মমতাকে পাগড়ি উপহার দিতে চান বলবিন্দরের স্ত্রী
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সম্মানের পাগড়ি উপহার দিতে চান বলবিন্দর সিংহের স্ত্রী করমজিৎ কৌর। বিজেপি-র নবান্ন অভিযানের পর ‘পাগড়ি’ বিতর্ক নিয়ে সরগরম ছিল রাজ্য রাজনীতি। সেই বিতর্কে ইন্ধন জুগিয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। মাঠে নেমেছিল বিজেপি-ও। শিখ সম্প্রদায়ের ভাবাবেগে আঘাত করা হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে বিষয়টিতে রাজনৈতিক রং লাগানোর চেষ্টা করছিল তারা। কিন্তু শনিবার পরিস্থিতি আমূল বদলে গিয়েছে। অভিমান ভুলে এখন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে সম্মান এবং ভালবাসার পাগড়ি উপহার দিতে চাইছে বলবিন্দরের পরিবার।
বলবিন্দর অবশ্য এখনও পুলিশ হেফাজতে। তাঁকে আবার সোমবার আদালতে হাজির করানো হবে।
ঘটনাচক্রে, এদিন বলবিন্দরের স্ত্রী-পুত্রের কাছে পৌঁছেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতার ‘স্নেহের উপহার’। গোটা পরিস্থিতিতে তাঁদের পরিবারের পাশে থাকার বার্তাও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর দূত। এর পরেই ক্ষোভ-বিক্ষোভ দূরে সরিয়ে দিয়েছেন করমজিৎ। এদিন তিনি জানিয়েছেন, মমতার সঙ্গে দেখা করে তাঁকে পাগড়ি উপহার দিতে চান। করমজিৎ বলেছেন, “দুর্গাপুজোর সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের উপহার দিয়েছেন। আমি সম্মানিত। আমার জন্য সালওয়ার স্যুট, আমাদের ছেলের জন্য কুর্তা-পাজামা এবং একটি শাল উপহার দিয়েছেন তিনি। আমিও ওঁর সঙ্গে দেখা করে ওঁকে একটি পাগড়ি উপহার দিতে চাই।”
বিজেপি-র ‘নবান্ন চলো’ অভিযানের দিন বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের বচসা বেধেছিল। সেই মিছিলে ছিলেন বলবিন্দর। তাঁর সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি বাধে। টানাহ্যাঁচড়ায় তাঁর পাগড়িটি মাথা থেকে খুলে পড়ে। পুলিশ পরে জানায়, বলবিন্দরের কাছ থেকে একটি নাইনএমএম পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। সেটির লাইসেন্স জম্মু-কাশ্মীরের রজৌরির। পুলিশ এমনও বলেছিল যে, ওই লাইসেন্স নিয়ে বলবিন্দর দেশের অন্য রাজ্যে যেতে পারেন না। বিজেপি-র তরফে বলা হয়েছিল, বলবিন্দর তাদের এক যুবনেতার নিরাপত্তারক্ষী। কিন্তু তার প্রেক্ষিতে পুলিশ পাল্টা জানিয়েছিল, ওই যুবনেতা সশস্ত্র বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী রাখতে পারেন না। পারলেও সেই নিরাপত্তারক্ষীকে নিয়ে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে, এমন জায়গায় প্রকাশ্যে যেতে পারেন না।
কিন্তু আইনের যুক্তি-তর্ক পেরিয়ে বিষয়টি দ্রুত শিখ ভাবাবেগের আওতায় ঢুকে পড়ে। সংবাদ মাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বলবিন্দরের পাগড়ি খুলে পড়ার ছবি ভাইরাল হয়ে যায়। শুরু হয় দেশ জুড়ে বিতর্ক। শিখ সম্প্রদায়ের একাংশ বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। ঘটনাটি টুইট করেন ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার হরভজন সিংহও। তাঁদের বক্তব্য, বলবিন্দরের মাথা থেকে পাগড়ি খুলে নিয়েছে পুলিশ। যা শিখ সম্প্রদায়ের কাছে গর্হিত অপরাধ এবং অসম্মান। ‘দোষী’ পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়ে মমতাকে টুইট করে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংহ। একই সুর শোনা গিয়েছিল শিরোমণি অকালি দল (এসএডি)-এর প্রধান সুখবীর সিংহ বাদলের গলাতেও। শিখ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা কলকাতায় এসে বিষয়টির হেস্তনেস্ত দাবি করেন। তাঁরা জানান, বিষয়টির বিহিত না হলে তাঁরা শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ করবেন।
পক্ষান্তরে, রাজ্য প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, পুলিশ বলবিন্দরের পাগড়ি ইচ্ছা করে খুলে নেয়নি। ধস্তাধস্তির সময় পাগড়ি খুলে গিয়েছে। যা একেবারেই ঘটনাচক্র। তারা যে কোনও বিশেষ সম্প্রদায়ের ভাবাবেগে আঘাত করতে চায় না, তা-ও টুইট করে জানায় রাজ্যপুলিশ। রাজ্যপুলিশের প্রাক্তন ডিজি ভূপিন্দর সিংহ লেখেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে তাঁর মাথা থেকেও একাধিকবার পাগড়ি খুলে পড়েছে। ফলে এমন ঘটনা নতুন নয়।
তার পরেই এদিন ময়দানে নামেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। এবং অতীতের বহু ঘটনার মতোই দেখা যায়, বলবিন্দরের পরিবারের অবস্থান ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছে। বস্তুত, মুখ্যমন্ত্রীর ওই পদক্ষেপের পর এদিন শিখ সম্প্রদায়ের প্রস্তাবিত বিক্ষোভ সমাবেশও বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের তরফে যে টুইট করা হয়েছে, তাতেও স্পষ্ট য়ে, তাঁরা বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর আচরণে সন্তুষ্ট।। ‘দিল্লি শিখ গুরুদ্বার ম্যানেজমেন্ট কমিটি’-র সভাপতি তথা জাতীয় মুখপাত্র মনজিন্দর সিংহ সিরসা টুইট করেন, ‘রাজ্যপুলিশের ডিজি-র তরফে প্রাক্তন ফৌজি বলবিন্দর সিংহের স্ত্রী করমজিৎ কৌরকে দেওয়া সুবিচারের আশ্বাসের জন্য মমতাজিকে বিশেষ ধন্যবাদ। মমতাজি করমজিৎ কৌরকে একটি স্যুটও পাঠিয়েছেন। যা বাংলার পুজোর সময় সবচেয়ে সুন্দর উপহার’।
এর পর বলবিন্দরের পরিবারের আশা, সোমবার আদালতে হাজির করানো হলে ওই প্রাক্তন ফৌজির জামিন মঞ্জুর হয়ে যাবে।