বেসরকারি স্কুলের ২০% ফি কমাতে হবে, হাইকোর্টের সুরে সর্বোচ্চ আদালত
করোনা-আবহে লকডাউনে এপ্রিল থেকে স্কুল চালু না-হওয়া পর্যন্ত ন্যূনতম ২০ শতাংশ বেতন মকুব করতে হবে স্কুলগুলোকে। যে পরিষেবাগুলি স্কুল চালু না থাকায় দেওয়া হয়নি, সেই খাতে কোনও টাকা নেওয়া যাবে না। স্কুলের শিক্ষক-কর্মীদের বেতনও বাড়বে না। বেসরকারি স্কুলের ফি নিয়ে মামলায় এমনই রায় দিয়েছিল হাইকোর্ট। বেসরকারি স্কুলগুলির বেতন কমানো নিয়ে মামলায় সুপ্রিম কোর্টে ক্যাভিয়েট ফাইল করেছিলেন হাইকোর্টের প্রথম মামলাকারীরা। হাইকোর্টের বেতন কমানোর নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল বেসরকারি স্কুলগুলোর একাংশ। তাদের বক্তব্য, সংখ্যালঘু স্কুল হওয়ার জন্য, তাদের নিজস্ব সংবিধান রয়েছে। তাই হাইকোর্ট এ ব্যাপারে তাদের নির্দেশ দিতে পারে না। কিন্তু এই বিষয়ে এদিন দেশের সর্বোচ্চ আদালত অভিভাবকদের পক্ষেই রায় দিল। সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য স্কুল কর্তপক্ষের দু’টি আপত্তিই খারিজ করে দিয়েছে বুধবার। তবে, হাইকোর্ট ওই ২০ শতাংশ ছাড় ছাড়াও তুলনায় অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল অভিভাবকদের আরও কিছু সুবিধা দেওয়া ও স্কুলের অ্যাকাউন্টস পরীক্ষা করার জন্য যে কমিটি গঠন করার কথা বলেছিল, আপাতত সেই কমিটি গঠন স্থগিত রাখার কথা জানিয়েছে শীর্ষ আদালত।
অবশ্য হাইকোর্টের নির্দেশে যে সব স্কুলের ফি মাসিক ৮০০ টাকার মধ্যে বা তার কম, তাদের ক্ষেত্রে এই সব ছাড়ের নির্দেশ কার্যকরী হবে না। আবার স্কুলগুলি এ বছরের ক্ষতি আগামী দু’টি অর্থবর্ষে যাতে পুষিয়ে নিতে পারে, সে সুযোগও রয়েছে রায়ে। মূলত ১৪৫টি বেসরকারি স্কুল নিয়ে মামলা হয়েছিল। হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি মৌসুমি ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ রায় ঘোষণা করতে গিয়ে জানিয়েছিলেন, বেতনে ২০ শতাংশ ছাড় দিতে হবে। ২০২০-‘২১ অর্থবর্ষেও ফি বাড়ানো যাবে না। সেই সঙ্গে আদালত জানিয়েছে, বর্তমান অর্থবর্ষে কোনও শিক্ষক বা কর্মচারীর বেতন বৃদ্ধিও করা যাবে না। পরিকাঠামোগত নির্মাণকাজও খুব জরুরি না-হলে আপাতত এড়াতে হবে। তবে এরই মধ্যে কোনও স্কুল যদি শিক্ষক বা কর্মীদের বেতন বাড়িয়ে থাকে, সেই কারণে ফি কিন্তু বাড়ানো যাব না।
হাইকোর্ট জানিয়েছিল, যে অভিভাবকরা ইতিমধ্যেই ফি দিয়েছেন, তা আর ফেরত দেওয়া হবে না। বাকি টাকা এই অর্থবর্ষের মধ্যে বাকি মাসগুলোতে ভাগ করে দিতে হবে। অভিভাবকদের ক্ষেত্রে হাইকোর্টের আরও পরামর্শ, সামর্থ্য থাকলে ফি’তে ছাড় না নেওয়ার কথাও কেউ জানাতে পারেন স্কুলকে। বাকি ফি কিস্তিতে জমা করার জন্য অভিভাবকরা ১৫ নভেম্বরের মধ্যে আবেদন জানাতে পারবেন। স্কুলগুলি তাদের সিদ্ধান্ত ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে জানাবে।
এদিন মামলাকারী স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আদালতে বলেন, হাইকোর্ট এই নির্দেশের মাধ্যমে সংবিধানের ২২৬ ধারার উলঙ্ঘন করেছে। হাইকোর্ট সুপার রেগুলেটরি বডি হিসেবে কাজ করতে পারেনা। স্কুলের অ্যাকাউন্টস পরীক্ষা করার জন্যে কমিটি গঠনও অনৈতিক। যদিও সেই যুক্তি সর্বোচ্চ আদালতে টেকেনি। হাইকোর্টের নির্দেশই বহাল রেখেছে শীর্ষ আদালত।
যদিও অভিভাবকদের একাংশের আবার আশঙ্কা, ২০ শতাংশ ফি ছাড় এবং স্কুল বন্ধ থাকায় কিছু চার্জ রদে যে টাকা এখন নিতে পারছে না স্কুল, সবই পরে সুদে-আসলে উসুলের চেষ্টা করবে স্কুলগুলি। তবে হাইকোর্ট জানিয়েছে, যদি কোনও অভিভাবক ফি কমানোর জন্য আবেদন করেন, সে জন্য পড়ুয়ার শিক্ষার কোনও রকম ক্ষতি যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে স্কুলগুলিকে। বোর্ডের পরীক্ষায় যথাযথ ভাবে নাম পাঠাতে হবে। বোর্ডের পরীক্ষার ফি নির্দিষ্ট সময়েই দিতে হবে।