ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাশ থেকে সরে গিয়েছেন অনেক রিপাবলিকান নেতাই!
আমেরিকার নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসছে, ততই রাজনীতির মাঠের অস্থিরতা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আরও বেকায়দায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর পাশ থেকে সরে গিয়েছেন অনেক রিপাবলিকান নেতাই। নির্বাচনের পর ট্রাম্পহীন ওয়াশিংটনের রাজনীতি মাথায় রেখে নিজেদের আগেই প্রস্তুত করতে শুরু করেছেন তাঁরা।
এদিকে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী জো বিডেন অনেক জনমত সমীক্ষাতেই বেশ এগিয়ে আছেন বলে দেখানো হচ্ছে। যদিও জাতীয় জনমত সমীক্ষায় এমন এগিয়ে থাকা নিয়ে আত্মসন্তুষ্টি না হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রচার শিবির থেকে। কারণ, এই আত্মসন্তুষ্টি ছিল হিলারি ক্লিনটনের পরাজয়ের কারণ। রক্ষণশীল সমীক্ষাতেও জো বিডেন প্রায় ৯ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। উদারনৈতিক সংবাদমাধ্যমের সমীক্ষায় তাঁর এই এগিয়ে থাকা ১০ শতাংশের বেশি বলেও দেখানো হচ্ছে। এসব সংবাদ রিপাবলিকান ঘরানার জন্য মোটেই স্বস্তির নয়। অ্যারিজোনা, উইসকনসিন, মিশিগান ও পেনসিলভানিয়ার মতো অঙ্গরাজ্যেও ট্রাম্প পিছিয়ে পড়েছেন। ২০১৬ সালে এই রাজ্যগুলিতে জয় পেয়েই নির্বাচনে জিতেছিলেন ট্রাম্প। জাতীয় জনমত সমীক্ষা আর ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যের পিছিয়ে থাকা কোনও দৈব ঘটনায় পাল্টে যাবে, এমন আশা দেখছেন না রিপাবলিকান সমর্থকরাও। যদিও ফ্লোরিডার জনমত সমীক্ষার ফলাফল ওঠানামা করছে। কোনও কোনও সময় এই অঙ্গরাজ্যে প্রার্থীদের মধ্যে এক শতাংশের পার্থক্য দেখা যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইন নিউজ পোর্টাল এক্সিওস এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে ট্রাম্পের প্রচার ব্যবস্থাপক স্টিফেন মিলারের ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় হতাশার সুর খুঁজে পেয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সেনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম প্রকাশ্যে হোয়াইট হাউস ডেমোক্র্যাটিক দলের দখলে যাওয়ার আশঙ্কা নিয়ে নিজের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। সেনেটে রিপাবলিকান দলের নেতা মিচ ম্যাককনেল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নাগরিক সহায়তা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
নেব্রাস্কা থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান সেনেটর বেন স্যাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করে নিজের সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। বেন স্যাসের অভিযোগ, ট্রাম্প শ্বেতাঙ্গ উগ্রবাদীদের উসকে দিয়েছেন, করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁর এসব কথাবার্তার অডিও ফাঁস হয়ে গিয়েছে। ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান গভর্নর চার্লি বেকার ১৫ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ব্যর্থতার সমালোচনা করেছেন। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, নভেম্বরে তিনি ট্রাম্পকে ভোট দিতে পারবেন না। পরদিন ১৬ অক্টোবর মেরিল্যান্ডের গভর্নর ল্যারি হোগানও একই কথা বলেছেন। রিপাবলিকান সেনেটর মার্থা ম্যাকুস্যালি, সেনেটর জন করনিন, সুজান কলিন্স বেশ আগে থেকেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রচার থেকে নিজেদের সরিয়ে রেখেছেন।
সার্বিকভাবে এমন পরিস্থিতির কারণে অনেকেই আগাম বলে দিচ্ছেন যে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচিত হওয়ার আশা শেষ। কিন্তু এই সরলীকরণে বিপত্তিও কম নয়। কারণ, গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেও হিলারি শিবির বেশ উদ্দীপ্ত ছিল। নির্বাচনে জয় পাওয়াটা তাদের কাছে সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়নি। হয়নি কারণ, ট্রাম্পের সমর্থকরা ভোটকেন্দ্রে গিয়েছেন, আর ডেমোক্র্যাটিক দলের সমর্থকরা সে হারে ভোটকেন্দ্রে যাননি। আর ছিল ‘অক্টোবর সারপ্রাইজ’। ২০১৬ সালের নির্বাচনের ঠিক ১১ দিন আগে, অর্থাৎ অক্টোবর মাসের শেষ দিকে তৎকালীন এফবিআই কর্তা জেমস কোমি জানান, হিলারি ক্লিনটনের ই-মেল কেলেঙ্কারির তদন্ত তিনি আবার শুরু করছেন। এই খবর হিলারি নির্বাচনী প্রচারের খবরকে ই-মেল কেলেঙ্কারির খবর দিয়ে চাপা দিয়ে দেয়। সঙ্গে জনমনে তৈরি করে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। এটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের জন্য বড় সুযোগ হয়ে এসেছিল। এবারও ট্রাম্প তেমন কোনও চমক দিতে পারেন কি না, তা এখন দেখার বিষয়। ট্রাম্প বারবারই বলছেন, খেলা এখনও শেষ হয়নি। তাঁর সমর্থকরাও আশায় বুক বেঁধে আছেন। শেষ মুহূর্তে কোনও চমক দিয়ে তিনি সব ওলট-পালট করে দেবেন—কট্টর ট্রাম্প সমর্থকেরা এখন সেদিকেই তাকিয়ে আছেন।
রিপাবলিকানদের একটু চুপসে যাওয়া অবস্থানের মধ্যেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের গোঁড়া সমর্থকরা মনে করেন, ট্রাম্প জয়ী হবেন। কীভাবে? এ নিয়ে কোনও অঙ্ক তাদের কাছে নেই। তাঁরা ট্রাম্প জিতবেন বলে ‘বিশ্বাস’ করেন। আর প্রচারে গিয়ে ট্রাম্প বলছেন, আমি নির্বাচনে হারলে কী হবে আপনারা ভাবতে পারেন? সারা জীবন আমি কী করব? আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ প্রার্থীর কাছে হারার বিষয়টা বাকি জীবন আমি কীভাবে বয়ে বেড়াব? জানি না, হয়তো আমাকে দেশই ছেড়ে যেতে হবে।