রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের ইঙ্গিত দিলেন ধনখড়?

তাঁর অভিযোগ, ‘‌মুখ্যসচিব, নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের দিয়ে রাজনৈতিক কাজ করানো হচ্ছে। আমলারা এখানে রাজনৈতিক দলের অনুগত।’‌

October 29, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

১ নভেম্বর থেকে মাসখানেকের জন্য দার্জিলিংয়ে থাকছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তার আগে বৃহস্পতিবার দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী–সহ রাজ্য প্রশাসনের নিন্দায় সরব হলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‌আমি সমালোচনায় বিশ্বাস করি না। আমি পুনর্গঠনে বিশ্বাস করি।’‌

যদিও এদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কী ব্যাপারে তাঁর আলোচনা হল তা নিয়ে কিছু বলতে চাননি রাজ্যপাল। তবে তিনি বারবার সংবাদমাধ্যমের কাছে এদিন একটাই আবেদন জানান। তাঁর মতে, ‘‌পশ্চিমবঙ্গে কী হচ্ছে তা জানা উচিত দেশের সংবাদমাধ্যমের।’‌ সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁর প্রশ্ন, ‘‌পশ্চিমবঙ্গের মতো দেশে আর কোনও রাজ্য আছে কিনা যেখানে আইপিএস, আইএএস–রা রাজনৈতিক ভৃত্য হিসেবে কাজ করেন।’‌ তাঁর অভিযোগ, ‘‌মুখ্যসচিব, নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের দিয়ে রাজনৈতিক কাজ করানো হচ্ছে। আমলারা এখানে রাজনৈতিক দলের অনুগত।’‌

বিশেষ সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রিপোর্ট দিয়েছেন রাজ্যপাল। এবং বৈঠক শেষে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি অভিযোগ করেন, ‘‌রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসা, অনাচার চলছে। অথচ ঘুমিয়ে রয়েছে সর্বোচ্চ প্রশাসন।’‌ তাঁর কথায়, ‘‌পশ্চিমবঙ্গে যা হচ্ছে তা সংবিধানে উল্লেখ করা গণতন্ত্রের বিপরীত। রাজ্যে সংবিধান ভেঙে পড়ছে বলে জানিয়ে আমি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছিলাম। জানিয়েছিলাম যে এই পরিস্থিতি আমাদের একত্রিত হয়ে সামলানো উচিত। কিন্তু উত্তর পাইনি। ডিজিপি–র কাছে ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে জবাবদিহি চেয়েছিলাম। কিন্তু ওদিন মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে চিঠি পেলাম। ডিজিপি–র হয়ে কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী!‌ এর আগেও এই ঘটনা ঘটেছিল। তখন কলকাতার পুলিশ কমিশনার ছিলেন রাজীব কুমার। আর এবার কী হল?‌ মৃত্যু হল মণীশ শুক্লার।’‌

রাজ্যে পুলিশ–প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যপাল অভিযোগ করে জানান, ‘‌আল কায়দা পশ্চিমবঙ্গে নিজেদের ঘাঁটি গাড়ছে। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একের পর এক বেআইনি বোমা তৈরির কারখানার হদিশ মিলেছে। যে কোনও ঘটনায় বোমাবাজি হচ্ছে এই রাজ্যে। অ্যাম্বুল্যান্সে করে বোমা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’‌ তাঁর প্রশ্ন, ‘‌রাজনৈতিক আদেশ পালন করতেই কি রয়েছে পুলিশ?‌ শুধু পুলিশের মাধ্যমে রাজ্যে শাসন চালাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।’‌

পশ্চিমবঙ্গে এই ‘‌নৈরাজ্য’‌ পরিস্থিতিতে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন কীভাবে সুষ্ঠুভাবে হবে তা নিয়ে এদিন আশঙ্কা প্রকাশ করেন রাজ্যপাল। তাঁর কথায়, ‘‌এখানে সুষ্ঠুভাবে কীভাবে নির্বাচন হবে তা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। ‌আমি পশ্চিমবঙ্গে স্বাধীন ও ভয়মুক্ত নির্বাচন হোক তা নিশ্চিত করতে চাই। মানুষ অন্তত এটুকু আশা করে গণতন্ত্রের থেকে।’‌ তিনি বলেন,‌ ‘‌আমি কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন ভূমিকায় প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে যেভাবে সংবিধান অমান্য করে প্রশাসন চলছে তা দেখে আমি অবাক।’‌

দার্জিলিংয়ে একমাস গিয়ে থাকার ব্যাপারে এদিন এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলে খানিক বিরক্ত হন রাজ্যপাল। তিনি বলেন, ‘‌আমি কি কোনও দোষ করছি দার্জিলিংয়ে গিয়ে?‌ এর আগেও অন্যান্য রাজ্যপাল গিয়েছিলেন। আমি নিজেই তিনবার গিয়েছি সেখানে। উত্তরবঙ্গ পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। আমি যে কটা দিন সেখানে থাকব, সেখানকার মানুষের সমস্যার কথা, সংস্কৃতির কথা জানার চেষ্টা করব।’‌

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen