ব্লাড ক্যানসার রোগী থেকে অন্তঃসত্ত্বা- শুনানির লাইনে চরম দুর্ভোগ, প্রশ্নের মুখে কমিশনের ভূমিকা
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২২:০০: প্রতিশ্রুতিই সার! এসআইআর শুনানিতে রাজ্যে চলছে নজিরবিহীন হয়রানি। অক্সিজেনের নল লাগানো বৃদ্ধ, অন্তঃসত্ত্বা মহিলা, ক্যানসার আক্রান্ত রোগী, এমনকি শতবর্ষী প্রবীণকেও হাজির হতে হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল অসুস্থ ও প্রবীণদের বাড়িতে গিয়ে শুনানি হবে। চতুর্থ দিনেও সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তব হয়নি। জেলায় জেলায় শুনানিকেন্দ্রে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষ কার্যত অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা ‘এসআইআর’ প্রক্রিয়ায় বিশেষ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কর্মীরা বাড়িতে গিয়ে শুনানি করবেন-এমনটাই ছিল নিয়ম। কিন্তু রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উঠে আসা ছবি বলছে অন্য কথা। বীরভূমের বোলপুরে অক্সিজেন সাপোর্ট নিয়ে শুনানিকেন্দ্রে আসতে বাধ্য হয়েছেন ৬৫ বছরের সজল পাল। প্রাক্তন এই মার্চেন্ট নেভি আধিকারিক ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম না থাকার কারণে নোটিস পান। প্রশাসনের ‘মানবিকতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘‘এমন একটি দেশে বাস করছি, যেখানে দেশের হয়ে কাজ করার পরেও নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হয়।”
দুর্গাপুরের চিত্রটিও তথৈবচ। সেখানে ৭৬ বছরের কলি ঘোষ দস্তিদার, যিনি সদ্য পেসমেকার বসিয়ে হাসপাতাল থেকে ফিরেছেন, তাঁকেও হাজির হতে হয়েছে শুনানিকেন্দ্রে। তাঁর মেয়ে নিশা ঘোষ দস্তিদারের আক্ষেপ, বাড়িতে গিয়ে শুনানি হলে এই চরম সমস্যার মুখে পড়তে হত না। অন্যদিকে, মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে ৮০ থেকে ৯০ বছর বয়সী চার প্রবীণা ভোটারকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে শুনানিকেন্দ্রে আসতে দেখা যায়। জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান প্রসেনজিৎ ঘোষ এই ঘটনাকে ‘এসআইআরের নামে প্রহসন’ বলে কটাক্ষ করেছেন।
হয়রানির ছবি ধরা পড়েছে উত্তরবঙ্গতেও। কোচবিহারে হাড়কাঁপানো ঠান্ডার মধ্যে মহকুমাশাসকের দপ্তরে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় ব্লাড ক্যানসার আক্রান্ত ৭৫ বছরের লেখা চক্রবর্তীকে। অসুস্থ মাকে নিয়ে অসহায় অবস্থায় বসে থাকতে দেখা যায় ছেলে পঙ্কজ চক্রবর্তীকে। একই ছবি নকশালবাড়িতেও। সেখানে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা সৃজনা রাইকে প্রায় ৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে। শুনানিকেন্দ্রে বসার জায়গা না থাকায় ক্ষোভ উগরে দেন তাঁর স্বামী।
উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতেও ৮৫ বছরের শয্যাশায়ী বৃদ্ধ সুনীল বারুইকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে কেন্দ্রে আনতে হয়, কারণ পরিবারের দাবি, বাড়িতে শুনানির আবেদন নাকচ হয়েছিল। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে ১০২ বছর বয়সী গান্ধারী জানাকে নোটিস পাঠানো হয়েছে শুধুমাত্র ‘ডাটা নট ফাউন্ড’ দেখানোর যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে।
সব মিলিয়ে, কমিশনের ‘বাড়ি যাব’ ঘোষণা যে কেবলই কাগুজে প্রতিশ্রুতি হয়ে দাঁড়িয়েছে, চতুর্থ দিনের শুনানির শেষে রাজ্যের নানা প্রান্তের এই খণ্ডচিত্রগুলিই তার প্রমাণ। অসুস্থ, প্রবীণ নাগরিকদের প্রতি প্রশাসনের সংবেদনশীলতা নিয়ে তাই বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে।