করোনাকালে ভাটা পড়েছে ভান্ডানি পুজোতেও
অগ্নিভ নিয়োগী
মহিষাসুরমর্দিনীর আরাধনার শেষে উত্তরবঙ্গে হয় আর এক দুর্গার পুজো। একাদশীর দিন পূজিতা হন ভান্ডানি। রাজবংশীদের বিশ্বাসে তিনিই বনদুর্গা। ভান্ডানি কিন্তু সিংহবাহিনী নন, তাঁর বাহন বাঘ। দুর্গাপুজোর মতেই চার দিন চলে ব্যাঘ্রবাহিনীর পুজো।
এই পুজোকে ঘিরে নানা গল্প প্রচলিত আছে। কথিত আছে, দুর্গা কৈলাসে চলে গিয়েও আবার মর্তে ফিরে আসেন। হিমালয়ের পাদদেশে একদল রাখালকে বাঘের ভয় দেখান। রাখালরা ভয় পেয়ে তাঁর পুজো করে। লোককথা অনুযায়ী ‘ভন্ডামি’ করে দুর্গা পুজো নেন বলে এই পুজোকে ভান্ডানি পুজো বলা হয়। ভান্ডানির প্রতিমা বিসর্জন হয় না।
অন্য এক লোককথায় কৈলাসে যাওয়ার সময় এলাকার মানুষের দুঃখ, দুর্দশা দেখে শস্য ও ধনভান্ডার্ ভরিয়ে দেন বলে দুর্গাকে ‘ভান্ডারি’ নামে পুজোর প্রচলন হয়। পরে ভান্ডারই হয়ে যান ভান্ডানি। দেবীর নামে পায়রা উড়িয়ে দেওয়ার রীতি আছে উত্তরবঙ্গে। পাঁঠা বলিও দেওয়া হয়। রাজবংশী পুরোহিত বা দেউসি দুধ, দই, চিনি আর বাতাসা নৈবেদ্যে পুজো করেন। বেলা বাড়লে সব ক’টি মণ্ডপে ভিড় উপচে পড়ে।
রাজবংশী গবেষক জ্যোতির্ময় রায় বলেন, ‘ইতিহাস বলে কোচবিহারের রাজা নরনারায়ণের কামরূপ বিজয়ের প্রায় পাঁচশো বছর আগে ভান্ডানি দেবীর পুজোর প্রবর্তন করেন রাজবংশীরা।তখনকার দিনে দুর্গাপুজোর আয়োজন করতে হলে রাজার আদেশ যেমন লাগত, ঠিক তেমনই ব্যয়বহুলও ছিল। তাই দুর্গাপুজোর বিকল্প হিসেবে ভান্ডানি পুজোর প্রবর্তন করেছিলেন প্রজারা ওই আচার আজও রাজবংশী সমাজে অমলিন।’
কোথাও একাদশী থেকে তিন দিন, আবার কোথাও লক্ষ্মী পূর্ণিমার দিন। এ ভাবে দেবী ভান্ডানির কাছে শস্যরক্ষা ও সমাজের মঙ্গল কামনা করবেন রাজবংশী চাষি পরিবারের লোকজন। দেবী ভান্ডানি দ্বিভূজা ব্যাঘ্রবাহিনী। রক্তিম বর্ণ। তিনি পশ্চিম মুখে বসেন। সময়ের সঙ্গে নানা এলাকায় দেবীর গড়নে পরিবর্তন এসেছে।
এই ভাবেই কোথাও বাহন কখনও বাঘ হয়েছে। কখনও সিংহ। কোথাও দেবী দ্বিভূজা, কোথাও চতুর্ভুজা ভাবনাও পাল্টেছে। শস্য রক্ষার দেবীকে দুর্গা অথবা বনদুর্গা রূপে কল্পনার চল হয়েছে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা শিক্ষক গবেষক দীপক রায় বলেন, “ভান্ডানিকে দেবী দুর্গা কল্পনা করা হলেও তিনি আদতে শস্যের দেবী। শব্দটির উত্স ভাণ্ডার শব্দ থেকে। যেমন, শস্য ভাণ্ডার। তাই ওই দেবী যে শস্য ভাণ্ডার রক্ষার দেবী সেই বিষয়ে বিতর্ক থাকার কথা নয়।