‘সর্ব ধর্ম জিন্দাবাদ’, গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার লড়াই চলবেই: বিশ্বের বৃহত্তম দুর্গা অঙ্গনের শিলান্যাসে মুখ্যমন্ত্রী

December 29, 2025 | 3 min read

Authored By:

Saikat Saikat

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৭:৪৩: নিউ টাউনে ইতিহাস গড়ার পথে আরেকটি অধ্যায়ের সূচনা। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে ‘দুর্গা অঙ্গন’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেনমুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এই অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেই রাজ্যের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা এবং সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘‘প্রত্যেকটা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার কাজ চলছে এবং চলবেই।’’

এদিন মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, নিউ টাউনে তৈরি হতে চলা এই ‘দুর্গা অঙ্গন’ (Durga Angan) হতে চলেছে বিশ্বের বৃহত্তম। প্রায় ২ লক্ষ বর্গফুট এলাকা জুড়ে গড়ে উঠবে এই বিশাল স্থাপত্য। প্রকল্পের রূপরেখা বর্ণনা করতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এই অঙ্গন এতটাই বিশাল হবে যে, মন্দিরের উঠোনে একসঙ্গে এক লক্ষ মানুষ বসে থাকতে পারবেন। মূল গর্ভগৃহের উচ্চতা হবে ৫৪ মিটার। স্থাপত্যশৈলীতেও থাকছে বিশেষ চমক- ১,০০৮টি স্তম্ভের পাশাপাশি থাকবে ২০ ফুট চওড়া হাঁটার পথ।

পরিবেশ সচেতনতার বিষয়টি মাথায় রেখে দুর্গা অঙ্গনে কৃত্রিম আলো-বাতাসের পরিবর্তে প্রাকৃতিক আলো ও বাতাসের ওপরই বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। মূল মণ্ডপ ছাড়াও থাকবে বিশালাকার সিংহদুয়ার এবং অন্যান্য মণ্ডপ। সবুজে ঘেরা খোলা চত্বর ভক্তদের মনে প্রশান্তি এনে দেবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী। তবে অসুস্থতার কারণে তাঁকে গান গাইতে বারণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা স্নেহভরে বলেন, ‘‘ওঁর শরীর এখনও পুরোপুরি ঠিক হয়নি। গান গাইতে চাইছিল। কিন্তু আমি দিইনি।’’

দুর্গা অঙ্গনের শিলান্যাস মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী আগামী দিনের আরও একটি বড় প্রকল্পের ঘোষণা করেন। তিনি জানান, জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মহাকাল মন্দিরের শিলান্যাস করা হবে।

এদিনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘‘সব ধর্মকে ভালবাসতে হবে। আমি সব ধর্মকে ভালবাসি। গুরুদ্বারে যখন যাই, তখন মাথায় চাদর দিই। রোজায় গেলে বলো কেন? আমি আজ এখানে এসেছি তাই গায়ে চাদর জড়িয়ে নিয়েছি।’’ পরিশেষে ‘সর্ব ধর্ম জিন্দাবাদ’ এবং ‘জয় মা দুর্গা’ ধ্বনি দিয়ে নিজের বক্তব্য শেষ করেন মুখ্যমন্ত্রী।

এদিন মমতা বলেন, “আজকের অনুষ্ঠান বাংলার জন্য এবং বাংলার মানুষদের জন্য উৎসর্গ করা হলো। সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে এখানে আসার জন্য আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ। আজ একটি ঐতিহাসিক দিন; ‘দুর্গা অঙ্গন’-এর টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আমরা আশা করছি খুব শিগগিরই কাজ শুরু হবে… ‘দুর্গা অঙ্গন’-এর জন্য একটি ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। এটি নির্মিত হলে কর্মসংস্থানের সুযোগও বৃদ্ধি পাবে।” তাঁর সংযোজন, ‘‘বাংলা তার সৃষ্টি, কৃষ্টি দিয়ে বাংলা সারা পৃথিবীকে পথ দেখাবে।’’

এছাড়াও এদিন রাজ্যের বিভিন্ন মেট্রো প্রকল্প প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম তখন এই সব প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলাম। এর জন্য দু’লক্ষ কোটি টাকার বেশি রেখে এসেছি।’’ মমতা এ-ও জানান, দুর্গা মন্দিরের ট্রাস্টে এখনও অবধি যা টাকা জমা পড়েছে, তাতে মায়ের মূর্তি তৈরির টাকা উঠে গিয়েছে। আমি বাজে কথা বলি না।’’

সোমবার নিউ টাউনে তিনি দাবি করেন, নিউ টাউনে গড়ে উঠতে চলেছে বিশ্বের বৃহত্তম দুর্গা অঙ্গন। তিনি এ-ও ইঙ্গিত দেন, এই অঙ্গনে কী কী সুবিধা থাকবে এবং কত সংখ্যক ভক্ত একসঙ্গে এখানে আসতে পারবেন। মঞ্চ থেকে তিনি স্পষ্ট বার্তা দেন যে, ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করা যাবে না। তাঁর কথায়, ‘‘এ রাজ্যে সব ধর্ম পালন করা হয়।’’

মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, দুর্গা অঙ্গন শুধু ধর্মীয় স্থান নয়, বরং দীঘার জগন্নাথ ধামের মতোই এখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। তাঁর কথায়, ‘‘মন্দিরে সঙ্গে সঙ্গে এখানে নতুন কর্মসংস্থান গড়ে উঠবে। অনেক দোকান তৈরি হবে। কর্মশ্রম আরও বাড়বে।’’

দীঘার জগন্নাথ ধামের প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, ‘‘দুর্গা অঙ্গনের নকশা তৈরি হয়েছে। জগন্নাথধাম যাঁরা তৈরি করেছেন, তাঁরা এই দুর্গা অঙ্গন করবেন।’’ তিনি আরও জানান, মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি ট্রাস্ট এই প্রকল্পের দায়িত্বে থাকবে।

এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, “মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে তৈরি হওয়া ট্রাস্ট এই মন্দিরের দেখাশোনা করবে। মাত্র ২০ শতাংশ জায়গায় এসি থাকবে, বাকিটায় প্রকৃতির হাওয়া। পুরো চত্বরে ৩০০-র বেশি গাছ, ১০০০ ফুল গাছ লাগানো হবে। গ্রিন বিল্ডিং হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে। মূল মণ্ডপ ছাড়াও থাকবে সিংহ দুয়ার, প্রদক্ষিণ পথ, পবিত্র কুণ্ড। শিব, গনেশ, কার্তিক, সরস্বতীর আলাদা আলাদা মণ্ডপ থাকবে। মূল গর্ভগৃহের উচ্চতা হবে, ৫৪ মিটার। মন্দিরের শাস্ত্রীয় নিয়ম মেনে ১০৮ দেবদেবীর মূর্তি ও ৫৪টি সিংহমূর্তি বসানো হবে। ১০০৮টি স্তম্ভ তৈরি করা হচ্ছে। নকশা করা খিলান দিয়ে পথটি সাজানো হচ্ছে। সবুজে ঘেরা খোলা চত্বর রাখা হয়েছেএবং তার চারপাশ দিয়ে ২০ ফুট চওড়া রাস্তা করা হচ্ছে। ২ লক্ষ বর্গফুট জায়গা জুড়ে তৈরি হবে অঙ্গন। মন্দিরের মাঝে উঠোনে ১ হাজার লোক একসঙ্গে বসে থাকতে পারবেন।“

দুর্গা অঙ্গনের খরচ সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দুর্গা মন্দিরের ট্রাস্টে যা টাকা জমা পড়েছে, তাতে মায়ের মূর্তির দাম উঠে এসেছে। বাকিটা হিডকো থেকে খরচ করতে হবে। আমাদেরও ২৫০-৩০০ কোটি টাকা দিতে হবে কার পার্কিং-সহ বিভিন্ন খাতে। এর আগে দক্ষিণেশ্বরে, কালীঘাটে আমরা টাকা দিয়েছি। গঙ্গাসাগরে কপিলমুনির আশ্রমের উন্নয়ন করা হয়েছে। কেউ টাকা দেয় না। আমরাই করি।“

এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আজকের অনুষ্ঠান সারা বিশ্বের, বিশ্ববাংলার, সর্ব সংস্কৃতির, বাংলার মা মাটি মানুষের, সর্বধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়, সর্ব জগৎ, সংস্কৃতির। খেলাধুলো থেকে চলচিত্র জগতের সকলের। বইমেলা থেকে খেলা বহু বিশিষ্ঠ মানুষ উপস্থিত আছেন আজ। যারা পেছনে বসে আছেন তারা না এলে এই অনুষ্ঠানটাই হত না। আজকের অনুষ্ঠান আমি বাংলার মানুষকে সমর্পন করছি। আগে যে জায়গাটা দেখা হয়েছিল, সেটি ১২ একরের। পরে ভাবলাম যদি করতে হয়, ভাল করে করা দরকার। তাই এই জমিটি নেওয়া হয়েছে। এটি ১৭.২৮ একর। বিশ্বের বৃহত্তম দুর্গা অঙ্গন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। আমাদের টার্গেট, দিনে ১ লক্ষ মানুষ আসতে পারবেন। ইউনেস্কো যে স্বীকৃতি দিয়েছে, যে সম্মান দিয়েছে, তা সংরক্ষিত করার জন্যই এই মন্দির তৈরি করা হচ্ছে। ৩৬৫ দিন দুর্গা ঠাকুর দেখতে পাবেন। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ দেখতে আসবেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে দুর্গা অঙ্গনে।“

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen