‘ভোট আসলেই দুর্যোধন-দুঃশাসনরা আসে’, বাঁকুড়ার সভা থেকে আধার ও SIR ইস্যুতে BJP-কে ভর্ৎসনা মমতার
Authored By:

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৮:৩৫: বঙ্গে ২৬শের ভোটের আর কয়েক মাস বাকি। তার আগে ফের রাজ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এ নিয়ে তীব্র আক্রমণ তৃণমূল সুপ্রিমোর। একেবারে নাম না করে অমিত শাহকে দুর্যোধন, দুঃশাসন বলে তোপ তাঁর। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ভোট আসলেই দুর্যোধন-দুঃশাসনরা আসে। আজ এআই (AI)-এর মাধ্যমে নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। ভ্যানিশ কুমাররা দিল্লি থেকে বসে নাম গায়েব করে দিচ্ছে।” শুধু তাই নয়, অনুপ্রবেশ ইস্যুতে শাহকে তীব্র আক্রমণ প্রশাসনিক প্রধানের। তাঁর তোপ, ”বাংলাতেই শুধু অনুপ্রবেশ হচ্ছে? কাশ্মীরে হচ্ছে না। তাহলে পহেলগাঁও হামলা কে করল? দিল্লি বিস্ফোরণ কে করল? আপনারা করলেন?”
বাঁকুড়ার জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ”রাজ্যে এসে বলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জমি দেয়নি। জমি না দিলে তারকেশ্বর, বিষ্ণুপুর লাইন কে করে গেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করে গেছে। জমি না দিলে ইসিএলের জমিগুলি কয়লা তোলার জন্য কথা থেকে আসত।” শুধু তাই নয়, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় জমি যে দেওয়া হয়েছে তাও জানান মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ”বনগাঁ, পেট্রোপলে জমি কে দিয়েছে, ঘোজাডাঙ্গা, চ্যাংরাবান্ধায় জমি কে দিয়েছে?” এমনকী অন্ডাল বিমানবন্দর, পানাগড়েও যে জমি দেওয়া হয়েছে তাও এদিন বাঁকুড়ার সভা থেকে শাহকে জবাব দেন তিনি। তাঁর কথায় ”রায়গঞ্জ, চ্যাংড়াবান্ধা, ঘোজাডাঙায় আমরা জমি না দিলেন কী করে কাজ করতেন? অনুপ্রবেশ রুখে দেওয়ার দায়িত্ব তো বিএসএফের। তারা কেন রুখতে পারে না?”
শুধু তাই নয়, অনুপ্রবেশ ইস্যুতে তিনি বলেন, “শুধু বাংলাতেই অনুপ্রবেশ হয়? কাশ্মীরে হয় না?” তার পরেই কাশ্মীরে ভয়াবহ পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার প্রসঙ্গ তোলেন মমতা। বলেন, “পহেলগাঁও কি আপনারা করেছিলেন?” শুধু তাই নয়, দিল্লি বিস্ফোরণের প্রসঙ্গও টেনেও কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে তোপ দেগে মমতা বলেন, ”দিল্লিতে কতদিন আগে একটা ঘটনা ঘটে গেল, অনুপ্রবেশকারী বাংলা ছাড়া কোথাও নেই? তাহলে আপনারা করলেন?” যত দোষ বাংলার? প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর। বলা বাহুল্য, এদিন কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠক থেকে অমিত শাহ অভিযোগ করে বলেন, “বাংলার সীমান্ত দিয়ে যে অনুপ্রবেশ হচ্ছে, তা শুধু বাংলার বিষয় নয়। দেশের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে। বাংলায় মজবুত সরকার আনলে অনুপ্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।” স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এহেন মন্তব্যের কিছুক্ষণের মধ্যেই এই ইস্যুতে জবাব মমতার। অমিত শাহের অভিযোগ খণ্ডন করে মমতা বলেন, “সীমান্তে কাঁটাতার দেওয়ার জন্য রাজ্য জমি দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। আমি জমি না দিলে রেল, কয়লা প্রকল্প হল কী করে? রানীগঞ্জ, পানাগড়, অন্ডাল এয়ারপোর্টের জমি কে দিল? সব মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে।”
তৃণমূল সুপ্রিমো মমতার হুঙ্কার, ”ইউ মাস্ট রিজাইন। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আপনি পদত্যাগ করুন। বলছেন, দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে জিতবেন। এবার তো বলছেন না, ‘আব কি বার/২০০ পার।’ আমি বলতে চাই, এবার আপনাকে দেশ থেকে বার। আবার বাংলার ক্ষমতায় এসে গণতান্ত্রিকভাবে দেশ থেকে বার করে দেব।” এদিন তিনি অমিত শাহের নাম না করে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন “যদি আমি আপনাকে অবজ্ঞা করতাম, এক পা এগোতে দিতাম না। আপনার ভাগ্য ভালো যে এত অত্যাচার সত্ত্বেও আমরা আপনাকে সুযোগ দিচ্ছি। এটা আমাদের দুর্বলতা না, এটা আমাদের ধর্ম, আমাদের সংস্কৃতি।”
SIR ইস্যুতে মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় বললেন, “এসআইআর পর্বে ৫৮ থেকে ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল পুরুলিয়ায় একজন বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। এসআইআর-এর কারণে এত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ওরা বয়স্ক মানুষদের সম্মান করতে জানে না। ওরা বাবা-মায়েদের সম্মান করে না। ৬০-৭০ বছরের বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ডাকছে। পুরুলিয়ায় এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। ওরা বাবা-মাকে সম্মান করে না।”
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, “মতুয়া হোক বা রাজবংশী, হিন্দু হোক বা সংখ্যালঘু-সবাইকে বাদ দিয়ে বলবেন, পুরুলিয়ার ভদ্রলোকের কি দোষ ছিল? বলুন তো। কালকে ওকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। কষ্টে, আত্মবিমানে মানুষটা কালকে মারা গেছেন। আপনাদের অন্তর একটুও যন্ত্রণা হয় নাই? আপনারা একটুও কাঁদেন নাই? যদি আপনার বাবা-মাকেও এরকম ডেকে নিয়ে গিয়ে, একটা ৯৫ বছরের বৃদ্ধাকে তিনতলা উপরে উঠিয়ে জিজ্ঞেস করতো, আজকে তাকে অপমান করতে হবে, যে সে বাংলার নাগরিক নাকি না-আমাকেও বলেছে বাংলাদেশী।”
ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া নিয়ে এদিন আশঙ্কা প্রকাশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি অভিযোগ করেন, আধার কার্ডের নাম করে প্রায় ৫৪ লক্ষ থেকে ১ কোটি ৩৬ লক্ষ মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। তিনি বলেন,আমার নাম মমতা, আমি বাংলায় লিখলাম, কিন্তু ওরা বানানের অজুহাত দেখিয়ে নাম বাদ দিচ্ছে।” দলীয় কর্মীদের (বিএলও) সতর্ক করে তিনি বলেন, “বসে থাকলে চলবে না, ক্যাম্প করে বসে থাকতে হবে। একটিও ন্যায্য ভোটারের নাম যাতে বাদ না যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। ১ কোটি ৪২,১৪২ কোটি আধার কার্ড হয়েছে, তাতে সারাদেশে কত অনুপ্রবেশকারী পেয়েছে? মাত্র ১১,২৭২।”
বাঁকুড়ার বড়জোড়া বিধানসভা এলাকায় এক জনসভায় দাঁড়িয়ে বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দুপুরে আয়োজিত এই সভায় দাঁড়িয়ে একদিকে যেমন তিনি জেলার উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরেন, তেমনই আধার কার্ডের মাধ্যমে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া এবং ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রাখা নিয়ে কেন্দ্রকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন। তিনি বলেন, “বাংলার মানুষ আপনাদের ভ্যানিশ করে দেবে। যে ভোটগুলো বিজেপির লোকেরা বিজেপিকেই দিতো আর আর দেবেন না। এই বিশ্বাসঘাতকদের দেবেন না।”
১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা নিয়েও এদিন সরব হন মমতা। তিনি বলেন, “বাংলা ১০০ দিনের কাজে এক নম্বরে ছিল। কিন্তু কেন্দ্র টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। তাই আমরা ১০০ দিনের কাজকে ‘কর্মশ্রী’ করেছি। এখন থেকে আমরাই কাজ দেব।” তিনি আরও যোগ করেন, “১০০ দিনের কাজ আপনি বন্ধ করে দিয়েছেন। এই প্রোগ্রামটা গান্ধীর নামে ছিল। গান্ধীর নামে যেই প্রোগ্রামটা ছিল, গান্ধীকে আমরা কি বলতাম? জাতির পিতা, জাতির নেতা। গান্ধীর নামে প্রোগ্রামটা বন্ধ করে দিলেন। ক্ষমতায় আছো বলে উদ্ধত হয়েছো। মানুষ এর জবাব দেবে। ভোট চাইতে আসিনি, আপনাদের অধিকার রক্ষা করতে এসেছি।”
বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকের উপর নির্যাতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আছে। “আমরা ওড়িশা ভবন ঘেরাও করতে পারি, কিন্তু আমরা ভদ্রতা দেখাই। কিন্তু ভদ্রতারও একটা সীমা থাকা উচিত। আসামে বাংলায় কথা বললেই অত্যাচার হচ্ছে, উত্তরপ্রদেশেও, রাজস্থানে তো আরও বেশি। আমরা তো কখনো এমন করি না। বাংলায় দেড় কোটি পরিযায়ী শ্রমিক আছে, তারা আমাদের নিজের ঘরের মানুষ। আমরা তাদের ভালোবেসে নিজেদের মতোই ধরে নিই। আর আপনারা বাংলায় কথা বললেই বলছেন, ওরা বাংলাদেশ থেকে এসেছে।”
ভাষণের শেষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ধর্ম মানে বিভেদ নয়, ধর্ম মানে মানবিকতা। বিজেপি দাঙ্গা লাগাতে চায়, কিন্তু আমরা সব ধর্মের মানুষকে নিয়ে চলতে চাই।” বাঁকুড়ার সভা থেকে এদিন বিজেপিকে বাংলা ছাড়া করার ডাক দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।