বাঙালি নিগ্রহ থেকে সীমান্তে ব্যর্থতা, একাধিক ইস্যুতে বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন অভিষেক

December 30, 2025 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৮:০০: কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে ফের বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। মঙ্গলবার বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি সীমান্ত সমস্যা, অনুপ্রবেশ, মতুয়াদের নাগরিকত্ব এবং ভিন রাজ্যে বাঙালিদের ওপর হেনস্থা নিয়ে কেন্দ্রকে তীব্র আক্রমণ করেন।

সীমান্ত সুরক্ষা ও অনুপ্রবেশ ইস্যুতে কেন্দ্রকে চ্যালেঞ্জ

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট ভাষায় জানান, রাজ্যে অনুপ্রবেশের দায় কোনোভাবেই রাজ্য সরকারের নয়। তিনি বলেন, “সীমান্ত পাহারার দায়িত্ব বিএসএফ-এর, যারা সরাসরি অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে কাজ করে। যদি অনুপ্রবেশ ঘটে থাকে, তবে তা কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতা।” জম্মু ও কাশ্মীরের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সেখানে নির্বাচনের আগে কড়া নিরাপত্তা ও চেকিং সত্ত্বেও সমস্যা মেটেনি, আর বাংলায় বিজেপি নেতারা কেবল অনুপ্রবেশের ধুয়া তুলছেন। তিনি সীমান্ত সুরক্ষা ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ‘শ্বেতপত্র’ প্রকাশের দাবি জানান।

অনন্ত মহারাজ ও বাংলা ভাগ প্রসঙ্গ

বিজেপি সাংসদ তথা গ্রেটার কোচবিহার নেতা অনন্ত মহারাজের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে হাতিয়ার করে অভিষেক বিজেপিকে কোণঠাসা করেন। অনন্ত মহারাজ দাবি করেছিলেন যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে “সীমান্ত বা বর্ডার বলে কিছু থাকবে না”। এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে অভিষেক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। অভিষেকের অভিযোগ, বিজেপি একদিকে বাংলা ভাগের চক্রান্ত করছে, অন্যদিকে তাদের সাংসদরাই দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, অথচ তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

মতুয়াদের নাগরিকত্ব ও বঞ্চনা

মতুয়া সম্প্রদায়ের নাগরিকত্ব প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, বিজেপি দীর্ঘদিন ধরে মতুয়াদের আবেগ নিয়ে খেলছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এত বছরেও কেন মতুয়াদের নিঃশর্ত নাগরিকত্বের দাবি পূরণ হয়নি? তাঁর মতে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের নামে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

বাঙালি বিদ্বেষ ও অসম প্রসঙ্গ

অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার বাংলা সফরের দিনেই অভিষেক ভিন রাজ্যে বাঙালিদের হেনস্থা নিয়ে সরব হন। তিনি দক্ষিণ দিনাজপুরের হশিত সরকার ও গৌতম বর্মনের উদাহরণ দিয়ে বলেন, “শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় কথা বলার অপরাধে এই যুবকদের হেনস্থা করা হয়েছে এবং পুলিশে দেওয়া হয়েছে।” তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বাংলার সংস্কৃতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, বাংলা ও বাঙালির অপমান কোনওভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।

এদিন অভিষেক চাঁচা ছোলা ভাষায় বিজেপি ও অমিত শাহকে আক্রমণ করে বলেন, “তিনি দেশের সবথেকে ব্যর্থতম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যাকে টিভির পর্দায় টাকা নিতে দেখা গিয়েছে, তাকে নিয়ে তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করছেন? উনি গৌহাটি থেকে বাংলায় কাল এসেছেন। অসমের মুখ্যমন্ত্রী ২ মাস আগে বলেছেন, যদি কেউ বাংলায় কথা বলে তাকে ধরে ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাও, জেলে ঢোকাও। আপনি হিমন্ত বিশ্ব শর্মার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন?” বাংলার ইতিহাস জানে না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আজকে তিনি বলেছেন ‘রবীন্দ্রনাথ স্যানাল’। রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের জন্মস্থান জানে না। এদের নেতারা মা দুর্গার বংশ পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলে, ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙে। স্বামী বিবেকানন্দকে বামপন্থী প্রোডাক্ট বলে। তাদের কেউ অমিত শাহ পাশে বসিয়ে বলেন সোনার বাংলা তৈরি করবো। এই হচ্ছে বিজেপির প্রকৃত স্বরূপ।”

আইবি প্রধান ও প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রিতা

গোয়েন্দা প্রধান তপন কুমার ডেকার মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। নির্বাচনের মুখে এই ধরণের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত এবং নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা, বিশেষ করে রোহিঙ্গা বা অনুপ্রবেশকারীদের সঠিক তথ্য প্রকাশ না করা নিয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

পরিশেষে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি নেতাদের উদ্দেশ্যে বার্তা দেন যে, দিল্লি থেকে উড়ে এসে কেবল ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি না দিয়ে, বাংলার মানুষের প্রকৃত সমস্যা যেন তাঁরা শোনেন এবং সমাধান করেন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen