চন্দননগরের ঐতিহ্যের জগদ্ধাত্রী পুজোর অবশেষে মিলল অনুমতি
চন্দননগরের খ্যাতনামা জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল। বুধবারই চন্দননগর কমিশনারেটের পুলিস ও কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটি পুজো নিয়ে বৈঠক করেছে। জানা গিয়েছে, প্রশাসনিকভাবে সরকারি যাবতীয় বিধি মেনে পুজো করতে বলেছেন পুলিস কর্তারা। অন্যদিকে, পুজো কমিটির পক্ষেও বিধি মানা হবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় পুজো কমিটির দাবি, তাঁরা পুজো করতে প্রস্তুত। সরকারি সমস্ত বিধি মেনেও পুজো করা যেমন সম্ভব তেমনি ভিড় না বাড়িয়েও দর্শকদের পুজো দেখানো সম্ভব। এদিনের বৈঠকেই স্থির হয়েছে, পুজো নিয়ে ধাপে ধাপে মৃৎশিল্পী, ডেকরেটরস, আলোকশিল্পীদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। আজ, বৃহস্পতিবারই মৃৎশিল্পীদের বৈঠকে ডাকা হয়েছে।
তবে জগদ্ধাত্রী পুজোর অন্যতম বড় আকর্ষণ দশমীর শোভাযাত্রা। ভুবনখ্যাত সেই শোভাযাত্রার জন্য দেশ তো বটেই বিদেশ থেকেও বহু মানুষ চন্দননগরে আসেন। রাতভর সেই শোভাযাত্রা, চন্দননগরের বিখ্যাত আলোর শো-কেস করার একটি মাধ্যমও বটে। সেই শোভাযাত্রা হওয়া নিয়ে আশঙ্কার মেঘ তৈরি হয়েছে। বহু মানুষের সমাগম রুখতে শোভাযাত্রা আদৌ করা হবে কি না তা নিয়ে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। কেন্দ্রীয় পুজো কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, লক্ষ্মীপুজোর পরে চন্দননগরের পুলিস কমিশনার ও পুজো কমিটির বৈঠকে এনিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তবে প্রাথমিকভাবে যে ইঙ্গিত মিলেছে তাতে করোনা আবহে এবার শোভাযাত্রা বন্ধ থাকার সম্ভাবনাই বেশি। চন্দননগর কেন্দ্রীয় পুজো কমিটির যুগ্ম সম্পাদক শুভজিৎ সাউ বলেন, জগদ্ধাত্রী পুজো হচ্ছে এবং বড় আকারের পুজোই করা হবে। বুধবার এনিয়ে পুলিস কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সেখানে আমরা হাইকোর্ট-সহ সরকারি যাবতীয় বিধি মেনে পুজো করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছি। পুজোর আয়োজনের দ্বিতীয় পর্বের কাজ আমরা বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু করছি। নির্দিষ্ট দূরত্বে ব্যারিকেড করে পুজো দেখানো হবে। খোলা প্যান্ডেল করেও জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন করা সম্ভব।
চন্দননগর ও ভদ্রশ্বর মিলিয়ে কেন্দ্রীয় পুজো কমিটির স্বীকৃত ১৭১টি জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। চন্দননগর ও সংলগ্ন এলাকার পুজো হলেও এই পুজোকে কেন্দ্র করে বৃহত্তর একটি বাঙালি আবেগ জড়িয়ে আছে। যার ব্যাপ্তি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও প্রসারিত। করোনা আবহে এই প্রবল জনপ্রিয় পুজোর আয়োজন নিয়ে গত কয়েক মাসে বারবার কেন্দ্রীয় পুজো কমিটি বৈঠক করেছে। সেখানে কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পুজো যদি হয় তবে বড় আকারের প্রতিমাতেই হবে। আকারে বড় প্রতিমাই এই পুজোর ঐতিহ্য। ফলে তার সঙ্গে কর্মকর্তারা আপস করতে চাননি। সেটা সম্ভব না-হলে কেবলমাত্র ঘটপুজোর মাধ্যমেই পুজো করা হবে বলেও উদ্যোক্তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। অবশেষে যাবতীয় জট কাটিয়ে ঐতিহ্য বজায় রেখেই পুজোর সবুজসঙ্কেত প্রশাসন দিয়ে দিল। আর তার মধ্যে দিয়েই জগদ্ধাত্রী পুজোর ঢাকে কাঠিও পড়ে গেল।