রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

করোনাকালেও রীতি মেনেই সম্পন্ন হল সন্ধিপুজো

October 24, 2020 | 2 min read

আশ্বিনের শুক্লাষ্টমীর বিশেষ মাহেন্দ্রক্ষণে দেবী দুর্গার সন্ধিপুজো হয়। ১০৮ লাল পদ্ম উত্‍সর্গ করা হয় দুর্গার পায়ে। জ্বলে ওঠে ১০৮ প্রদীপ। অষ্টমী আর নবমী তিথির শুভ সন্ধিক্ষণে এই পুজো হয়ে থাকে। মন্ত্রের অণুরণনে মুখরিত হয়ে ওঠে রাতের বাতাস। পটকা, দামামা, শঙ্খধ্বনি, ঢাকের বাদ্যি, উলুধ্বনি, ঘন্টা সব মিলিয়ে শব্দের স্রোত যেন ভাসিয়ে নিয়ে যায় চারপাশ। মন্ত্রোচ্চারণ আর ১০৮ প্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে দুর্গার ঘামতেলযুক্ত মুখমন্ডল। অষ্টমীতিথির বিদায় আর নবমীর আগমনে এই সন্ধিপূজা চলে।

অনেক বাড়িতেই সন্ধিপুজোর বিশেষ নিয়ম আছে। টাকির ঐতিহ্যশালী ঘোষ পরিবারের পুজোতে যেমন প্রথা মেনে বন্দুক দেগে সন্ধি পুজো হত। আর ছিল চিনির ভোগ।করোনা আবহেও এখন আর বন্দুক দাগা হয় না বটে কিন্তু অষ্টমীতে চিনির ভোগ আজও দেখার জিনিস। প্রথা অনুযায়ী, প্রথা অনুসারে বর্ধমান শহরের ভাতছালায় দেবী সর্বমঙ্গলার মন্দিরে রাজবাড়ির কামান দেগে সন্ধি পূজা সম্পন্ন হয়৷

১৯ সি, নীলমণি মিত্র স্ট্রিট। প্রায় ২১০ বছর আগে নীলমণি মিত্রের নাতি রাধাকৃষ্ণ মিত্রের হাত ধরে এখানে শুরু হয় দুর্গাপূজা। এখানে মেয়ে রূপেই পূজিত হন দুর্গা। তিনচালা প্রতিমা, পিছনে মঠচৌড়ি। পদ্ম নয়, ১০৮টি অপরাজিতা ফুলে সন্ধিপুজো হয় মিত্র বাড়িতে। জোড়াসাঁকোর নরসিংহ দাঁ বাড়ির দুর্গাপুজো আনুমানিক ১৫০ বছরের পুরোনো। প্রচলিত কথা অনুযায়ী দেবী দুর্গা স্বয়ং আসেন এই বাড়িতে। কন‍্যারূপে পূজিত দেবীর সঙ্গে এখানে থাকেন জোড়া কার্তিক। সন্ধিপুজোয় কামান দাগার রেওয়াজ আছে এখনও।

বেহালা ট্রামডিপোর অদূরে কিছুটা এগোলেই ব্রাহ্মসমাজ রোডে মুখোপাধ্যায় পরিবারের পুজোতে আবার সন্ধিপুজো হয় না। ঢাকার বিক্রমপুরের চট্টোপাধ্যায় বাড়ির সন্ধিপুজো হয় মহা সমারোহে। তারপর থেকে নবমী অবধি দেবীকে নিবেদন করা হয় শুধুমাত্র ঢাকার চিনিগুঁড়া চালের মাখা পোলাও ভোগ। এই পুজো এখন কলকাতায় পরিচালক অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে হয়। 

সন্ধিপুজোয় অপরাজিতা ফুলের ব্যবহার সর্বজনবিদিত। কিন্তু হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের পালবাড়ির সন্ধিপুজো এ ব্যাপারে একেবারেই ব্যতিক্রম। পাল বাড়িতে সন্ধিপুজো হয় মা দুর্গাকে কুড়চি ফুলের মালা পরিয়ে। বলিদানের সময় দেবীর গলায় পরিয়ে দেওয়া হয় রঙ্গন ফুলের মালাও। চিরাচরিত এই রীতি চলে আসছে আজও। 

লাহাবাড়িতে স্বামী সোহাগী মা দুর্গা, বসেন শিবের কোলে…পূজিত হয় দেবীর হরগৌরী রূপ।  এই পরিবারে দুর্গাপুজোর অন্যতম আকর্ষণ হল অষ্টমীর সন্ধিপুজো। সন্ধিপুজো যতক্ষণ চলে ততক্ষণ বাড়ির মহিলারা দু-হাতে ও মাথায় মাটির সরার মধ্যে ধুনো জ্বালিয়ে বসে থাকেন। জলপাইগুড়ির বৈকুণ্ঠপুর রাজপরিবারের পুজোতে আবার বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ। 

বৈচিত্রে ভরা বাংলার দুর্গাপুজো। আর বিশেষ বৈচিত্র সন্ধিপুজোর রীতিতে। বনেদি বাড়ির পুজোতে করোনাকালেও ছেদ পড়েনি এবছর।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Sondhi pujo, #covid-19, #Durga Puja 2020

আরো দেখুন