SIR in Bengal: শুনানির নোটিসে ‘আত্মঘাতী’ পূর্ব মেদিনীপুরের বৃদ্ধ, ভয়ে সংজ্ঞাহীন হুগলির আদিবাসী যুবক

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৮:৩৫: সরকারি নথি ও শুনানির নোটিসকে কেন্দ্র করে রাজ্যজুড়ে আতঙ্কের বাতাবরণ যেন কাটছেই না। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় (Voter list 2002) নাম না থাকায় এসআইআর (SIR)-এর শুনানিতে তলব করা হয়েছিল। আর সেই নোটিস হাতে পাওয়ার পর থেকেই তীব্র মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের (East Midnapore) এক বৃদ্ধ এবং হুগলির (Hooghly) এক যুবক। শেষ পর্যন্ত সেই আতঙ্কের জেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন রামনগরের বৃদ্ধ এবং সংজ্ঞাহীন হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন হুগলির তারকেশ্বরের এক আদিবাসী যুবক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, মৃত বৃদ্ধের নাম বিমল শী (৭৫)। তিনি পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরের সাদি গ্রামের বাসিন্দা। মঙ্গলবার ভোরে বাড়ির চিলেকোঠা থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। পরিবারের দাবি, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় (Voter list) নাম না থাকায় দিন চারেক আগে তাঁর কাছে শুনানির নোটিস এসেছিল। আগামী ২ জানুয়ারি তাঁর শুনানিতে যাওয়ার কথা ছিল।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বিমলবাবু কর্মসূত্রে জীবনের দীর্ঘ সময় কলকাতায় কাটিয়েছেন। অবসরের পর রামনগরে পৈতৃক বাড়িতে ফিরে এসে পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন এবং নতুন করে ভোটার তালিকায় নাম তোলান। নিয়মিত ভোটও দিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু সম্প্রতি এসআইআর ফর্ম পূরণ করার পর দেখা যায়, ২০০২ সালের তালিকায় তাঁর নাম নেই। এই কারণেই তাঁকে শুনানিতে ডাকা হয়েছিল।
মৃতের পুত্র দীপক শী বলেন, “নোটিস আসার পর থেকেই বাবা প্রচণ্ড টেনশনে ছিলেন। বাড়িতে প্রয়োজনীয় নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তিনি আতঙ্কে কাগজ নিয়ে টানাটানি করতেন। সোমবার সন্ধ্যায় নাতির জন্য কেক কিনে আনলেও ভেতরে ভেতরে যে এতটা ভেঙে পড়েছিলেন, আমরা বুঝতে পারিনি। মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৩টে নাগাদ মা বাবাকে বিছানায় না পেয়ে খোঁজ করেন। পরে চিলেকোঠার দরজা ভেঙে বাবার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। বাবা যে এমন চরম পদক্ষেপ করবেন, তা ভাবতেই পারছি না।” রামনগর থানার পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে এবং একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে।
অন্যদিকে, একই আতঙ্কের ছবি ধরা পড়েছে হুগলিতে। এসআইআরের (SIR) শুনানির নোটিস পেয়ে ভয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তারকেশ্বরের বালিগড়ি গ্রামের বাসিন্দা বছর চল্লিশের গণেশ কিস্কু। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তারকেশ্বর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, আগামী ২ জানুয়ারি গণেশকেও শুনানির জন্য ডাকা হয়েছে। পেশায় দিনমজুর ওই আদিবাসী যুবকের স্ত্রী সরস্বতী কিস্কু জানান, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তাঁদের বাড়ির কারও নাম নেই। গণেশের বাবা-মা ২০০২ সালের আগেই মারা গিয়েছেন এবং তিনি দিদির কাছে বড় হয়েছেন। পেটের তাগিদে বিভিন্ন জেলায় ঘুরে কাজ করায় সরকারি নথিপত্রও তেমন গুছিয়ে রাখা নেই। সরস্বতী দেবী বলেন, “নোটিস পাওয়ার পর থেকেই আমার স্বামী ভোটার অধিকার হারানোর ভয়ে আতঙ্কিত ছিলেন। মঙ্গলবার সকালে আচমকাই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে যান।”
একই দিনে দুই জেলায় নথি সংক্রান্ত আতঙ্কে এই দুই ঘটনা সাধারণ মানুষের মনে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। প্রশাসনিক স্তরে অভয় দেওয়া হলেও গ্রামের সাধারণ মানুষের মন থেকে যে নথির জুজু এখনও কাটেনি, এই ঘটনাগুলি তারই প্রমাণ দিচ্ছে।