দেবী বরণের প্রস্তুতি চোরবাগান সর্বজনীনের
“ক্ষুদ্র আমি তুচ্ছ নই/ জানি আমি ভাবী বনস্পতি”
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যর এই কবিতা চিরকালীন, যার মূল ভাব বর্তমানের বীজ আগামীর বনস্পতি। আগামীর দিকে তাকিয়ে আজকের সময় কাটিয়ে দেওয়া, ভবিষ্যতের আশায় বর্তমানের হতাশা থেকে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ানো। শারদ আনন্দের আবহে সেই ‘আগামী’তেই চোখ রেখেছে উত্তর কলকাতার বিখ্যাত পুজো চোরবাগান সর্বজনীন। থিমের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে মণ্ডপ সজ্জার উপকরণে তারা বেছে নিয়েছে কঞ্চি, যা কিনা আগামীতে শক্তপোক্ত ভিত তৈরি করে দেবে। চোরবাগান সর্বজনীনের এই থিম ভাবনাকে রূপদান করছেন শিল্পী বিমল সামন্ত।
কোভিড পরিস্থিতিতে এবছর ব্যতিক্রমী দুর্গোৎসব। দীর্ঘ লকডাউনে অর্থনৈতিক পরিকাঠামো ভেঙেছে, কমেছে বাজেট। এই অবস্থায় উপকরণের জন্য বাড়তি কোনও মূল্য খরচ করতে চাননি চোরবাগান সর্বজনীন ক্লাবের সদস্যরা। থিমশিল্পী বিমল সামন্তও তাই বেছে নিয়েছেন কঞ্চির মতো সামগ্রী।
তাঁর কথায়, ”এখন তো আমরা সকলেই আগামীর দিকে তাকিয়ে আছি। কবে সব আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তবে আজ তার বীজ না বুনলে, আগামীতে বড় কিছু হবে কীভাবে? তাই আজ থেকে আমরা বীজ বোনা শুরু করলাম, যাতে আগামিদিনে শক্তপোক্ত ভিতের উপর নিজেদের দাঁড় করাতে পারি। মণ্ডপ তৈরিতে আমি বেছে নিয়েছি কঞ্চি। এই কঞ্চিই প্রথম বাঁশ গাছ থেকে আকাশের দিকে উঠে যায়। সূর্যের আলো, হাওয়া থেকে নিজেদের রসদ নিয়ে বেড়ে ওঠে। সে অর্থেও থিম আগামী সামঞ্জস্যপূর্ণ।”
চোরবাগান সর্বজনীনের সদস্যরা প্রথম উপলব্ধি করেছিলেন, মানুষের হাতে অর্থ থাকার প্রয়োজনীয়তা কতটা। সেই জায়গা থেকে নির্মাণকর্মীদের পাশে দাঁড়ানোরও একটা ভাবনাচিন্তা চলছিল। পুজোকে সামনে রেখে সেই ভাবনাও বাস্তবায়িত করে ফেললেন তাঁরা। চোরবাগান সর্বজনীনের পুজো উদ্যোক্তা জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় সে কথাই জানালেন।
তাঁর কথায়, ”আমরা বুঝেছিলাম, এই করোনা আবহে যতই দরিদ্র মানুষজনদের চাল, ডাল বিনামূল্যে দেওয়া হোক, হাতে অর্থ না থাকলে খুবই মুশকিল। কীভাবে তাঁদের হাতে অর্থ তুলে দেওয়া যায়, সেই ভাবনা ছিল। পুজোর প্রস্তুতি শুরু হতেই আমরা নির্মাণশিল্পীদের কাজ দিয়ে তাঁদের নিয়মিত রোজগারের একটা ব্যবস্থা করতে পারলাম। আর এই কাজ করে যে আনন্দ পেয়েছি, তা বোধহয় কোথাও পাওয়া যেত না। এই সময়ে অনেকেই অনেকভাবে সমাজের কাজে যুক্ত হয়েছে। আর আমাদের সমাজসেবা বলতে এইই।”
চোরবাগান সর্বজনীনের প্রতিমা গড়ছেন বিখ্যাত মৃৎশিল্পী নবকুমার পাল। কেমন হচ্ছে প্রতিমা? তারও ঝলক পাওয়া গেল। ধাঁচ অনেকটাই সাবেকি। তবে ‘আগামী’ থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রূপ পাচ্ছেন দেবী দুর্গা। অবয়ব তৈরির কাজ শেষ, চলছে রঙের কাজ।
কঞ্চিনির্মিত মণ্ডপে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বেশ খোলামেলা জায়গা রাখা হয়েছে। মণ্ডপের সামনে স্যানিটাইজার, মাস্ক – সবই থাকছে। দর্শনার্থীদের কাছে চোরবাগান সর্বজনীনের সদস্যদের একটাই আবেদন, ”সরকারি নির্দেশিকা যেমন পুজো উদ্যোক্তাদের জন্য আছে, তেমনই তো আপনাদের জন্যও আছে। আমরাও মানছি, আপনারাও সেই বিধি মেনে প্রতিমা দর্শন করুন। নিজেরা আনন্দ উপভোগ করুন, অন্যদেরও উপভোগের সুযোগ করে দিন।”