্বর থেকে আসা কোনও লিঙ্কে ক্লিক করবেন না।
২. সরকারি ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন: চালান বা কেস সংক্রান্ত তথ্য যাচাই করতে সর্বদা সরকারি ওয়েবসাইট echallan.parivahan.gov.in ব্যবহার করুন।
৩. অ্যাপের সাহায্য নিন: মেসেজটি আসল কিনা তা বুঝতে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘এম-পরিবহন’ (mParivahan) অ্যাপে গিয়ে গাড়ির নম্বর দিয়ে চেক করুন।
৪. পেমেন্ট অপশন খেয়াল করুন: কোনও সাইটে পেমেন্টের জন্য কেবল কার্ডের অপশন থাকলে সতর্ক হোন। ইউপিআই (UPI) বা নেট ব্যাঙ্কিংয়ের অপশন না থাকাটা সন্দেহের কারণ।
৫. অভিযোগ জানান: যদি ভুলবশত প্রতারণার শিকার হন বা সন্দেহজনক মেসেজ পান, তবে অবিলম্বে জাতীয় সাইবার ক্রাইম পোর্টালের হেল্পলাইন নম্বর ১৯৩০-এ (1930) ফোন করে রিপোর্ট করুন।
সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিজিটাল লেনদেনে তাড়াহুড়ো না করে তথ্য যাচাই করাই হলো সুরক্ষার প্রধান কবচ। একটু সচেতনতাই বাঁচাতে পারে আপনার আর্থিক ক্ষতি।