২০০ পেরিয়েও আধুনিক হয়ে চলেছে নিয়োগী বাড়ির পুজো
২০০ বছর পেরিয়েছে জলপাইগুড়ি শহরের পূর্ব উকিলপাড়ার নিয়োগী বাড়ির পুজো। তৎকালীন পূর্ববঙ্গের ঢাকার পাটগ্রাম থেকে কলকাতার ভবানীপুর হয়ে জলপাড়িগুড়ি নিয়োগী বাড়ির ঠাকুর দালানে অধিষ্ঠান পান দেবী।
এই পুজোর সঙ্গে জুড়ে রয়েছে দেশভাগের গল্পও। পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই আজ কর্মসূত্রে বাইরে। তবুও পুজোর চারটে দিন এই বাড়ির দরদালান হয়ে ওঠে পারিবারিক মিলনক্ষেত্র। বনেদি বাড়ির এই পুজোতে যোগ দেয় শহরের বহু মানুষ। কিন্তু করোনা আবহে এবার বাড়ির পুজোতে যোগ দিতে পারবেন না অনেকেই। ঐতিহ্যবাহী এই পুজোকে পৌঁছে দিতে এবার তাই ভরসা সোশ্যাল মিডিয়া।
নিয়োগী বাড়ির পুজোর এবার ২১২তম বছর। তৎকালীন পূর্ববঙ্গের ঢাকায় ছিল পরিবারের আদি নিবাস। দেশভাগের কয়েক বছর আগেই সেখান থেকে মাকে সরিয়ে কলকাতার ভবানীপুরে নিয়ে আসে নিয়োগী পরিবার।
পারিবারিক কারণে ১৯৬৭ সাল থেকে সেই পুজো স্থানান্তরিত হয় জলপাইগুড়িতে। সেই সময় এই পুজোর জাঁকজমক ছিল চোখে পড়ার মতো। পুজোর চারটে দিন বাড়ির দরদালানে পাত পাড়তেন অনেকেই। দিনগুলি কাটত কোলাহলে। বসত থিয়েটারের আসর। সাহিত্যের আসরও। বের হতো দেওয়াল পত্রিকা। যদিও বর্তমানে পুজো উপলক্ষে তারা লিটল ম্যাগাজিন বের করে।
ধীরে ধীরে বারোয়ারি পুজোর ভিড়ে এই পুজোর জৌলুস অনেকটাই ক্ষীণ হয়ে যায়। পরিবারের শিকড় ছড়িয়ে রয়েছে দেশের নানা প্রান্তে। পুজোর সময় দূরদূরান্ত থেকে বাড়ির মেয়ে-বৌ চলে আসেন। কিন্তু করোনা আবহে এবার কার্যত ফাঁকা থাকবে বাড়ি।
পরিবারের বর্তমান সদস্য নবনীতা নিয়োগী, রুবি নিয়োগীরা বলেন, করোনার কারণে বাইরে থেকে অনেকেই আসতে পারবে না। স্বাস্থ্যবিধির কথা মাথায় রেখে আমরা প্রতিমার উচ্চতা কমিয়েছি। প্রথারও বদল হয়েছে। প্রতিবার প্রতিপদ থেকে আমরা মায়ের পুজো শুরু করি। কিন্তু এবার মল মাস থাকায় পঞ্চমী থেকে পুজো শুরু হবে। এবার মায়ের পুজো পরিবারের সদস্য ও দশনার্থীদের সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখানো হবে।
এই পুজোয় বেশকিছু পারিবারিক রীতি রয়েছে। প্রথা মেনে পঞ্চমীতে এখানে মনসার পুজো হয়। গণেশ নয়, কার্তিকের পাশে অধিষ্ঠান করে কলা বৌ। গণেশের পাশে থাকে সরস্বতী, কার্তিকের পাশে অধিষ্ঠান করেন মা লক্ষ্মী। পরিবারের প্রবীণ এক সদস্য বলেন, বাংলাদেশের প্রাচীন ভিটে গিলেছে পদ্মা। স্মৃতি বলতে সম্বল এই পুজো। কিন্তু করোনার কোপে এবার তাও শিথিল। বারোয়ারি পুজোর ভিড়ে ঢিমেতালে হলেও শহরের এই বনেদি বাড়ির পুজো টিকে রয়েছে। সেই স্মৃতিতে ডুব দিয়ে নস্টালজিক হয়ে পড়েন পরিবারের প্রবীণ সদস্য থেকে স্থানীয়রাও।