সেনার শৌর্যকে সম্মান জানিয়ে দেবী আরাধনা টালা বারোয়ারিতে
দুর্গা, দশপ্রহরণধারিণী, শান্তিদায়িনী – এমনই আরও কত রূপ তাঁর। দশ অস্ত্রে অসুরকে পরাভূত করার সময় রুদ্রমূর্তি, আবার অশুভ নাশের পরমুহূর্তেই তিনি শান্তির প্রতিভূ। দেবী দুর্গার এই শান্তিরূপকে সামনে রেখেই এ বছর উত্তর কলকাতার বিখ্যাত ক্লাব টালা বারোয়ারি সাজাচ্ছে নিজেদের মণ্ডপ। শতবর্ষে তাদের থিম – শান্তিরূপেণ সংস্থিতা। এবারের পুজো তারা উৎসর্গ করছে দেশের সেনাবাহিনীকে, যাঁরা সীমান্তে লাগাতার অশান্তি রুখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন শান্তির পথে, জোরাল করছেন সুরক্ষা বলয়।
উত্তর কলকাতার অতি জনপ্রিয় পুজো কমিটি টালা বারোয়ারি দেখতে দেখতে শতবর্ষে পা রাখল এবার। সাফল্যের সিঁড়ি খুব কম ভাঙা নয়। কিন্তু এই আনন্দ খানিক ম্লান হয়েছে অবশ্যই করোনা পরিস্থিতিতে। তবু আশাবাদী ক্লাবের সদস্যরা। সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ভট্টাচার্য বলছেন, ”১০০ বছরে পা রাখা তো ভীষণই গর্বের ব্যাপার। করোনা কালেও যতটা সম্ভব ভাল করে পুজো করা, ততটাই করা হচ্ছে। শতবর্ষ না হলে হয়ত আমরা শামিয়ানা খাটিয়ে পুজো সেরে ফেলতাম। কিন্তু এটা তো আর ফিরে আসবে না। ফলে উদযাপন একটু করতেই হচ্ছে।”
উদযাপন হচ্ছে, কিন্তু সবরকম স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখেই। আর আড়ম্বরের চেয়েও এবছর এখানকার পুজোর মূল লক্ষ্য, ‘শান্তিরূপেণ সংস্থিতা’ থিমটিকে বাস্তবায়িত করে দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরা। শিল্পী সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে যা রূপ পাচ্ছে ধীরে ধীরে।
করোনা পরিস্থিতিই যেখানে মূল সমস্যা বলে মনে করছে বহু পুজো কমিটি, টালা বারোয়ারি কিন্তু তার চেয়েও বড় সংকটের কথা ভেবেছে। সে সংকট চিরকালীন – সীমান্তের অশান্তি। সেই অশান্তি দমন করে, শত্রুকে সংহার করে দেশের অভ্যন্তরে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে প্রহরীরা দিবারাত্র অস্ত্র হাতে প্রস্তুত, তাঁদের লড়াইকে মর্যাদা দিতেই এবছর টালা বারোয়ারির থিম – ‘শান্তিরূপেণ সংস্থিতা’। একেবারে সাবেকি প্রতিমায় মণ্ডপসজ্জায় ফুটে উঠবে এই ভাবনাই। থিমশিল্পী সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজে সংগীতে সঙ্গত দিয়েছেন শিল্পী সৈকত দেব।
মহামারীর সময় অন্যদের মতো পুজোর বাজেট কমে গিয়েছে টালা বারোয়ারিরও। শতবর্ষেও তারা এক তৃতীয়াংশ বাজেটে পুজো করেই খুশি। লকডাউনের পর এবছর কাজ শুরু হতেও খানিক দেরি হয়েছে। তবু কাজ এগিয়ে গিয়েছে অনেকটাই। চতুর্থী থেকে টালা বারোয়ারির মণ্ডপ খুলে যাচ্ছে। শান্তির বার্তা দিয়ে দর্শনার্থীদের স্বাগত জানাচ্ছে উত্তর কলকাতার এই বিখ্যাত পুজো কমিটি।