একজনের নামে ৩৬৫ জনের ম্যাপিং! ভোটার তালিকা নিয়ে DEO-দের বৈঠকে বিস্ফোরক জ্ঞানেশ ভারতী
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২২:৫০: রাজ্যে আসন্ন নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা সংশোধনের (SIR) কাজে চূড়ান্ত গাফিলতি ও একাধিক ভুলের অভিযোগে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন উপ-নির্বাচন কমিশনার (Deputy Election Commissioner) জ্ঞানেশ ভারতী। মঙ্গলবার রাজ্যের সমস্ত জেলার জেলা নির্বাচন আধিকারিকদের (DEO) সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেছিলেন তিনি। সেখানেই কাজের অগ্রগতি এবং গুণমান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন কমিশনের এই শীর্ষ কর্তা। বৈঠকে তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি এস. বি. জোশি এবং রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল।
কমিশন সূত্রে খবর, এদিনের বৈঠকে এসআইআর (SIR) বা ভোটার তালিকা (Voter list) সংশোধনের কাজ নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ উগরে দেন জ্ঞানেশ ভারতী। তাঁর পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে যে, বিপুল কর্মযজ্ঞের পরেও তালিকায় ভুলের পাহাড় জমে রয়েছে। কমিশনের নজরে এসেছে এক আজব তথ্য- রাজ্যের কোথাও কোথাও একজন ব্যক্তির নামের সঙ্গে ৩৬৫ জনের ম্যাপিং করা হয়েছে! আবার কোথাও এক মহিলার নামে ৬০-৬৫ জনের ম্যাপিং হয়েছে। এই তথ্য সামনে আসার পরেই জেলা আধিকারিকদের ভর্ৎসনা করেন উপ-নির্বাচন কমিশনার। তিনি স্পষ্ট প্রশ্ন তোলেন, “এত কিছুর পরেও যদি এত ভুল থেকে যায়, তবে সময়ের মধ্যে এসআইআরের কাজ শেষ হবে কী করে? আর কাজ শেষ না হলে সময়মতো নির্বাচন হবে কীভাবে?”
সোমবারই রাজ্যের রোল অবজার্ভার সি মুরুগান একটি গুরুতর বিষয় কমিশনের নজরে এনেছিলেন। তিনি জানান, ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য নির্দিষ্ট ১১টি নথির বাইরেও অন্য নথি জমা নেওয়া হচ্ছে। কারা এই নিয়মবহির্ভূত নথি জমা দিচ্ছেন এবং কারা তা গ্রহণ করছেন, তা চিহ্নিত করতে মাইক্রো অবজার্ভারদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। বিষয়টি রাজ্যের সিইও দফতর এবং স্পেশ্যাল রোল অবজার্ভার সুব্রত গুপ্তকেও জানানো হয়েছিল।
মঙ্গলবারের বৈঠকে এই ইস্যুতেও জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন জ্ঞানেশ ভারতী। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, নির্দিষ্ট ১১টি নথির বাইরে অন্য কোনো নথি জমা দেওয়া বরদাস্ত করা হবে না। নিয়ম লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিতও মিলেছে।
বৈঠকে জানানো হয়, বর্তমানে রাজ্যে ভোটার তালিকায় অসঙ্গতি রয়েছে এমন ভোটারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ কোটি ১৮ লক্ষ। তবে উপ-নির্বাচন কমিশনার জানান, ছোটখাটো ভুলগুলি বিএলও-রা (BLO) দায়িত্ব নিয়ে সংশোধন করবেন, যার ফলে এই সংখ্যাটা অনেকটাই কমবে। কিন্তু তারপরেও যে সংখ্যাটি অবশিষ্ট থাকবে, সেই ভোটারদের ‘হিয়ারিং’ বা শুনানির জন্য ডাকা হবে। এই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে মঙ্গলবার থেকেই বিএলও অ্যাপে (BLO App) বিশেষ অপশন চালু করা হয়েছে।
অন্যদিকে, জেলা নির্বাচন আধিকারিকরা (DEO) একটি ব্যবহারিক সমস্যার কথা তুলে ধরেন। বর্তমানে ভেরিফিকেশন লগ-ইন শুধুমাত্র ডিইও-দের হাতে থাকায়, তাঁদের একার পক্ষে এত বিপুল সংখ্যক নথি ডাউনলোড করে যাচাই করা কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যার কথা শুনে জ্ঞানেশ ভারতী আশ্বস্ত করেছেন যে, বিষয়টি নিয়ে কমিশন ভাবনা-চিন্তা করছে এবং শীঘ্রই এর কোনো সমাধান সূত্র বের করা হবে।